কাজিয়ায় বিব্রত, হাইকম্যান্ড বলল ‘ধীরে চলো’
জোট সরকারের বড় শরিকের ‘কুৎসা’র জবাবেও প্রদেশ কংগ্রেসকে ‘সংযত’ থাকারই নির্দেশ দিয়েছে হাইকম্যান্ড।
কংগ্রেস-তৃণমূল দুই শরিকের পারস্পরিক আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণ, ‘ব্যক্তিগত কুৎসা’র তরজায় আপাতত শরিকি দ্বন্দ্ব তুঙ্গে। এতটাই যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই বলেছেন, “দরজা খোলা আছে! কংগ্রেস চাইলে চলে যেতে পারে।” তৃণমূলের মন্ত্রী-নেতারাও নাগাড়ে কংগ্রেসকে কটূক্তি করছেন। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের ‘করণীয়’ জানতে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁদের আলোচনায় যা উঠে এসেছে, তাতে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতিই নেওয়ার পক্ষপাতী হাইকম্যান্ড।
মঙ্গলবার প্রদীপবাবু বলেন, “প্রণব’দার সঙ্গে কথা হয়েছে। রাজ্যের সমস্যা নিয়ে যে ভাবে কংগ্রেস প্রধান সরকারি দলের বিরোধিতা করছে, সে ব্যাপারে সমর্থন আছে হাইকম্যান্ডের। তবে একটু ধীরে ও সংযত থেকে প্রতিবাদ চালাতে বলেছেন প্রণব’দা।” এই ‘ধীরে চলা’র যুক্তি দিয়ে প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “শিয়রে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। তাই আপাতত তৃণমূল-বিরোধী কোনও সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ কেন্দ্র। রাজ্যেও কংগ্রেস যাতে কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত না নেয়, তাই আমাদের কুৎসার জবাবে কুৎসা না করে সংযত হয়ে ধীরে চলতে বলেছেন।” বৃহস্পতিবার কলকাতায় আসার কথা রয়েছে প্রণববাবুর।
মমতা অবশ্য এ দিনও সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে কংগ্রেসকে একহাত নিয়েছেন। তবে তিনি কংগ্রেসের নাম নেননি। তবে মহাকরণে এ দিন কংগ্রেসের নাম করেই তোপ দেগেছেন রাজ্যের মন্ত্রী, মুর্শিদাবাদ থেকে নির্বাচিত একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক সুব্রত সাহা। অবশ্য সোমবার মহাকরণে মুর্শিদাবাদের বিধায়ক তথা অধীর চৌধুরীর অনুগামী মন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তীর ‘সরকার-বিরোধী’ ক্ষোভের পর এ দিন সুব্রতবাবুর ‘পাল্টা’ প্রত্যাশিতই ছিল।
তবে সরকারের দুই শরিকের যে কাজিয়া চলছে এবং তা পর্যায়ে পর্যবসিত হচ্ছে, তাতে দু’দলেরই নেতাদের একাংশ যথেষ্ট ‘ক্ষুণ্ণ ও বিব্রত’। তাঁদের বক্তব্য, এই টানাপোড়েন এবং পারস্পরিক আক্রমণে বিভিন্ন মহলে ‘ভুল বার্তা’ যাচ্ছে। যা একটি সাত মাস বয়সী সরকারের পক্ষে মোটেই কাম্য নয়। দু’পক্ষেরই একাধিক নেতার কথায়, “যে ভাবে সরকারের দুই শরিকের মন্ত্রীরা মহাকরণে দাঁড়িয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগছেন, তাতে সরকারই হাস্যাস্পদ হচ্ছে।” রাজ্যের এক মন্ত্রীর কথায়, “মনোজ-সুব্রত’র ঝগড়া তো মুর্শিদাবাদ জেলার। তাকে কেন এ ভাবে গোটা রাজ্যের মঞ্চে এনে ফেলা হচ্ছে?” ওই মন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর উচিত, দু’পক্ষকে ডেকে বলা, এটা করা উচিত হয়নি কারও। রাজনীতির লড়াই রাস্তাঘাটে, মাঠে-ময়দানে হোক। প্রশাসনিক সদর দফতরে কেন হবে? এতে তো রাজ্যের মুখ্য প্রশাসক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর সুনামও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে!”
এ দিন নেতাজি ইন্ডোরে সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রীদের ঋ
ণ ও বৃত্তি প্রদানের অনুষ্ঠানে কংগ্রেস-সিপিএমকে কার্যত এক বন্ধনীতে ফেলেই সমালোচনা করেন মমতা। সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধিদের সামনে সল্টলেকের ইন্দিরা-ভবনে নজরুল অ্যাকাডেমি গড়া নিয়ে বিতর্কের প্রসঙ্গে ঘুরিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “কেউ কেউ বলছেন, নজরুল অ্যাকাডেমি কেন হবে? নজরুলের নামে ফাউন্ডেশন কেন হবে? তাঁরা রাস্তায় নেমে আন্দোলনও করছেন। তাঁদের বলি, অবরোধ করে উন্নয়ন ঠেকানো যাবে না।” সিপিএমকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “সিপিএম চুরুলিয়ায় নজরুলের ভিটের দু’টো ঘর অ্যাকাডেমির নামে দখল করলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। ওখানে আর একটা পার্টি অফিস হয়েছে। অথচ, এত দিন পর নজরুলের সম্মানে ভাল কাজের সময় প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। গলা মেলাচ্ছে সিপিএম ও তার বন্ধু রাজনৈতিক দল (কংগ্রেস)।”
পূর্ত-সড়ক দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, “নিজেরা জোটধর্ম না-শিখে তৃণমূলকে রাজধর্ম শেখাতে এসেছে কংগ্রেস! বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই জিতিয়েছেন। ক্ষমতা থাকলে ওরা সারা বাংলায় প্রার্থী দিক। কলকাতা পুরসভার মতো অবস্থা হবে ওদের।” মনোজবাবুর নাম করেই সুব্রতবাবু বলেন, “কংগ্রেসই কংগ্রেসকে হারায়! সোমবার যিনি ওই সব কথা বলেছিলেন, তিনিও কংগ্রেসের কংগ্রেসকে হারানোর বাই-প্রোডাক্ট। ওরা নিজেদের দল বা জোট কাউকে সম্মান করে না।” এক ধাপ এগিয়েই তৃণমূলের মন্ত্রীর বক্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল যদি মুর্শিদাবাদে একা লড়ার অনুমতি পায় (নেতৃত্বের), তা হলে দেখিয়ে দেব, মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের কী অবস্থা!”
মমতা বা তাঁর দলীয় সতীর্থ মন্ত্রী যা-ই বলুন, প্রদীপবাবুরা কিন্তু ‘সংযম’ই দেখাচ্ছেন। কারণ, পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। আগামী মাস দেড়েক ধরে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর এবং গোয়ায় বিধানসভা ভোট চলবে। তার ফলাফলের উপর দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের অন্দরের সমীকরণ অনেকটাই নির্ভর করবে। ওই ভোটের পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়েও শরিকদের উপর নির্ভরশীল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। দুই ভোট-পর্বের আগে ইউপিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক তৃণমূলের সঙ্গে ‘অম্লমধুর’ সম্পর্ক রেখে চলারই পক্ষপাতী তারা।
রাজ্যের সাম্প্রতিক ‘উত্তপ্ত’ আবহে হাইকম্যান্ডের ‘সংযমী’ পদক্ষেপের ‘বার্তা’ পৌঁছে দিতে রাজ্যের সাত কংগ্রেসি মন্ত্রীকে নিয়ে আজ, বুধবার জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন প্রদীপবাবু। চিঠি দিয়ে তা জানানোও হয় মন্ত্রীদের। কিন্তু শেষ মূহূর্তে তিন মন্ত্রী জানান, বৈঠকে তাঁরা থাকতে পারবেন না। সাতজনের মধ্যে তিন জন না-থাকলে বৈঠক কার্যত ‘অর্থহীন’ হবে বুঝে বৈঠক আপাতত পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রদীপবাবু। এ দিন রাতে প্রদীপবাবু বলেন, “রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে মন্ত্রীদের নিয়ে আলোচনা করতেই বৈঠক ডেকেছিলাম। হাইকম্যান্ডের বক্তব্যও জানানোর ছিল। কিন্তু আবু নাসের খান চৌধুরী, প্রমথনাথ রায় ও মনোজ চক্রবর্তী আসতে পারবেন না জানানোয় বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হল। আগামী সপ্তাহে ওঁদের নিয়ে বসার চেষ্টা করছি।” প্রদীপবাবু জানান, “আবু নাসের দিল্লিতে। প্রমথনাথ ও মনোজ আসতে পারবেন না। মনোজ বললেন, অন্য অনুষ্ঠানে যেতে হবে। তাই আসতে পারবেন না।” তবে দলের বর্ষীয়ান মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বৈঠকে আসার ব্যাপারে কথা দিয়েছিলেন।

(সহ প্রতিবেদন: ঋজু বসু ও কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.