পূর্বে দুর্নীতি-দ্বন্দ্বে শিকেয় উন্নয়ন, নালিশ
গোষ্ঠী-কোন্দল তো আছেই। অধিকাংশ পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পূর্ব মেদিনীপুরের উন্নয়নে শাসক তৃণমূলের ব্যর্থতা ও দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে ক্ষমতায় আছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে খোদ জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ ও একাধিক পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। গোষ্ঠী-কোন্দল ঘিরে রীতিমতো অস্বস্তিতে দলের জেলা নেতৃত্ব। হলদিয়া ও পাঁশকুড়ায় দলীয় কোন্দলের জেরে একাধিকবার সংঘর্ষ ও মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষে রাজ্য নেতৃত্বকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। অভিযোগ, এ সবের জেরে শিকেয় উঠেছে উন্নয়নের কাজ। তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “গ্রামোন্নয়নের প্রকল্প রূপায়ণে রাজ্যের মধ্যে আমাদের জেলা প্রথম সারিতে আছে। ব্যর্থতার অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলি রূপায়ণে পিছিয়ে পড়েছে বলেই অভিযোগ। গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে বরাদ্দ অর্থে জেলার একাধিক সেতু তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও অধিকাংশ সেতুর কাজই শুরু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নতুন পাকা রাস্তা তৈরির গতিও কমেছে। গ্রামীণ নিবিড় বিদ্যুদয়নের শ্লথগতি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গ্রামবাসীদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের গুরুত্ব বেশি। অথচ এই প্রকল্পে গ্রামবাসী চলতি আর্থিক বছরে গত ৯ মাসে (৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) গড়ে মাত্র ২২ দিন কাজ পেয়েছেন।
অথচ নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন ঘিরে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল এই জেলাতেই। ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলার ২২৩টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৫টি পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। জেলা পরিষদ ছাড়াও ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ২০টি দখল করে তৃণমূল। এ দিকে, পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে প্রথম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তমলুক ব্লকের উত্তর সোনামুই পঞ্চায়েতে। ওই এলাকায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাতিল সরঞ্জাম বেআইনি ভাবে বিক্রির অভিযোগ ওঠে প্রধানের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক ভাবে মামলাও হয়। আর এই ঘটনা নিয়ে তমলুক পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি ও সহ-সভাপতির কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। শেষে দল পরিচালিত পঞ্চায়েতের দুর্নীতি নিয়ে সরব হওয়া পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি চম্পাবতী জানাকে অনাস্থা এনে অপসারিত করা হয়।
একই ভাবে কোলাঘাট ব্লকের বৃন্দাবনচক পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে পরমানন্দপুর গ্রামে রাস্তা মেরামতির কাজে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়। পঞ্চায়েতের পাশাপাশি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ রফিকুল হাসানের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারী তৃণমূলেরই এক জেলা পরিষদ সদস্য। তমলুক, চণ্ডীপুর ও হলদিয়ার সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল সদস্যদের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। পাঁশকুড়ায় কোন্দলের জেরে সম্প্রতি দলের সমর্থকদের হাতে মার খেয়েছেন ব্লক তৃণমূল যুব সভাপতি সুজিত রায়। দলেরই সমর্থকদের হাতে হেনস্থা হন তৃণমূল নেতা ও জাতীয় শিক্ষক নির্মল মাইতিও।
অন্য দিকে, হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে তৃণমূল শ্রমিক ইউনিয়নের একাধিক গোষ্ঠী কারখানায় নিজের নিজের প্রাধান্য তৈরি করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। যার জেরে আহত হয়েছেন নন্দীগ্রাম ভূমি-আন্দোলনের অন্যতম মুখ অভিজিৎ গিরিও। তৃণমূলের জেলাস্তরে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির কাছে ইতিমধ্যে প্রায় ৩০টি দুর্নীতি ও দলবিরোধী কাজের অভিযোগ জমা পড়েছে। এই সব অভিযোগ নিয়ে তদন্তও চলছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি ও দলবিরোধী কাজের দায়ে কড়া শাস্তির নজির এখনও নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.