বিনোদন দলতন্ত্রের বৃত্তের বাইরে
নতুন ধারার সন্ধান ছাত্র আন্দোলনে

প্রেসিডেন্সি থেকে রায়গঞ্জ, মাজদিয়া থেকে রামপুরহাট একের পর এক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খবরের শিরোনামে। কোথাও দলতন্ত্রের নিগড় থেকে বেরনোর জন্য প্রয়াস, কোথাও দলীয় রাজনীতিরই চোখরাঙানি।
কিন্তু ছাত্র সংসদের দখল নিয়ে ছাত্র রাজনীতি যতটা উত্তাল, শিক্ষার মান-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুণমান নিয়ে কি ততটা মাথাব্যথা দেখা যায় তাদের মধ্যে? ছাত্র আন্দোলনের নানা ঘটনা যত বার খবরে উঠে এসেছে, তার মধ্যে সাকুল্যে ক’টি প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠনের হাল নিয়ে কথা বলেছে? প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ নেতা অরুণাভ ঘোষ মেনে নিলেন। বললেন, “এ রাজ্যে ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিক চৌহদ্দি থেকে বেরিয়ে ছাত্র বা শিক্ষাস্বার্থের বিষয়গুলিকে সে ভাবে ধরতে পারেনি। কারণ আমাদের রাজ্যে ছাত্র সংগঠনগুলি বড় রাজনৈতিক দলের ল্যাজ।”
অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এবং পঠনপাঠন নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অভাব-অভিযোগ নেই, তা নয়। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্র বিবস্বান বসু যেমন বলছেন, “এখানে বেশির ভাগই নোটভিত্তিক পড়াশোনায় অভ্যস্ত। আলোচনাসভা, গবেষণাপত্রভিত্তিক পড়াশোনার সুযোগ খুব একটা হয় না। প্রচুর পদ খালি থাকায় শিক্ষকের অভাবও প্রকট।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বছরই কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করেছেন রাজদীপ গুহ। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাগার এবং গ্রন্থাগারের আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। ক্যাম্পাসিংয়ের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব আছে।”
‘জোশ’ ধারাবাহিকের একটি দৃশ্য
এই অভাব-অভিযোগের কথা যখন আন্দোলনে উঠেও আসে, সেটা আসে কোনও না কোনও দলীয় ছাত্র সংগঠনের হাত ধরেই। অরুণাভবাবু বলেন, “আমরা যখন প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলাম, তখন অনেকেই ডাক্তারিতে সুযোগ পেয়ে কলেজ ছেড়ে চলে যেতেন। সেই আসনগুলি ভর্তি করার দাবিতে আমরা এক বার আন্দোলন করেছিলাম। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় তখন মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় ঘটনাটি
হল, প্রেসিডেন্সির স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ১৯৭৪ সালে ছাত্র পরিষদের আন্দোলন। বাকি সব আন্দোলনই রাজনৈতিক।”
রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত সানন্দা টিভির ধারাবাহিক ‘জোশ’ কিন্তু একটি ব্যতিক্রমী ছাত্র আন্দোলনের গল্প বলতে চায়। নামী কলেজের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য সেখানে ছাত্রছাত্রীরা মিলে গড়ে তোলে এক ‘দলমুক্ত’ আন্দোলন। কতটা ব্যতিক্রমী তা? প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুরে দলীয় রং-মুক্ত ছাত্র সংগঠন তৈরির নজির রয়েছে বটে। কিন্তু তাদেরও একই পথে লড়তে হয়েছে ছাত্র সংসদ দখলের লড়াইয়ে। ‘অরাজনৈতিক’ মঞ্চের মধ্যেও অনুপ্রবেশ ঘটে গিয়েছে নানা মত ও পথের। চলতি মাসের গোড়াতেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যবিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ‘অরাজনৈতিক’ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। প্রশিক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো চেয়ে জোড়াসাঁকো ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়াই ছিল তাঁদের দাবি। কিন্তু দলীয় ছাত্র সংগঠন তার বিরোধিতায় নামে।
এটাই কি তবে অনিবার্য? এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “লাইব্রেরিতে বই বাড়বে কিনা বা কলেজে শিক্ষক বাড়বে কিনা, তা নির্ভর করে শিক্ষাখাতে ব্যয় বরাদ্দের উপরে। যাঁরা বলেন, রাজনীতি বাদ দিয়ে আন্দোলন সম্ভব, তাঁরা ভ্রান্ত কথা বলেন।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার মত হল, “আমরা মনেই করি না, ছাত্র সংগঠনগুলি ছাত্র এবং শিক্ষাস্বার্থে না লড়ে কেবল অন্য বিষয়ে মাথা ঘামিয়েছে এবং মারপিট করেছে। যাঁরা এটা মনে করেন, তাঁদের সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির বিন্দুমাত্র যোগ নেই।” শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে স্বশাসন এলেও ছাত্র আন্দোলন কি তবে কোনও দিনই স্বশাসিত হয়ে উঠবে না? নকশাল নেতা তথা প্রাক্তন ছাত্র নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায়ের মতে, সেটা এক প্রকার অসম্ভব। কারণ, “আমাদের দেশে ছাত্রছাত্রীরা চিরকালই আদর্শগত প্রশ্নে উজ্জীবিত হয়েছেন। বাসভাড়ায় ছাড় বা বিদেশ থেকে অধ্যাপক এনে পড়ানোর দাবি তাঁদের স্বপ্ন-কল্পনাকে কখনও উজ্জীবিত করেনি। তিনের দশকে যে ছাত্ররা গীতা স্পর্শ করে আন্দোলন করেছেন, তাঁদেরও এক ধরনের আদর্শ ছিল। আবার আমরা ছয়-সাতের দশকে যখন আন্দোলন করেছি, তখন সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।”
তার মানে দলীয় রংমুক্ত যে ছাত্র-রাজনীতির গল্প শোনাতে চাইছে ‘জোশ’, সেটা অবাস্তব? টিভির পর্দার বাইরে তার অস্তিত্ব নেই? মানছেন না পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। রাজ বলছেন, ‘‘রাজনীতিক হয়ে ওঠার জন্যও শিক্ষার প্রয়োজন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিকে তাই পাড়ার রাজনীতি, রাস্তার রাজনীতি, দলের রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখার কথা বলছে এই ধারাবাহিক। চাইছে পড়ুয়াদের মধ্য থেকে সত্যিকার নেতা তৈরি হোক। কলেজের সব ছেলেমেয়ে যদি একসঙ্গে রুখে দাঁড়ায়, শিক্ষক-নিগ্রহের মতো ঘটনা ঘটতে পারবে কি?”

তথ্য সহায়তা: রোশনী মুখোপাধ্যায়, সাবেরী প্রামাণিক



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.