গড়চুমুকের ‘মৃগদাব’ থেকে ৫০টি হরিণ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। জেলা বন দফতর এই মর্মে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল রাজ্য বন্য প্রাণী দফতরের কাছে। প্রস্তাবটি তারা গ্রহণ করেছে বলে জেলা বন দফতর সূত্রের খবর।
গড়চুমুক ‘মৃগদাব’-তে রয়েছে ১১৮টি হরিণ, তিনটি সজারু, একটি নীলগাই, একটি কৃষ্ণসার হরিণ এবং পাঁচটি ময়ূর। তিন বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার এটিকে ‘মিনি চিড়িয়াখানা’র মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু হরিণ রাখার ক্ষেত্রে মিনি চিড়িয়াখানায় যে নিয়ম মানা প্রয়োজন জায়গার সমস্যার জন্য তা এখানে মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না বলে জেলা বন দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন। সে কারণেই এখানে যাতে হরিণের সংখ্যা কমে যায়, সে জন্য রাজ্য বন্য প্রাণী দফতরকে অন্তত ৫০টি হরিণ সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল বলে জেলা বন দফতরের কর্তারা দাবি করেছেন।
২০০৯ সালে এখানে হরিণ ছিল ৬০টি। কিন্তু দ্রুত প্রজনন হওয়ার ফলে হরিণের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। এর ফলেই দেখা দিয়েছে জায়গার সমস্যা। বর্তমানে যে ১১৮টি হরিণ এখানে রয়েছে তারা দল বেঁধে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুরতে পারে না। অথচ এটাই হরিণদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। তা ছাড়া, এতগুলি হরিণের জন্য খাবারের সংস্থান করতেও অনেক টাকাই বেরিয়ে যায়। এই টাকার একটি অংশ দেয় জেলা পরিষদ। বাকি টাকা দেয় বন দফতর।
অপ্রতুল জায়গার জন্য হরিণগুলির সঙ্গে অন্যান্য জন্তুদের মাঝে মাঝে মারপিট বেধে যায়। বিশেষ করে এখানে যে নীলগাইটি রয়েছে সেটির সঙ্গে হরিণগুলির প্রায়ই ঝগড়া বাধে। সম্প্রতি তিনটি হরিণ খাঁচা থেকে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই তিনটি হরিণকে নীলগাইটি তাড়া করেছিল। ওই সময়েই যে ছোট দরজাটি দিয়ে বন দফতরের কর্মীরা হরিণগুলিকে খাবার দেওয়ার জন্য ঢুকছিলেন সেখান নীলগাইয়ের তাড়া খেয়ে সেই দরজা দিয়েই তীব্র গতিতে তিনটি হরিণ বাইরে বেরিয়ে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় বন দফতরের কর্মীরা তাদের অবশ্য উদ্ধার করে। বন দফতরের বক্তব্য, ছোট জায়গায় এতগুলি হরিণ থাকার ফলেই সমস্যাটি হয়েছিল। |
হরিণের সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে ওই ধরনের সমস্যা আর হবে না। একই সঙ্গে, নীলগাই এবং কৃষ্ণসার হরিণটিকেও এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
যে জমিতে মৃগদাবটি গড়ে উঠেছে সেটি অবশ্য জেলা পরিষদের। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আনন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা কিছুটা বাড়তি জায়গা দেব। তবে হরিণের সংখ্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে বাড়তি জায়গা দেওয়া হলেও ১১৮টি হরিণকে রাখা সম্ভব নয়। ফলে ৫০টি হরিণ সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা যদি করে বন দফতর সেটা সঠিক পদক্ষেপ।” মিনি চিড়িয়াখানার সঙ্গেই রয়েছে পর্যটনকেন্দ্রও। শীতকাল জুড়ে এখানে অনেকেই চড়ুইভাতি করতে আসেন। তাঁরা জোরে মাইক বাজান। ফলে হরিণ-সহ অন্যান্য জন্তুদের বেশ অসুবিধাও হয়। জেলা বনাধিকারিক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “জমি যাতে বন দফতরকে দিয়ে দেওয়া হয় সেই চেষ্টা আমাদের তরফ থেকে করা হচ্ছে। জমি পেলে আমরা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারি। এখানে একটি ‘পরিবেশবান্ধব’ পর্যটনকেন্দ্রও গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।” এ বিষয়ে আনন্দবাবু বলেন, “এ কথা ঠিক চড়ুইভাতি করতে আসা কিছু লোকজন মাত্রা রাখতে পারেন না। আমরা পরিবেশের ভারসাম্য রাখার আবেদন জানিয়ে চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজনদের মাঝে সচেতনতামূলক প্রচার করি।” জেলা পরিষদের জমি বন দফতরকে হস্তান্তরিত করার বিষয়ে তাঁরা কোনও প্রস্তাব পাননি বলে আনন্দবাবু জানিয়েছেন। |