সঙ্কোচনের ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াল শিল্পোৎপাদন। স্বাভাবিক ভাবেই, এতে সামান্য হলেও আশার রুপোলি রেখা দেখছে সমস্যায় জেরবার কেন্দ্র। যে কারণে এই ঘুরে দাঁড়ানোকে পোক্ত করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা এ দিনই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। যাতে তার দৌলতে চাঙ্গা হয় শিল্প। আর তার হাত ধরে হাল ফেরে দেশের অর্থনীতিরও।
ফের মন্দার আতঙ্ক উস্কে গত অক্টোবরেই শূন্যের থেকে ৪.৭ শতাংশ (সংশোধিত হিসাব অনুযায়ী) নীচে নেমে গিয়েছিল শিল্পোৎপাদন সূচক। অর্থাৎ, কল-কারখানায় উৎপাদন বাড়া তো দূরের কথা। বরং আগের বছরের ওই একই সময়ের তুলনায় তা কমে গিয়েছিল প্রায় ৫ শতাংশ। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নভেম্বরে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৫.৯ শতাংশ। গত ৫ মাসে যা সর্বোচ্চ।
নভেম্বরে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশ হওয়ার পর থেকেই শিল্পেও কিছুটা সুসংবাদ আশা করছিলেন সকলে। কিন্তু সঙ্কোচন থেকে উঠে এসে বৃদ্ধির হার যে এক লাফে প্রায় ৬ শতাংশে চলে যাবে, তা আশা করেননি অনেকেই।
প্রণববাবু বলেন, “ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্তও যদি এই একই ধারা বজায় থাকে, তা হলে আর্থিক ছবি অনেকটাই ভাল হবে। তবে এ জন্য এখন থেকেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার আশা, “শিল্প ক্ষেত্র ঝিমিয়ে যাওয়ার দিন যে শেষ, এই পরিসংখ্যান তারই ইঙ্গিত।” শিল্পের চাঙ্গা হওয়ার এই প্রবণতা আর্থিক বছরের বাকি সময়েও স্থায়ী হবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা সি রঙ্গরাজন। অবশ্য এই ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে এখনই উচ্ছ্বসিত হতে নারাজ শিল্পমহল। সিআইআই, ফিকি-র মতো বণিকসভাগুলির মতে, এই সময়ে ভোগ্যপণ্য (১৩.১%), বিদ্যুৎ (১৪.৬%) এবং কারখানার উৎপাদন (৬.৬%) উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। কিন্তু আলোচ্য মাসেও ৪.৬ শতাংশ কমেছে মূলধনী পণ্যের উৎপাদন। যা যথেষ্ট চিন্তার। কারণ, সাধারণত এই সব পণ্য ব্যবহৃত হয় অন্য পণ্য তৈরির কাঁচামাল হিসেবে। ফলে, তার উৎপাদন কমার অর্থ আগামী দিনে শিল্প বৃদ্ধির গতি ফের থমকে যাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, নভেম্বরেও মূলধনী পণ্যের উৎপাদন হয়তো কমেছে। কিন্তু অক্টোবরের সাপেক্ষে তার হাল ফিরেছে অনেকখানি। কারণ ওই মাসে তার উৎপাদন কমেছিল ২৬.৫ শতাংশ ।
ফিকি-র সেক্রেটারি জেনারেল রাজীব কুমার এবং সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, মূলধনী পণ্যের উৎপাৎদন না-বাড়লে দীর্ঘস্থায়ী হবে না শিল্প বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী গতি। তাই শিল্পমহলের দাবি, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আসার পর এ বার সুদ কমানোর পথে হাঁটুক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বা আপাতত বাজারে নগদের জোগান বাড়াতে অন্তত ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (ব্যাঙ্কগুলিকে যে নগদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে জমা রাখতে হয়) কমাক তারা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, খাদ্যপণ্য সস্তা হওয়ায় সুদ কমাতে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। আবার অন্য পক্ষের মতে, সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি এখনও চড়া থাকার পাশাপাশি আপাতত শিল্পের হাল ফেরায় এখনই এ নিয়ে তাড়াহুড়ো করবে না তারা। শেষ পর্যন্ত রিজাভর্র্ ব্যাঙ্ক কোন পথে হাঁটে, এখন সে দিকেই তাকিয়ে শিল্পমহল। |