নিজের দলের আচরণেই প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ লালকৃষ্ণ আডবাণী।
বাবুসিংহ কুশাওয়াহা কাণ্ড থেকে শুরু করে উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী রণকৌশল নিয়ে নির্বাচন কমিটির বৈঠকে খোদ দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ীকেই সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন আডবাণী। এক বার নয়, পরপর দু’টি বৈঠকে। দু’বারই তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলি। এখানেই শেষ নয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবতকে নাগপুরে ফোন করেও এই বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা জানিয়েছেন, দলীয় রণকৌশল তিনি সমর্থন করতে পারছেন না। আর তাই তিনি উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনী প্রচারে যাবেন না।
শুধু আডবাণী নন, উত্তরপ্রদেশ ঘিরে অসন্তোষ রয়েছে দলের প্রায় প্রতিটি স্তরেই। সব মিলিয়ে বৃহত্তম রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভোটের আগে রীতিমতো ছন্নছাড়া বিজেপি।
বিজেপি অবশ্য কুশওয়াহা বিতর্ক ধামাচাপা দিতে গত কালই জানিয়েছিল, আডবাণী ও নরেন্দ্র মোদী ভোট প্রচারে যাবেন। কিন্তু এই দুই শীর্ষ নেতাই সঙ্ঘকে জানিয়েছেন যে, দলের কেউই এ ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেননি। ফলে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে বিজেপি-র কোন্দল এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে কংগ্রেস-বিরোধিতার চেয়েও গডকড়ী-বিরোধিতাই যেন অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে বিজেপি-র শীর্ষ নেতাদের কাছে। পরের লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য তাঁদের মধ্যে কলহ যা-ই থাকুক না কেন, উত্তরপ্রদেশ নিয়ে অরুণ-সুষমা এমনকী আডবাণী পর্যন্ত এককাট্টা।কেন ক্ষুব্ধ আডবাণী?
বিজেপি সূত্র বলছে, কারণ শুধু কুশওয়াহা নয়। আডবাণী মোহন ভাগবতকে জানিয়েছেন, প্রথমত আরএসএস যখন ঠিক করল উমা ভারতীকে সামনে রেখে ভোট হবে, তখন তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা উচিত ছিল। এটা করা হলে দলীয় কর্মীরা অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠতেন। (উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণ নেতারা অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন, এ বার মায়াবতীর বিরুদ্ধে কোনও ব্রাহ্মণ নেতাকে তুলে ধরা উচিত ছিল। কিন্তু সে ব্যাপারেও দলে ঐকমত্য হয়নি।) দ্বিতীয়ত, বিজেপি এমন একটি দল যারা উত্তরপ্রদেশে একদা রাজ্যপাট চালিয়েছে। সেই দল এখন তৃতীয় স্থান অধিকার করার জন্য লড়ছে, এই ধারণা তৈরি হতে দেওয়াই উচিত হয়নি। কাউকে ছায়া মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরলে সেই ধারণা কাটানো যেত। তৃতীয়ত, রাজ্য নেতাদের মধ্যে রাজনাথ সিংহকে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুরলী মনোহর জোশী থেকে নরেন্দ্র মোদী, বরুণ গাঁধী থেকে কল্যাণ সিংহ সর্ব স্তরের নেতারাই আপাতত ছত্রভঙ্গ।
দুর্নীতির প্রশ্নে রাহুল গাঁধী উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রচারে আডবাণীকেই এখন কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন। তিনি বলছেন, আডবাণীর রাজনীতি দু-মুখো। এক দিকে তিনি দুর্নীতি বিরোধী রথযাত্রা করছেন, অন্য দিকে দুর্নীতির দায়ে বিতাড়িত কুশওয়াহাকে দলে নিচ্ছেন। এই অবস্থায় আডবাণী নির্বাচন কমিটির বৈঠকে নিতিনকে বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গোটা দেশ জুড়ে তিনি যখন রথযাত্রা করলেন, তখন এ হেন চরিত্রকে কোন যুক্তিতে দলে নেওয়া হল? আরএসএস নেতৃত্ব অবশ্য রাম মাধবের মতো নেতাকে দিয়ে বিবৃতি দিইয়ে বিষয়টি থেকে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ক্রমশই এটা স্পষ্ট হচ্ছে, পঞ্জাব এবং উত্তরাখণ্ডে তেমন ঝঞ্ঝাট না হলেও উত্তরপ্রদেশ নিয়ে বিজেপি রাহুগ্রস্ত।
নিতিন অবশ্য কোষাধ্যক্ষ পীযূষ গোয়েলের মতো নেতাদের মাধ্যমে আডবাণীর মানভঞ্জনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু আডবাণী শীঘ্রই গুজরাতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। চেন্নাইয়ের একটি অনুষ্ঠানেও তাঁর সঙ্গে মোদীর দেখা হওয়ার কথা। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ এখনও তাঁর সফরসূচিতে নেই। |