অগ্নিসংস্কার কবে
অরক্ষিত মাতৃসদন
ক প্রসূতিকে জলের বদলে ফিনাইল খাওয়ানোর অভিযোগে সম্প্রতি তোলপাড় হয়েছিল বালি কেদারনাথ আরোগ্যভবন হাসপাতাল। যদিও পরে সুস্থ শিশুর জন্ম দেন ওই মহিলা। কিন্তু এই ঘটনায় বালি পুরসভা পরিচালিত হাসপাতালটির বেহাল অবস্থা প্রকাশ্যে আসে। বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বালি পুর কর্তৃপক্ষও।
অভিযোগ, আমরি-কাণ্ডের পরেও এই হাসপাতালের সুরক্ষার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। ঘিঞ্জি এলাকার ভিতরে হাসপাতালটিতে রয়েছে কয়েকটি মাত্র অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। অধিকাংশেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। নেই ফায়ার লাইসেন্সও। পাশাপাশি কয়েক লক্ষ টাকা খরচে তৈরি নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। বালি কালীতলায় জিটি রোডের উপর একশো বছরের বেশি পুরনো এই কেদারনাথ আরোগ্য ভবন হাসপাতালটি মূলত প্রসূতিদের জন্য হলেও এখানে হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথির আউটডোর রয়েছে। রয়েছে আল্ট্রা-সোনোগ্রাফি ও ইসিজি-র ব্যবস্থা।
জিটি রোড থেকে হাসপাতালের মূল দরজা দিয়েই ঢুকেই বাঁ দিকে এক তলায় রয়েছে একটি বড় হল ঘর ও প্রশাসনিক কার্যালয়। এই ঘরে প্রতি দিন সকালে এক জন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক বসেন। এখানে বিপজ্জনক ভাবে মেন সুইচ ও মিটারবক্স খোলা রয়েছে। পাশেই রয়েছে প্রশাসনিক দফতর ও ইসিজি-র ঘর। বাইরে দেওয়ালেও বিপজ্জনক ভাবে জট পাকিয়ে রয়েছে বিদ্যুতের কেবল।
এক তলায় পুরনো কাঠের সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় প্রসূতি বিভাগে ওঠার সময় চোখে পড়বে দেওয়ালে ঝোলানো রয়েছে একটি অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার। যদিও ২০১০-এর জানুয়ারিতেই সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। অন্য অগ্নিনির্বাপকগুলিরও একই অবস্থা। তা ছাড়া হাসপাতালের কর্মীরা জানান, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র কী ভাবে ব্যবহার করতে হয় তা তাঁদের জানা নেই। হাসপাতালের গা ঘেঁষেই তিন তলা বাড়ি তৈরি হয়েছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা কোনও ভাবে ওই বাড়িতে আগুন লাগলে তা দোতলায় প্রসূতিদের ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। দোতলায় তিনটি ঘর মিলিয়ে রয়েছে ৩০টি শয্যা। সেখানেই সদ্যোজাতদের নিয়ে থাকেন মায়েরা। পাশেই ছোট্ট গলির মতো জায়গায় ডাঁই করে রাখা রয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। এক প্রসূতির আত্মীয় শৃঞ্জয় রায় বলেন, “এই সিলিন্ডার থেকেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে পর্যন্ত এই হাসপাতালে প্রসূতিদের এত ভিড় থাকত যে বেড পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন অধিকাংশ বেডই ফাঁকা থাকে। কারণ, আগের মতো চিকিৎসা হয় না। বালি কেদারনাথ আরোগ্য ভবন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা বালি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণের তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেই। পুরসভার তরফে হাসপাতালের জন্য নতুন পরিকল্পনা তৈরি করে ফায়ার লাইসেন্সের জন্য দমকল দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বছরখানেক আগে পর্যন্ত বেড ফাঁকাই পড়ে থাকত। এখন সেই অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। তবে এখানে অধিকাংশ চিকিৎসক ও নার্সই চুক্তিতে রয়েছেন। ওঁরা স্থায়ী হলে আরও ভাল কাজ হত। এ বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।”
হাসপাতালটির তিন তলাটি প্রায় ফাঁকা। এখানেই রয়েছে কর্মী, আরএমও-এর বিশ্রামাগার, নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট, নতুন অপারেশ থিয়েটার ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট ও নতুন অপারেশ থিয়েটার ২০০৫-এ এবং কেবিনটি ২০০১-এ উদ্বোধন হয়েছিল। অপারেশন থিয়েটারটি কয়েক বছর অর্থোপেডিক সার্জারির জন্য ব্যবহৃত হলেও পরে তা চিকিৎসকের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। অন্যগুলি উদ্বোধনের পরে দুই-তিন বছর চলার পরেই বন্ধ হয়ে যায়। ছাদে রয়েছে হাসপাতালের রান্না ঘর ও স্টোর রুম। অভিযোগ, সেখানেও অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রদীপবাবু বলেন, “নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট চালানোর জন্য বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা দরকার। পুরসভার পক্ষে তা সম্ভব নয়। তার উপরে সাধারণ মানুষ বেশি খরচ দিতে রাজি হচ্ছিলেন না। তাই বন্ধ করা রয়েছে। ওই বিভাগটি নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে।”
হাসপাতালের সংস্কারের বিষয়ে কী পরিকল্পনা রয়েছে?
প্রদীপবাবু বলেন, “দক্ষ প্রশাসকের প্রয়োজন। দু’টি দফায় হাসপাতালের সংস্কারের কাজ হবে। প্রথম দফার জন্য ৬ লক্ষা টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বালির বাসিন্দাদের কথা ভেবে প্রসূতি বিভাগের পাশাপাশি জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা চালুর কথাও ভাবা হয়েছে।” দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, “যেখানে যেখানে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা সাহায্য করব। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের কাছে আবেদন জানিয়ে থাকেন তবে আমাদের থেকে সব ধরনের সাহায্য পাবেন।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.