|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি... |
|
শ্রেয়ার পিয়া... |
প্রেম নিয়ে খোলাখুলি শ্রেয়া ঘোষাল। ‘অপরাজিতা তুমি’র মিউজিক লঞ্চে
কলকাতায় ঝটিকা সফরে এলেন জ্বর গায়ে। হোটেলের ঘরে তাঁর মুখোমুখি নিবেদিতা দে |
পত্রিকা: এক দিকে আপনার ‘উ-লা-লা উ-লা-লা...’, অন্য দিকে ‘গভীরে যাও...’, হিন্দি ছবি ‘ডার্টি পিকচার’ আবার একই সঙ্গে বাংলা ‘২২শে শ্রাবণ’...
শ্রেয়া: ‘গভীরে যাও’ সকলে শুনছেন বুঝি?...সুপার্ব সুপার্ব!
পত্রিকা: কেন? বাংলার খবর রাখেন না?
শ্রেয়া: নিয়মিত না হলেও, কিছুটা রাখি।
পত্রিকা: আচ্ছা, যে ছবিগুলোয় গান করেন...গান হিট হয়, সেগুলো দেখেন?
শ্রেয়া: ধ্যাত, কিচ্ছু দেখা হয় না। ‘উ-লা-লা’ এত হিট, তাও ‘ডার্টি পিকচার’ দেখা হল না আজও, ‘২২শে শ্রাবণ’ও তো দেখিনি।
পত্রিকা: সে কী!
শ্রেয়া: সত্যি। নির্বিঘ্নে কখন সিনেমা দেখি জানেন? ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে। এক্কেবারে নিশ্চিন্তে। মোবাইলের অত্যাচার নেই...
পত্রিকা: অত্যাচার বলছেন কেন? আপনি নিজেই তো সারা ক্ষণ ট্যুইট করেন। এই তো দেখলাম, ‘অপরাজিতা তুমি’র মিউজিক রিলিজে কলকাতায় আসার আগে, আপনি ট্যুইটারে ছবিটার নাম লিখতে গিয়ে লিখেছেন, ‘আমি অপরাজিতা’! ছবির নাম-টামগুলোও ব্যস্ততার জন্য ভুলে যান নাকি?
শ্রেয়া: ইস্-স্-স্! আসলে জ্বরের মধ্যে লিখেছি তো, ভুল হয়ে গেছে।
পত্রিকা: ইস্-স্-স্ কথাটা আপনার মুখে শুনলেই, ‘দেবদাস’-এর ‘বৈরী পিয়া’ গানটা মনে পড়ে...
শ্রেয়া: থ্যাঙ্ক ইউ, (হেসে) কিন্তু আপনি খেয়াল করেছেন, লোকে কত রিট্যুইট করেছে? সকলে কত কনসার্নড টোনির (অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী) এই ছবিটা নিয়ে! শান্তনুদাও (মৈত্র) খু-উ-ব সুন্দর সুর করেছেন, শুনবেন... ভাল লাগবে, (একটু গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠে) ‘রূপকথারা-রা-রা’...আহা! আর মিউজিক লঞ্চে কী সুন্দর কনসার্ট হল!
পত্রিকা: একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি?
শ্রেয়া: করুন। কিন্তু প্রশ্নটা কী (হাসি)?
পত্রিকা: শোনা যায়, আমেরিকায় আপনার বয়ফ্রেন্ড রয়েছেন। তাঁর সঙ্গেই নাকি আপনার বিয়েটা পাকা?
শ্রেয়া: আমেরিকায়! আরে বাহ্, এ তো দারুণ ব্যাপার। (পাশে বসা মায়ের দিকে তাকিয়ে), তোমার তো আর কোনও চিন্তাই রইল না মা (হাসি)।
পত্রিকা: তার মানে ব্যাপারটা মানছেন না? কিন্তু শ্রেয়া ঘোষাল...সুন্দরী, অল্প বয়স... বয়ফ্রেন্ড নেই, ডেট করেন না...কেমন কেমন শোনাচ্ছে না?
শ্রেয়া: না না, মোটেও শোনাচ্ছে না (প্রচণ্ড হেসে)। সব কিছুই ঠিকঠাক আছে। কোনও গড়বড় নেই। (আবার হেসে) ২৭ বছর বয়সে নর্মালি যা-যা হওয়া উচিত, সবই হয়েছে।
পত্রিকা: তার মানে স্টেডি বয়ফ্রেন্ড আছে?
শ্রেয়া: (হাসতে হাসতে) সে রকম কাউকে পাচ্ছি না তো...
পত্রিকা: কেন! আগে তো সুরকারদের সঙ্গে গায়িকাদের প্রেম নিয়ে...
শ্রেয়া: দারুণ লটোঘটো হত তো? জানি জানি।
পত্রিকা: হুঁ...
শ্রেয়া: আজকালকার ডিরেক্টররা এত ‘ব্রোস অ্যান্ড ডুডস’, যে তাদের সঙ্গে কিচ্ছু হওয়ার নয়। সবাই যেন কেমন ভাইয়ের বন্ধু-ভাইয়ের বন্ধু টাইপ! এ সত্ত্বেও আশপাশে অনেকের প্রেম হচ্ছে, বিয়ে হচ্ছে, বাচ্চা হচ্ছে, কিন্তু আমার কপালে কিস্যু হচ্ছে না (হাসি)।
পত্রিকা: কেন, কাউকে ভাল লাগছে না?
শ্রেয়া: কত জনকে যে লেগেছে জীবনে...কী বলব...
পত্রিকা: বলুন না?
শ্রেয়া: ইস্-স্, এক প্রফেসরকে যে কী ভাল লাগত... এখন তিনি জার্মানিতে।
পত্রিকা: কী পড়াতেন?
শ্রেয়া: ইংলিশ। টুয়েল্ভ পর্যন্ত আমি সায়েন্সের স্টুডেন্ট ছিলাম। টুয়েল্ভের পরে ...তখন ‘দেবদাস’ রিলিজ হয়ে গেছে, শিফট করলাম আর্টসে। সাহিত্যের প্রতি ভালবাসা গাঢ় হল, ওই প্রফেসরের জন্যই...(হাসি)।
পত্রিকা: স্যারের নামটা জানতে পারি?
শ্রেয়া: যতীন ওয়াগলে। এখন ওঁর মেয়ে আছে, বৌ আছে, জার্মানিতে থাকেন, তাই নাম বলতে সমস্যা নেই। তবে সেই সময় সত্যিই ওঁর প্রেমে পড়েছিলাম। খুব একটা হ্যান্ডসাম ছিলেন না। দাড়ি ছিল... টিপিক্যাল আঁতেল ধরনের। বেঁটে, ...সব সময় গোল-গোল চোখ। কিন্তু ওঁর গলার ভয়েসটা এত্তো সুন্দর...ব্যক্তিত্বটাও অ-সা-ধা-র-ণ।
পত্রিকা: তার পর?
শ্রেয়া: সেই সময় যখন কোনও ই-মেল, টি-মেলই ছিল না, তখন ওঁর হট-মেল অ্যাকাউন্ট ছিল! আমাদের সঙ্গে নোটস দেওয়া-নেওয়া করতেন। খুব টেকনো স্যাভি...কু-উ-ল ছিলেন।
পত্রিকা: ব্যস! এখানেই ‘দ্য-এন্ড’!
শ্রেয়া: ওটা ছিল সম্পূর্ণ শ্রদ্ধামেশানো একটা ভালবাসা... এ ছাড়া একটা ছেলে ছিল, আমারই বয়সী...খুব ভাল লাগত। এমনিতে তো আমার তেমন হিম্মতই ছিল না...যদি কারও সঙ্গে চোখাচোখি হয়েও যেত, তো ব্যস্...খুব লাজুক ছিলাম...তো তখন একটা ছেলে ...পাঞ্জাবি...নামটা বলব না... কলেজের অন্য স্ট্রিমে ছিল, রোজ আমার জন্য কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত...বুঝতে পারতাম। দারুণ দেখতে। আর আমার ওপর নজর ছিল...ও জানত ওকে আমি ঘুরে এক বার দেখবই। প্রতি দিন নিয়ম করে এটা হত। তাই কলেজ যাওয়ার আগে খুব টেনশনে থাকতাম, যদি লেট করি...তা হলে তো আর আমাদের দেখা হবে না।
পত্রিকা: তার পর?
শ্রেয়া: ‘দেবদাস’ তত দিনে রিলিজ করে গেছে। অত হিট...একের পর এক শো... রেকর্ডিং...
পত্রিকা: প্রফেশনের চাপে প্রেম ‘যাও পাখি’, তাই তো?
শ্রেয়া: (একটু অন্যমনস্ক হয়ে)...হুঁ, আসলে হঠাৎই ম্যাচিওর হয়ে গেলে, অনেক কিছু পাল্টে যায় বোধহয়।
পত্রিকা: কলেজটা শেষ করতে পেরেছিলেন?
শ্রেয়া: হ্যাঁ-হ্যাঁ, নিয়মিত কলেজ করিনি ঠিকই, তবে রেজাল্ট দারুণ হয়েছিল। এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, বাইরে গিয়ে মাস্টার্সটা করি। তবে ইংলিশ নয়, হয়তো মিউজিক নিয়ে...
পত্রিকা: ঘুরেফিরে সেই বিদেশের কথা আসছে কিন্তু...
শ্রেয়া: তাই না? পেয়ে যাচ্ছেন লিঙ্ক...(হাসি)? তা হলে কিছু একটা...ক্যায়া করে? কুন্ডলীমে লিখা হ্যায় (হা-হা)। ...তা নয়, আসলে বিদেশ হলে কমফর্টেবলি করতে পারব, এখানে হলে একটু অসুবিধে আছে।
পত্রিকা: আচ্ছা, আপনার যা গ্ল্যামার, অনায়াসেই নায়িকা হতে পারেন। সে ক্ষেত্রেও কি কোনও অসুবিধে...
শ্রেয়া: হ্যাঁ, আছে। বলিউডের বহু বড় ব্যানার থেকে নায়িকা হওয়ার অফার আছে। তা ছাড়া, তামিল, তেলগু, মলয়ালম ছবিরও অফার আছে। কিন্তু অভিনয়ে আসতে চাইছি না এখনই।
পত্রিকা: মুম্বইয়ের অনুশক্তিনগরে যেখানে আপনি থাকেন, আমার সেখানকার এক বন্ধুর মুখে শুনেছি, আপনি নাকি সময় পেলেই কম্পাউন্ডের ভিতরের কালীমন্দিরে যান, প্রসাদ নিতে?
শ্রেয়া: হ্যাঁ, যাই। আরে ওটা তো আমাদের আড্ডার জায়গা!
পত্রিকা: হাউজিং-এ বন্ধুবান্ধব আছে? নাকি সেলিব্রিটি হওয়ায় তাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখতে পারেন না?
শ্রেয়া: আমার বেশির ভাগ বন্ধুই এখন বিদেশে। কলোনিতে দু’-এক জন শুধু রয়ে গেছে।
পত্রিকা: তাঁরা কী করেন? তাঁরাও কি গানের...
শ্রেয়া: না-না, সবাই অন্য ফিল্ডে। আইটি, ইলেকট্রনিক্স, পিএইচডি...ওরা আমার থেকে অনেক বেশি বেশি ব্রেনি (হাসি)।
পত্রিকা: আচ্ছা, থার্টি ফার্স্ট ইভ, নিউইয়ার... আপনি কি পার্টি করতে ভালবাসেন? নাকি চুপচাপ, নিজের মধ্যেই নিজেকে রাখতে ভালবাসেন?
শ্রেয়া: (একটু ভেবে) আমার মধ্যে দু’রকম সত্তাই কাজ করে। এমন নয় যে আমি সব সময় এক কোণে চুপ করে বসে আছি। কোনও কোনও দিন হয়তো হঠাৎ রেস্টলেস হয়ে পড়ি, তখন বেরিয়ে যাই বন্ধুদের সঙ্গে। হইচই করি। কিন্তু এক ঘণ্টার মধ্যেই বোর হয়ে যাই! এটা আমি আমার বাবার থেকে পেয়েছি। বাবা বলেন, মানুষের সব চেয়ে বড় বিনোদন, তার কাজ। সত্যি বলতে, আজ আমি যা কিছু, যতটুকু, তার জন্য বাবার অবদানই সব চেয়ে বেশি। আমার মনকে পারফেক্ট সুরে বেঁধেছেন কোনও সুরকার নন, আমার বাবা।
পত্রিকা: আপনাকে দেখেই মনে হয় আপনি খুব কম্পোজড...
শ্রেয়া: হইহুল্লোড় করি, কিন্তু বেশি ক্ষণ করলেই মনে হয় সময় নষ্ট করছি।
পত্রিকা: তার মানে, সেই যে সুনিধি চৌহান আর আপনার মধ্যে সফ্ট রোম্যান্টিক আর সেক্সি গানের একটা ভাগ ছিল... লতা-আশা ঘরানার মতো, সেটাই ঠিক?
শ্রেয়া: এই ভাগ কিন্তু আমি তৈরি করিনি। আমি সব ধরনের গানই গেয়েছি। এই তো এখনই চলছে, ‘চিকনি চামেলি...’ ‘অগ্নিপথ’ ছবির। তার আগেও ‘জিস্ম’-এ ‘চলো, তুমকো লে কর’ কিংবা, ‘জাদু হ্যায় নশা হ্যায়’ কিংবা ‘ওয়েলকাম’-এর ‘হোঁট রসিলে তেরে হোঁট রসিলে’...এই ভাগ আমি করিনি। করতে চাইও না।
পত্রিকা: কিন্তু সেক্সি বা আইটেম সং আপনার কেমন লাগে? যেমন ‘মুন্নি বদনাম হুয়ি’, ‘শীলা কি জওয়ানি’...
শ্রেয়া: ফান। ভালই তো!
পত্রিকা: ‘কোলাভেরি ডি’?
শ্রেয়া: মজার গান। খুব ভাল।
পত্রিকা: সত্যি?
শ্রেয়া: দেখুন, কিছু কিছু গান আছে, যা হঠাৎই পপুলার হয়ে যায়। তিন-চার মাস এমন চলে যে, কেউ অন্য গান ভাবতেও পারে না। কিন্তু সোলফুল রোম্যান্টিক গান অমন হয় না। ওগুলো কেমন জানেন? হয়তো একা বসে আছেন, গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলেন, লতাজির সেই গান, ‘আগর মুঝসে মোহাব্বত হ্যায়/মুঝে সব আপনে গম দে দো ...’ কিংবা ‘কহেনা হি ক্যায়া’... রোম্যান্টিক সং মনের গভীরে থেকে যায়...
পত্রিকা: তা হলে এত কিছুর পরেও এই পৃথিবীতে সত্যিকারের প্রেম আছে মনে হয়?
শ্রেয়া: যত দিন মানুষ থাকবে, তত দিনই সত্যি প্রেম থাকবে, অনেকটা ওই সফ্ট রোম্যান্টিক গানের মতো (হাসি)। |
|
|
|
|
|