আলিপুর চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আমেরিকা থেকে আনানো হয়েছিল ১৮টি স্বয়ংক্রিয় গেট। কিন্তু এক কোটি ২২ লক্ষ টাকার সেই গেটগুলি আট মাস ধরে বস্তাবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে অন্ধকার ঘরে। তা কাজে লাগানোর ব্যবস্থা এখনও হয়নি।
চিড়িয়াখানা থেকে মার্মোসেট চুরি যাওয়ার পরেই নিরাপত্তা আরও কড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। তার পরে কেটে গিয়েছে আড়াই বছর। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, আধুনিক সেই গেটগুলি বসানোর জন্য প্রয়োজন কিছু নির্মাণকাজের। কিন্তু সেই কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায়। ওই কাজের ভারপ্রাপ্ত ঠিকাদার অনুপ চৌধুরীর অনেক টাকা বাকি রয়েছে। এ বিষয়ে অনুপবাবু বলেন, “কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। টাকাপয়সা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যা বলার চিড়িয়াখানা-কর্তৃপক্ষ বলবেন।”
আমেরিকার যে সংস্থা থেকে গেটগুলি নিয়ে আসা হয়েছে, তার পূর্ব ভারতের বিজনেস অ্যাডভাইজার কাকলি মিত্র বলেন, “টাকা তো বাকি রয়েছেই, তা ছাড়াও এই গেটগুলি এসে প্রায় আট মাস ধরে পড়ে রয়েছে। গেট বসানো হবে বলে চিড়িয়াখানার কর্মীদের জন্য পরিচয়পত্রও বানানো হয়ে গিয়েছে। এত দিনেও কেন বসানো গেল না, তা জানি না। বেশি দিন গেট পড়ে থাকলে পরে কাজ করার সময়ে সমস্যা হতে পারে।”
চিড়িয়াখানার অধিকর্তা রোহিত তিওয়ারির কথায়, “মার্মোসেট চুরি যাওয়ার পরে নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করেছি। তাই নিরাপত্তা নিয়ে আপস করা হচ্ছে না। তবে এটি ঠিক যে, গেটগুলি এসে পড়ে রয়েছে।” অধিকর্তার যুক্তি, শীতকালে অনেকে চিড়িয়াখানায় আসেন। এখন যে ভাবে লাইন দিয়ে টিকিট কেটে তাঁদের ঢুকতে হয়, তাতে সময় নষ্ট হয়। চিড়িয়াখানার বাইরে দীর্ঘ লাইনের জন্য যান-চলাচলেও অসুবিধা হয়। প্রধানত সে কথা ভেবেই এই নতুন গেটগুলি বসানো দরকার। রোহিতবাবু জানিয়েছেন, প্রথমে যে ভাবে গেট বসানোর পরিকল্পনা হয়েছিল, তার সামান্য রদবদল করা হয়েছে। তাই নতুন করে রাজ্য পূর্ত বিভাগের অনুমোদন প্রয়োজন। তা পেতে দেরি হওয়ায় কাজ আটকে রয়েছে। কিন্তু চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, ২০০৯ সালের জুলাই মাসে আটটি মারমোসেট চুরি যাওয়ার পরে যে তদন্ত হয়েছিল, তাতে জানা যায়, বাইরের লোক গেট দিয়ে ঢুকেই ওই কাজ করে। পরে সাতটি মারমোসেট উদ্ধার হয়। একটি মারা গিয়েছিল। এই ঘটনার পরেই রাজু দাসকে ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হয়। নতুন এই গেট নিয়ে আসা হয় তাঁরই আমলে। কাকলিদেবী জানান, এই গেটের সঙ্গে ক্যামেরা বসানো রয়েছে। ফলে কারা ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন ছবিতে ধরা থাকবে। তবে ২০১১ সালের জুলাই মাসে চিড়িয়াখানার অধিকর্তা বদল হন। গেট বসানোর কাজও বন্ধ হয়ে যায় তার পরেই। বর্তমান অধিকর্তা রোহিতবাবু জানান, নিরাপত্তার খাতিরে সিসিটিভি বসানোর কথাও হয়েছিল। কিন্তু তার টেন্ডার হয়নি। |