লক্ষ টাকার শ্রাদ্ধ করে হাসপাতালে মূষিক প্রসব
ক বর্গমিটার এলাকার ইঁদুর মারতে যদি ৫৭ পয়সা দিতে হয়, এসএসকেএম হাসপাতালের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ানো ধেড়ে ও নেংটি ইঁদুর মারতে মোট কত টাকা লাগবে?
পাটিগণিতের অঙ্ক মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই এসএসকেএমের বাস্তব। হাসপাতাল কর্তারা জানিয়েছেন, বছরে শুধু ইঁদুর মারতে প্রায় দু’লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তার পরেও ইঁদুর মরার বদলে ইঁদুরের কামড়ে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে! সম্প্রতি এসএসকেএমে এমন ঘটনা ঘটার পরে ইঁদুর মারতে বিভিন্ন হাসপাতালে কত টাকা খরচ হচ্ছে এবং সেই খরচ আদৌ ফলপ্রসূ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতেই ধরা পড়েছে, এই পর্বতের মূষিক প্রসব! লক্ষাধিক টাকা খরচ করেও ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের! ইঁদুরেরা কামড়াচ্ছে, দামি যন্ত্রপাতির তার কেটে নষ্ট করছে, রোগীদের খাবারে মুখ দিচ্ছে।
চিত্রণ: সুমন চৌধুরী
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন বুঝতে পারছেন, কাজের কাজ হচ্ছে না, তখন নতুন করে টেন্ডার করা হচ্ছে না কেন? এসএসকেএমের সুপারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অ্যাকাউন্ট্যান্টের দিকে, অ্যাকাউন্টেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের দিকে এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার আবার সুপারের দিকে আঙুল তুলেছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী জানিয়েছেন একাধিক সংস্থাকে মাসে দু’বার করে ইঁদুর নিধনের ভার দেওয়া হয়েছিল। তারা এক এক বারে ১৯-২০ হাজার টাকা করে নিলেও ফল শূন্য।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্বপন সাঁতরারও এক বক্তব্য। জানিয়েছেন, বছরে ইঁদুর মারতে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা রোগী কল্যাণ সমিতির টাকা থেকে খরচ হয়। তার পরেও হাসপাতাল ভর্তি ধেড়ে ইঁদুর। আরজিকরে গত বছর ইঁদুর মারতে ৮০ হাজার টাকার উপর খরচ হয়েছে। ডেপুটি সুপার সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কথায়, “পেস্ট কন্ট্রোল সংস্থাকে রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে টাকা দিতে-দিতে আমরাও ক্লান্ত। এ বার ইঁদুরের জন্য নিজেরাই বিষ দেব বা কল পাতব।” ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সুপার পার্থ প্রধানও স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়ে দিয়েছেন, মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা ইঁদুরের জন্য ‘নষ্ট’ করার বদলে ৩০-৩৫ টাকা দিয়ে বেশ কয়েকটা কল কিনে হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় পেতে দেওয়া হয়েছে।
ইঁদুর-নিধন যজ্ঞের ভারপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাগুলো কী বলছে? কেন ইঁদুর বংশ ধ্বংস করতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা?
একটি সংস্থার প্রধান অরুণকুমার দাসের বক্তব্য, “দু’কেজি-তিন কেজি ওজনের সব ইঁদুর। হাসপাতালে প্রচুর খাবার পায়। ওদের আটকানো যাবে না।” সংস্থাগুলির সকলেরই বক্তব্য, ইঁদুরেরা হাসপাতালের তলায় মাটি খুঁড়ে কয়েক কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গ বানিয়ে ফেলেছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ বা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের মতো কয়েকটি হাসপাতাল থেকে ইঁদুরেরা কার্জন পার্ক পর্যন্ত সুড়ঙ্গ করে ফেলেছে। ফলে এক দলকে মারলেও সুড়ঙ্গ দিয়ে আর এক দল এসে হাজির হচ্ছে।
প্রশাসনের কর্তারা কি এ ‘খবর’ জানেন? কলকাতা পুরসভার ডিরেক্টর জেনারেল (সিভিল) পি কে দুয়া সব শুনে মন্তব্য করেছেন, “বড়বাজারের কিছু জায়গায় মাটির নীচে গর্ত খুঁড়ে ইঁদুর এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যায় শুনেছি। কিন্তু এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল বা কার্জন পার্ক থেকে মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত সাত-আট কিলোমিটার সুড়ঙ্গ বানিয়ে ফেলেছে এমন কখনও দেখিওনি, শুনিওনি।” স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর মন্তব্য, “তা হলে তো এ বার আমাদের হাসপাতালের তলায় মাটি খুঁড়ে সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে হয়!”
‘সত্য’ যাচাই হয়নি। তাই রোগীরা সিঁটিয়েই রয়েছেন। চার দিকে এত ইঁদুর কেন? জবাবদিহি চাইলে কর্মীরা বলে দিচ্ছেন, কার্জন পার্ক থেকে গর্ত খুঁড়ে নতুন ইঁদুর চলে এসেছে!

(চলবে)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.