চিকিৎসক এবং পুলিশের একাংশের যোগসাজশে নির্যাতিত গৃহবধূ কবিতা দেবনাথকে চিকিৎসা না-করিয়েই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। এই ব্যাপারে আলিপুরদুয়ারের মহকুমা প্রশাসন তদন্তে নেমেছে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ওই চিকিৎসকের কাছে লিখিত জবাব চেয়েছেন। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্রের নির্দেশে বৃহস্পতিবার মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় ওই মহিলাকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি করান। জেলাশাসক বলেন, “ওই মহিলার চিকিৎসার সমস্ত রকমের ব্যবস্থা করার জন্য মহকুমা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শামুকতলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের ভুমিকা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায়ের কাছে পুলিশ-চিকিৎসক যোগসাজশের অভিযোগ পৌঁছেছে। তিনি বাসিন্দাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা মারধর করায় বড় চৌকিরবস গ্রামের ওই মহিলাকে শামুকতলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। অভিযোগ, ওই মহিলাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই চিকিৎসক শৌভিক দাস আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেন বলে অভিযোগ। রাতে মহিলাকে আলিপুরদুয়ারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় যুক্তি দেখিয়ে পুলিশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রেখে দেয়। পরদিন দুপুরে মহিলাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিডিও সৌমেন মাইতির মাধ্যমে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের মাধ্যমে মহিলার স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নেন জেলাশাসক। তখনই জানা যায়, বাড়িতে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন কবিতা দেবী। আলিপুরদুয়ার-২ বিডিও বলেন, “রাতভর শামুকতলা হাসপাতালে একজন মহিলা পড়ে থাকলেন অথচ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলেন না, এটা মানা যায় না। আলিপুরদুয়ারে ওই মহিলাকে পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে ওই চিকিৎসক এবং স্থানীয় থানা আমায় জানাতে পারত।” এলাকার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সতীনাথ ঘোষ জানিয়েছেন, শামুকতলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের কাছে এই ব্যাপারে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। কেন শামুকতলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওই মহিলার চিকিৎসা হল না, কেনই বা তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হল তা নিয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও পুলিশের কাছে স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। |
ওই চিকিৎসক বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে মহিলা বলেছিলেন মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। সেই জন্য তাঁকে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে রেফার করা হয়।” শামুকতলা থানার ওসি প্রবীণ প্রধানের দাবি, সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার বলাই সরকার তাঁকে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বার হয়ে ওই মহিলাই বাড়িতে ফিরতে চেয়েছিলেন। যদিও বলাই সরকার দাবি করেছেন, “গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ওই মহিলাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান।” যা শুনে বড় চৌকিরবস গ্রামের বাসিন্দা পরিতোষ বিশ্বাস ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, “আমরা কেন কবিতা দেবীকে বাড়িতে নিয়ে যাব? পুলিশ চলে গিয়েছে জেনে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাই। কবিতা দেবীর কেন চিকিৎসা হয়নি তার তদন্ত হওয়া দরকার।” এদিন মহকুমা হাসপাতালে যাওয়ার সময়ে ওই মহিলা স্পষ্টই জানিয়েছেন, তিনি বাড়িতে ফেরার কথা পুলিশ কর্মীদের বলেননি। তাঁর কথায়, “গোটা শরীরে যন্ত্রণা। বাড়িতে ফিরতে চাইব কেন? পুলিশই তো আমায় বাড়িতে চলে যেতে বলল। হাসপাতালের ডাক্তারকে ওষুধ দিতে বললাম। উনি জানালেন আমায় আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হবে। কারা মিলেঝুলে এমন করছে সেটা দেখা দরকার।” আলিপুরদুয়ারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিশ্বচাঁদ ঠাকুরের দাবি, এমন হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান। পুলিশ ওই নির্যাতনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত গৃহবধূর শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর ও জাকে গ্রেফতার করেছে। খুড়শ্বশুর সুভাষ দেবনাথ এখনও পলাতক। অভিযুক্তের গ্রেফতার দাবি করেন বাসিন্দারা। আজ, শুক্রবার গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে শামুকতলা থানায় স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এদিন আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে অভিভাবক মঞ্চের পক্ষ থেকে ওই মহিলার ছেলের খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। |