পরিচিত কেউই খুনি, মনে করছে পুলিশ
রেণুকাদেবী
রিচিত কারও হাতেই রেণুকা সরকার খুন হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা পুলিশের। বেশ কিছু বিষয় খতিয়ে দেখে পুলিশের সন্দেহ, শুক্রবার রাতে নিজের শান্তিনিকেতনের বাড়ির দোতলার দরজা পরিচিত কারও ডাকেই খুলে দিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। তার পর আততায়ী তাঁকে শ্বাসরোধ করে মারে।
ওই ঘটনায় রবিবার পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার উজ্জ্বল তপাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। শনিবার দুপুরে পুলিশ কুকুর বৃদ্ধার ঘর থেকে বেরিয়ে ওই কেয়ারটেকারের ঘর পর্যন্ত গিয়েছিল। বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষীকেশ মিনা এ দিন বলেন, “প্রাথমিক ভাবে আমাদের ধারণা, ওই বৃদ্ধাকে তাঁরই ঘনিষ্ঠ কেউ খুন করে থাকতে পারে। তদন্তে তেমন কিছু অগ্রগতি হয়নি। তবে বাড়ির কেয়ারটেকারের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেয়ারটেকার ও তাঁর স্ত্রীকে দফায় দফায় জেরা চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” কেয়ারটেকারের জবানবন্দির ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা রুজু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ঘর থেকে একটি বালিশ উদ্ধার করা হয়েছে, যেটিতে রক্তের দাগ ছিল। সেই বালিশই ৭৮ বছরের রেণুকাদেবীর মুখে চাপা দিয়ে আততায়ী তাঁকে খুন করেছিল বলে পুলিশ মনে করছে। ওই রক্তের দাগ নিহত বৃদ্ধারই কি না, তা জানতে বালিশটি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। এর পাশাপাশি পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আরও কিছু সূত্র পেয়েছে। মিলেছে একটি আধপোড়া বিড়ি এবং চুল বাঁধার একটি কাঁটা। শনিবারই সিআইডি-র ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞেরা ঘটনাস্থল থেকে হাত-পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেন। ঘরের মধ্যে রক্তমাখা আঙুলের ছাপ মিলেছে বলেও পুলিশ সূত্রের খবর।
শান্তিনিকেতনের বাগানপাড়ায় রেণুকাদেবীর বাড়ি।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আমরা ঘটনাটিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।” পুলিশ সুপার বলেন, “ওই বিড়ির টুকরো পরীক্ষা করতে পাঠানো হবে। কেয়ারটেকারের লালার নমুনা ও হাতের ছাপও নেওয়া হবে।” কেয়ারটেকার অবশ্য দাবি করেছেন, “আমি বিড়ি খেলেও মাসিমার (রেণুকাদেবী) সামনে খেতাম না।”
শনিবার সকালে শান্তিনিকেতনের বাগানপাড়া এলাকায় নিজের বাড়ির দোতলার ঘরের বিছানা থেকে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা রেণুকাদেবীর নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কলকাতার ভবানীপুরের টাউনসেন্ড রোডের বাসিন্দা এই বৃদ্ধা শুক্রবার শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। শনিবার সকালে খুন হওয়ার খবর তাঁর পরিবার ও পুলিশকে প্রথমে জানান কেয়ারটেকার উজ্জ্বল তপাদার। শনিবারই পুলিশ আটক করে বোলপুরের পাড়ুই থানার মহুলা গ্রামের বাসিন্দা উজ্জ্বলবাবুকে। তিনি আট বছর ধরে রেণুকাদেবীদের বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “শনিবার সকালে পুলিশ গিয়ে দেখে বৃদ্ধার দোতলার ঘরের দরজা ভিতর থেকে ভেজানো। এর থেকে আমাদের ধারণা, পরিচিত কেউ সে রাতে দরজায় টোকা দিয়েছিল। বৃদ্ধাও সন্দেহ না করে দরজা খুলে দিয়েছিলেন। আততায়ী বৃদ্ধার সঙ্গে তার পরিচিতির সুযোগ নিয়েছে।”
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই কেয়ারটেকারের সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে রেণুকাদেবী এবং তাঁর স্বামী প্রতাপ সরকারের মতপার্থক্য হয়েছিল। দোতলার ওই ঘর থেকেই মাস দশেক আগে দম্পতির কয়েক হাজার টাকা চুরি যায়। সেই ঘটনায় কেয়ারটেকারের পরিবারের সঙ্গে ওই দম্পতির মনোমালিন্য হয়। পরিবার সূত্রের খবর, গত বছর সেপ্টেম্বরে শান্তিনিকেতনে এসে এই দম্পতি হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলেই তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে সন্দেহ করেছিল তাঁদের পরিবার। তখন রেণুকাদেবীকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। ঘটনার কয়েক দিন পরেই কলকাতায় প্রতাপবাবু মারা যান।
এ প্রসঙ্গে কেয়ারটেকারের স্ত্রী শমিতাদেবীর দাবি, “রেণুকাদেবী নিজেই রান্না করতেন। আমি সব্জি কেটে দিতাম আর মশলা বেটে দিতাম। আমাদের সঙ্গে ওঁদের খারাপ সম্পর্ক ছিল না। তবে টাকা চুরি যাওয়ার পরে প্রতাপবাবু জিজ্ঞাসাবাদ করায় আমরা বাড়ি ছাড়তে চেয়েছিলাম। উনিই আমাদের আটকেছিলেন।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস দু’য়েক আগে রেণুকাদেবী ও তাঁর ছেলে প্রবাল সরকার এখানে এসেছিলেন। তখন কেয়ারটেকার বাড়ির একটি অংশে লজ তৈরি করার এবং তাঁকে ওই লজের ম্যানেজার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উজ্জ্বলবাবু নিজেও রবিবার বলেন, “দাদাকে বলেছিলাম, বাড়ির ফাঁকা অংশে লজ তৈরি করুন। অনেক টাকা ভাড়া পাওয়া যাবে।” এই বিষয়গুলি পুলিশ খতিয়ে দেখছে।এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ আরও জেনেছে, এই বাড়িতে রেণুকাদেবীর কয়েক জন ভাড়াটের ঘরে অনেক রাত পর্যন্ত বাইরের লোকজনের আসা-যাওয়া ছিল। এই নিয়ে প্রতিবেশীরা আপত্তিও তুলেছিলেন। কিন্তু বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধ হয়নি। পুলিশ ওই বাড়ির পাঁচ ভাড়াটেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
মাত্র চার মাস আগেই শান্তিনিকেতনের এই বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়ে বাবা মারা যান। এ বার সেই বাড়িতেই মাকে হারিয়ে সরকার দম্পতির ছেলেমেয়ে প্রবাল ও অদিতির দাবি, পুলিশ তদন্ত করে দোষীকে গ্রেফতার করুক। মায়ের খুনি সাজা পাক।

বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.