রাজ্যস্তরে লোকায়ুক্ত গঠনের প্রশ্নে কেন্দ্রের লোকপাল বিলে আপত্তি জানাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু লোকসভায় এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষে ভোট দিয়ে যে ‘ভুল’ করেছিলেন দলের সাংসদরা, তার পুনরাবৃত্তি যাতে রাজ্যসভায় না হয় সে ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দিনভর কড়া নজর রাখলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণ থেকে সংসদ ভবন সেই হটলাইন তৈরি হল একটি মোবাইল ফোনে। যেটি কেবলই মুখ্যমন্ত্রীর ফোন ধরা এবং তাঁকে ফোন করার জন্য ব্যবহার করেন রাজ্যসভার তৃণমূল সদস্যরা।
|
গুরুতর বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ তুলে সবার মুখেই হাসি আনলেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি। বলেন, “প্রণববাবুকে যে শ্রদ্ধা করি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্ভবত দুই সভা মিলিয়ে তিনিই সব থেকে অভিজ্ঞ সাংসদ। কিন্তু ভাগ্যিস তিনি আইনজীবী নন। তাই একই বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে একই সঙ্গে তর্ক করতে পারেন না।” ট্রেজারি বেঞ্চে বসে হাসি আর চেপে রাখতে পারলেন না প্রণববাবু। হাসলেন বাকিরাও।
|
লোকপাল বিতর্কে অংশ নিয়ে সংযুক্ত জনতা সাংসদ শিবানন্দ তিওয়ারি দুর্নীতি প্রসঙ্গে কেন্দ্রের সমালোচনায় মুখর হতেই ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে বাধা পেলেন। তীব্র চিৎকার জুড়লেন সরকার পক্ষের সাংসদরা। কিন্তু শিবানন্দ পাল্টা সুর চড়ালেন না। বিনয়ের সঙ্গে জানালেন, আমি আপনাদের মতো বাগ্মী নই। বাধা দিলে ভুলে যাব কী বলছিলাম। সত্যিই তাই হল। হট্টগোল থামলে পাশে বসে থাকা দলের সাংসদকে শিবানন্দ শুধোলেন, “হ্যাঁ, কী যেন বলছিলাম? এই যা! ভুলে গেছি!” অমনি হাসির রোল উঠল সভায়!
|
বিতর্ক চলতে চলতে তখন সন্ধ্যা গড়িয়েছে। দুর্নীতি দমনে মনমোহন সরকারের প্রত্যয়ের কথা দাপটের সঙ্গেই জানান দিচ্ছিলেন সংসদ বিষয়ক প্রতি মন্ত্রী রাজীব শুক্ল। স্পেকট্রাম বিতর্ক থেকে কমনওয়েলথ গেমসে অনিয়মের অভিযোগে তাঁকে পাল্টা বিদ্ধ করতে চাইলেন বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। শুরু হল তুমুল বাগবিতণ্ডা। পাশ থেকে রবিশঙ্করকে তথ্য যোগাতে চাইছিলেন বিজেপি সাংসদ বিনয় কাটিয়ার। এ বার রাজীব বিনয়কে বললেন, “আপনি ভাই নাক গলাবেন না। এটা আমাদের নিজেদের বিষয়।” রাজীব-রবি তো সম্পর্কে শ্যালক-ভগ্নিপতি!
|
রাজ্যসভায় লোকপাল বিল পেশ হতেই, নিজের আই প্যাডে তা ডাউনলোড করে ফেলেন রাজ্যসভায় সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। তার পর সংসদ ভবনে দলীয় অফিসে বসে সংশোধনের নোটিস তৈরি করেন। সেখান থেকে আসেন সেন্ট্রাল হলে। পরে ভুলে যান কোথায় রেখেছেন আই প্যাডটি। দলীয় অফিসে না কি, সেন্ট্রাল হলে। শেষে অবশ্য খুঁজে পান। তাতে দলের আসন্ন পার্টি কংগ্রেসের নথিও লেখা রয়েছে। পরে সীতারাম সাংবাদিকদের বলেন, “ওটা হাতে পেলে আপনাদের খুশির অন্ত থাকত না। আগামী এক মাস খবর লেখার রসদ পেয়ে যেতেন।”
|
রাজ্যসভায় লোকপাল বিতর্ক শুরু হবে কি! শুরুতেই মুলতবি করতে হল সভা। কেন? রাজ্যসভার নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহই উপস্থিত নেই সভায়। বিরোধীরা হট্টগোল করায়, সভা দশ মিনিটের জন্য মুলতুবি হল। তড়িঘড়ি প্রধানমন্ত্রীকে ডাকা হল সভায়। পরে সংসদের বাইরে কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারি বলেন, “ও সব বিরোধীদের ছুতো খোঁজা মাত্র!” |