সরকারি নির্দেশ ‘অমান্য’ করে পঞ্চম শ্রেণিতে সব আসনে লটারি না করার অভিযোগ উঠল নাকাশিপাড়ার বেথুয়াডহরি জেসিএম হাইস্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে আসনের সংখ্যা ৩২০। ওই স্কুলে কোনও প্রাথমিক বিভাগ নেই। ফলে নিজের স্কুলের ছাত্রছাত্রী ভর্তির বাধ্য বাধকতাও নেই। তবুও ওই স্কুলে মঙ্গলবার সব ক’টি আসনের জন্য লটারি না করেই ছাত্রভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলা শিক্ষা দফতর অবশ্য স্কুলের এই কাজকে ভাল চোখে দেখছে না। নদিয়া জেলার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, “স্কুলের যেহেতু কোনও প্রাথমিক শাখা নেই সেহেতু সব আসনের জন্যই লটারি করাই সরকারি নিয়ম।”
এই ঘটনায় অভিভাবকের একাংশ রীতিমত ক্ষুব্ধ। তাঁদের প্রশ্ন সরকারি নিদের্শিকা অমান্য করে কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? মঙ্গলবার স্কুলের ৩২০টি আসনের মধ্যে মাত্র ১০০টি আসনে লটারি করা হয়। বাকি ২২০ টি আসনে তা হলে কারা ভর্তি হবে? স্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুণকান্তি বিশ্বাস বলেন, “আমরা একশোটি আসনের জন্য লটারি করেছি ঠিকই তবে বাকি আসনে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা যাতে ভর্তির সুযোগ পান সে জন্যই ওই আসনগুলিতে সরাসরি স্থানীয় সাতটি স্কুলের ছাত্রদের নেওয়া হবে। স্কুলের পরিচালন সমিতির সঙ্গে বৈঠক করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তিনি স্পষ্টই জানান, এর ফলে কোনও রকম সরকারি নিয়মের ‘অসম্মান’ করা হচ্ছে না।
স্কুলে ভর্তি নিয়ে অবশ্য সরকারি নিয়মেই কিছু ধোঁয়াশা রয়েছে। স্থানীয় তৃণমূলের শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান কালীপ্রসন্ন দাসও মনে করছেন এর মধ্যে কোনও ‘ত্রুটি’ নেই। তিনি বলেন, “ওই নির্দেশিকায় এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা ভাল করে দেখলে বোঝা যাবে সরকারি নিয়মের বাইরে কিছু করা হয়নি।”
এলাকার ৫টি প্রাথমিক, ২টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের ছাত্রদের সরাসরি স্কুলে ভর্তি নেওয়া হবে বলে স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে। তরুণবাবু বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতিতে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ তবে, স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি অংশুমান দে মনে করছেন এর ফলে সরকারি নির্দেশ ‘কিছুটা হলেও অমান্য’ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘জানি এতে কিছুটা হলেও নির্দেশিকা অমান্য হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় অভিভাবকদের যে চাপ ছিল তাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া বিকল্প আর কোন পথ ছিল না। মোট ৫৩৬ টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। তার মধ্যে এ দিন ৩৩০ জনের লটারি করে ১০০ জনকে বাছাই করা হয়েছে। বাকিদের সরাসরি ভর্তি নেওয়া হবে। বাছাই ১০০ জনের মধ্যে ৭৯ জন তফসিলি জাতি ও উপজাতি এবং ২১ জন সাধারণ ছাত্র।” এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “কোন স্কুল কর্তৃপক্ষ সরকারি নিয়ম অমান্য করলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ নাকাশিপাড়ার বিডিও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘যতদূর জানতে পারছি ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ সব আসনে লটারি করেননি। তারা কেন সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করল তা জানতে চাওয়া হবে।’’ লটারি নিয়ে কেন তৃণমূলেরই স্কুল পরিচালন সমিতি এ ভাবে সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করল তা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের কল্লোল খাঁ বলেন, ‘‘সরকারি যা নির্দেশিকা তা সকলেরই মেনে চলা উচিৎ। কোন স্কুল পরিচালন সমিতি তা অমান্য করে থাকলে সেটা অন্যায় হয়েছে।’’ |