সম্পাদক সমীপেষু ...

একশো দিনের কাজ
আপনাদের পত্রিকায় (৩/১২) জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প বিষয়ে সম্পাদকীয় লেখায় এই প্রকল্প রূপায়ণের ঠিক দিক নির্দেশিত। বেশ কিছু দিন যাবৎ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কত টাকা খরচ হয়েছে বা হয়নি, কত দিন কাজ দেওয়া হয়েছে, দুর্নীতি সম্পর্কিত খবর প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু মূল বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয় না।
প্রকল্পের জন্মলগ্ন থেকেই কেন্দ্রের নির্দেশিত ফরমান রাজ্য সরকারগুলির উপর জারি করা হয়েছে এবং এই ধরনের নির্দেশাবলি সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অথচ বিভিন্ন রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ, শ্রম করতে ইচ্ছুক পুরুষ ও মহিলাদের সামাজিক অবস্থান ও শারীরিক ক্ষমতার ভিন্নতা বিবেচনার ভার এবং নতুন নতুন কাজের জায়গা নির্ধারণে রাজ্যের অধিকার বিবেচনার মধ্যে আনা হয়নি। ‘শুধুমাত্র কত দিন একটি পরিবারকে কাজ দেওয়া গেল’ প্রকল্পটির সাফল্য মূল্যায়নে মূলত এই বিষয়টি বিবেচিত হচ্ছে। সংক্ষেপে কয়েকটি কথা বলা যায়:
ক) সামগ্রিক বিচার করে রাজ্যগুলি যথার্থ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে। এই অধিকার রাজ্যেরই থাকা উচিত। সর্বক্ষেত্রে ষাট ভাগ শ্রম ও চল্লিশ ভাগ উপাদানের ব্যবহার থেকে একচুলও বিচ্যুত হওয়া যাবে না এই নির্দেশটিও বাস্তবোচিত নয়। স্ব স্ব এলাকার অবস্থান বিচারে এর পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
খ) বলা হয়েছে, পঞ্চাশ হাজার টাকার নীচে কোনও প্রকল্প তৈরি করা যাবে না। কেন নয়? এই রাজ্য মূলত কৃষিপ্রধান গ্রামগুলিতে বড় বড় হাতেগোনা কয়েকটি রাস্তা আছে। কিন্তু একটি গ্রামের সঙ্গে অন্য গ্রামের যোগাযোগের ছোট ছোট রাস্তা। জমিতে যাওয়ার জন্য, জমি থেকে ফসল তুলে আনার জন্য ছোট যান চলাচল উপযোগী রাস্তাগুলি এবং অজস্র জলনিকাশি নালা উপযুক্ত অবস্থায় রাখা হলে তা হবে গ্রামের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। টাকার অঙ্কের নিম্নসীমা ছাড় দিলে এগুলি রূপায়িত এবং প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
গ) আমাদের রাজ্যে মূলত মাটির কাজ, পুকুর পুনঃখনন, মাটির রাস্তা তৈরি, ছোট সেচ-ডোবা খনন প্রকল্প আছে। হাতেগোনা এই প্রকল্পগুলি অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ হওয়ার ফলে নতুন কাজের জায়গা খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে অনড় ‘গাইডলাইন’ সমস্যা তৈরি করছে। এই বিষয়ে পরিবর্তন, পরিমার্জন করার অধিকার রাজ্যগুলির হাতে থাকা উচিত।
ঘ) স্বচ্ছতা বজায় রাখা ও দুর্নীতি দূর করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তথ্য সংরক্ষণ, ঠিক সময়ে মজুরি প্রদানের ব্যবস্থা এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। কিন্তু, যাঁদের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে যুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা অবহেলিত বললে কম বলা হবে। এই দায়িত্বপ্রাপ্তদের ন্যূনতম কর্মী হিসাবে (স্থায়ী/অস্থায়ী) স্বীকৃতি তো নয়ই, মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে ঠিকা কর্মীর সমতুল্যও মনে করা হয় না। জেলা স্তরে, ব্লক স্তরে এই প্রকল্প রূপায়ণের মূল কান্ডারি, বিশেষ করে ব্লক স্তরে শুধুমাত্র ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক যিনি এই প্রকল্পেরও আধিকারিক, তাঁকে বাদ দিলে আর সকলেই ‘কন্ট্র্যাক্টচুয়াল’। অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা কয়েক জন শিক্ষিত কর্মচারীর হাতে এই বিশাল রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প সফল রূপায়ণের কতটা আশা আমরা করতে পারি?
পঞ্চায়েতের এক শ্রেণির নির্বাচিত প্রতিনিধি নিজের লোকেদের কোদাল না-ধরেও পুরো মজুরি পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে যদি না-মাতেন, তা হলে প্রকল্পে যুক্ত কর্মীরা কাজের স্বচ্ছতা রাখতে পারেন। দুুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীরা এর ফলে কোণঠাসা হবে।
সর্বোপরি রাজ্য স্তরে পরিকল্পনা প্রণয়নের অধিকার দেওয়া হলে তাঁরাও যেন পঞ্চায়েতের মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার মধ্যে রাখেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.