ভুতুমের ভাবনা
ভুতুম! নামটা নিয়ে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে ভুতুম। নামটার না আছে ওজন, না আছে দেখনদারি। ঠাকুরদা কী মনে করে যে এমন পিলেচমকানো নামখানা রেখেছিল, কে জানে!
পার্কে বেড়াতে আসা বিদ্বজ্জনেরা কিন্তু বলে, ভুতুমের ঠাকুরদার দূরদৃষ্টি যে ছিল, সেটা মানতেই হয়। চেহারার সঙ্গে এই নামটা বেশ জুতসই ভাবে দেহের সঙ্গে সেঁটে গিয়েছে। হাড় জিরজিরে শরীর। কাঠি কাঠি লম্বা হাত-পা। কালো কয়লা রং। ধড়ের ওপর মুণ্ডুটা যেন পাটকাঠির মাথায় আলু। ড্যাবড্যাবে গোল্লা চোখ। ‘ভুতু’র সঙ্গে ‘ম’ যোগে মানুষ করার খানিক চেষ্টাও বলা যায়। নইলে তাকে চিড়িয়াখানায় ভূতের একটা খাঁচায় ভরে রাখতে হত। ভুতুম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে! ছোটবেলায় কত যে সব কঠিন রোগে ধরল। মরতে মরতে কোনও রকমে বেঁচে গেছে সে। ফুটপাথের জীবনে শরীরে আর উন্নতির হাওয়াও বইল না। তাতে দুঃখ নেই। বর্ষায় একটু কষ্ট হয়। ঘর-গেরস্থে এখন বারান্দা বলে কিছু নেই। শহর কলকাতায় বাইরের বারান্দা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। ওই যখন যেমন জোটের মতো খোঁজে-খাঁজে নিজেকে ভরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে সে। আহ্, মন্ত্রীরা যদি এ সব নিয়ে একটু ভাবত। তবে গরমের রাতে পার্কই যেন তার রাজপ্রাসাদ। ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে ভূতেদের সঙ্গে সুখ-দুঃখের কথা বলে সে। নইলে তার মতো জ্যান্ত ভূতের কথা শোনার মতো মানবদরদি কে কোথায় আছে? তবে মানুষ থেকে ভূত বন্ধুই ঢের ভাল। এরা খুব বিশ্বাসী। দরদি।
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
তা ছাড়া ভুতুমকে তারা খানিকটা মান্য করে। এটা বোঝাই যায়। মানুষদের মতো ওপর চালাকি তারা কখনও করেই না। এই সব ভাল ভূতদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভুতুমেরও যেন চিন্তার শেষ নেই। কলকাতা শহরে মানুষের চাহিদাগুলো হুহু করে বাড়ছে। সারা পৃথিবীতেই বাড়ছে। ভুতুম তো এদের কাছে কবেই দূরছাই! আর ভূতেদের অবস্থা তো তার চেয়েও করুণ। বেচারারা কত চুপেচুপে থাকে। নিশ্চুপে-অন্ধকারে গোবেচারা হয়ে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু সেটুকুও যেন মানুষের সহ্য হচ্ছে না। তাদের অন্ধকার আর নিশ্চুপটুকুও কেড়ে নিচ্ছে সবাই।
কৃষ্ণপক্ষে পার্কে ভূতদের নিয়ে বড় সভা হয়ে গেল কয়েক দিন আগে। ঢ্যাঙা ভূত, ট্যারা ভূত, শুঁটকো ভূত, শাঁখচুন্নি, প্রেত্নীদের সে কী কান্না! গ্রাম-গঞ্জ থেকে উজিয়ে এসেছিল ভূতেরা। সবখানের মানুষই নাকি এখন খুবই ডেঞ্জারাস। বেপরোয়া। বড় বড় গাছ কেটে ফেলার জন্য, জলাশয়, ডোবা, ফাঁকা জায়গা না রাখার জন্য মানুষের অত্যাচারে ভূতেরা প্রায় গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এই দুঃখের কথা জানাতে গিয়ে কেউ কেউ হেঁচকি তুলে বমিও করে ফেলল। তবে তারা ভুতুমের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ, সে ছাড়া আর কেউ নেই যে, তাদের দুঃখের কথা শুনবে। ভুতুম তাদের আশ্বস্ত করে বলেছে, আমি তোমাদের উপকার করবই। ভুতুম তার পর থেকে ভেবেই চলেছে। খাওয়া-ঘুম সব যেন তার কোথায় চলে গিয়েছে। ভুতুমের অবস্থা দেখে কেউ বলল, কী ভুতুমবাবু মনখারাপ কেন? তুমি না হাসলে দেখেছি দিনটাই যে কেমন বিশ্রী হয়ে যায়।
ভুতুম মনে মনে বলল, কী করে অনেক হাসি ধরে রাখব রাতদিন সেই কথাই তো ভাবছি। অনেক ভেবে ভেবে ভুতুম একটা পথ বের করল। নদীর ধারে, পথের বাঁকে, অন্যের বাগানে যেখানেই একটু ফাঁকা পেল অমনি সেখানে চুপিচুপি কোনও না কোনও গাছ সে পুঁতে দিল। ফুল-ফল-বট-অশ্বত্থ এমন অনেক অনেক গাছ।
পরবর্তী মহাসভাতে ভুতুম দেখল ভূতেদের সে কী আনন্দ! চোখভরা জলের বদলে সেখানে ঝরে পড়ছে শুধু মহাবিস্ময়! নাকের জল, চোখের জল তুলে রেখে অনেক নাচ-গান করল তারা। ভুতুমও খুব খুশি হল। সে দিনই ভুতুম জীবনে প্রথম দারুণ স্বপ্ন দেখল। ভিক্টোরিয়ার মাথায় সুন্দরী পরীটা ঘুরছে। আরও অসংখ্য লাল-নীল-সবুজ-হলুদ-সোনালি-রূপালি পরীর দল আকাশ থেকে নেমে এসে নাচগানে মেতেছে। সমস্ত পথঘাট খুবই সুন্দর হয়ে গিয়েছে। কোথাও আর যেন কোনও দুঃখ নেই।
ঘুম ভাঙার পর অনেক দিন পরে ভুতুমের মনটা দারুণ ভাল হয়ে গেল। আরও অবাক চোখে ভুতুম দেখল রঙিন ফল-ফুলেরই আশ্চর্য হাসির আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে সারা পৃথিবী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.