|
|
|
|
চার দশক স্কুল চালিয়েও স্বীকৃতি নেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
১৯৭৩ সালে যাঁরা ছিলেন তরতাজা যুবক, এখন তাঁরা বার্ধক্যের কিনারে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে স্কুল চালিয়ে অগুনতি ছাত্র তৈরি করেছেন। তবু স্কুলটির সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি। শিক্ষকেরাও সরকারি স্বীকৃতি পাননি। তবু হাল ছাড়েননি তিন শিক্ষক। এখনও বিনা পারিশ্রমিকেই স্কুল চালিয়ে যাচ্ছেন। আশার আলো এখনও জ্বলে রয়েছে বুকের মধ্যে। ১৯৭৩ সালে এই স্কুলের শুরু বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহের পাশের গ্রাম পাথরায়। স্কুলের কোনও নিজস্ব বাড়ি নেই। গ্রামের শীতলা মন্দিরের ঘর ও আটচালাতেই চলে স্কুল। তাই, স্কুলের নামকরণ করা হয়েছিল ‘পাথরা শীতলানাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়’। কিন্তু কত দিন বিনা পারিশ্রমিকে স্কুল চালাবেন শিক্ষকেরা? সরকারি স্বীকৃতি না পেলে সরকারি অর্থ-সাহায্য থেকেও বঞ্চিত হবে স্কুল। তাই, আদালতের দ্বারস্থ হন শিক্ষকেরা। ১৯৯৭ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি গীতেশরঞ্জন ভট্টাচার্যের ডিভিসন বেঞ্চ শিক্ষকদের সরকারি ভাবে নিয়োগের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশের ৩ মাসের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ মেনে রাজ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদও শিক্ষকদের শুনানি নিয়ে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদকে নিয়োগের নির্দেশ দেয়। কিন্তু আদালতের নির্দেশের ৩৯ বছর পরেও ওই শিক্ষকদের সরকারি ভাবে নিয়োগ করা হয়নি। স্কুলটিকেও সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক রূপককুমার সিংহ বলেন, “রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মতো স্কুলগুলিকে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সেই সব স্কুলের শিক্ষকেরাও সরকারি ভাবে নিযুক্ত হয়েছেন। কেবলমাত্র আমাদের স্কুলটিই ব্যতিক্রম থেকে গিয়েছে। প্রায় সারা জীবনই গ্রামে শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে আমরা স্কুল চালিয়েছি। এখনও স্কুল চালাচ্ছি। আদালতও সরকারি ভাবে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে। তবু বামফ্রন্ট সরকার আমাদের নিয়োগ করেনি। এ বার নতুন সরকার নিয়োগ করবে, এই আশাতেই বুক বেঁধে রয়েছি।” স্কুলের দুই সহ শিক্ষক মনোরঞ্জন ঘোষ ও দিলীপকুমার ঘোষ বলেন, “যখন স্কুল শুরু করেছিলাম, তখন যুবক ছিলাম। এখন সবাই বার্ধক্যের কিনারে। আমাদের স্কুল থেকে হাজার হাজার ছাত্র পাশ করে বেরিয়েছে। অনেকেই চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক হিসাবে প্রতিষ্ঠাও পেয়েছে। আগের সরকারের বঞ্চনায় আমরাই অন্ধকারে থেকে গিয়েছি।” বর্তমানে এই স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ৬৭। আগে অবশ্য ছাত্র সংখ্যা ছিল আরও বেশি। কেন ছাত্রসংখ্যা কমল? শিক্ষকদের কথায়, সব স্কুলেই এখন মিড-ডে মিল চলে। গ্রামের গরিব ছাত্রছাত্রীরা সেখানে একবেলা খেতে পায়। কিন্তু সরকারি অনুমোদন না থাকায় এই স্কুলে মিড-ডে মিল চালানো যায় না। তাই ছাত্র সংখ্যা কিছুটা কম। তা ছাড়াও স্কুলের পর্যাপ্ত পরিকাঠামোও নেই। কিন্তু গ্রামে এই স্কুলটির প্রয়োজনই বা কতটা? বাসিন্দা তাপস ঘোষ, অনিমেষ ঘোষদের কথায়, “গ্রামে তো কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। দেড় কিলোমিটার দূরে সেই বীরসিংহে স্কুল রয়েছে। গ্রামের এই শীতলামন্দিরের স্কুলে পড়াশোনার মান ভালই।” গ্রামবাসীরাও চান স্কুলটি, স্কুলের সংগঠক-শিক্ষকদের স্বীকৃতি দিক সরকার। প্রধান শিক্ষক বলেন, “নতুন সরকারের কাছে আমরা নতুন করে আবেদন জানিয়েছে। আমাদের বঞ্চনার কথা শুনে স্কুল পরিদর্শনের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মুর্মু। তাই, ফের আশায় বুক বাঁধছি আমরা।” |
|
|
|
|
|