এ যেন উলটপুরাণ!
মানুষ জমি দিতে চাইছে না বলে এ রাজ্যে যখন অনেক প্রকল্পই আটকে রয়েছে, তখন কোচবিহার ২ ব্লকের কালাপানি মৌজার মানুষ শিল্পের জন্য জমি দিতে এক পায়ে খাড়া। প্রায় এক হাজার একর জমি তাঁরা সরাসরি বিক্রি করতে চান লার্সেন অ্যান্ড টুব্রোর (এলঅ্যান্ডটি) প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য। অন্তত কালাপানির বাসিন্দাদের হয়ে কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতি এমনই দাবি করে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাজেন্দ্র বৈদ দাবি করেন, বছর তিনেক আগে একটি জার্মান সংস্থা কালাপানি অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য জমি পছন্দ করে। গ্রামবাসীরা জমি দিতেও রাজি ছিলেন। পরে অবশ্য ওই প্রকল্প আর হয়নি। বৈদ বলেন, “এখন এলঅ্যান্ডটি জমি পেলে রাজ্যে বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে ইচ্ছুক। ওই খবর জেনে কালাপানির মানুষ ফের জমি বিক্রি করতে রাজি। সে কথা জানিয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়েছি।”
গত ২১ ডিসেম্বর মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ১৬০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে এলঅ্যান্ডটি। ওই প্রকল্পের জন্য তারা ১১ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করতেও প্রস্তুত। তাদের শর্ত, এক লপ্তে ১২০০ একর জমি এবং পর্যাপ্ত জল ও কয়লার জোগানের ব্যবস্থা রাজ্যকে করে দিতে হবে। রাজ্য অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। এলঅ্যান্ডটি-র ওই প্রস্তাবেই আশায় বুক বেঁধেছেন কালাপানির মানুষ। ওই এলাকার জমিতে চাষ-আবাদ বিশেষ হয় না, উল্টে খরস্রোতা তোর্সা জলে প্রতি বছরই বিঘের পর বিঘে জমি নদীর ‘পেটে’ চলে যাচ্ছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ১০০০ একর জমির মালিক প্রায় ৬০০ জন। কালপানির বাসিন্দা মুর হোসেন বলেন, “গ্রামে উন্নয়ন বলে কিছু হয়নি। ফি বছর নদী জমি গিলছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ভালই হবে।”
স্থানীয় মানুষের ওই দাবিতে সুর মিলিয়েছে তৃণমূল এবং সিপিএমও। এলাকার বাসিন্দা তথা মধুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য মুকুল বর্মন জানান, বাজারদর পেলে উন্নয়নের স্বার্থে কেউই যে তা ছাড়তে আপত্তি করবেন না সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত। ওই পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান গোকুল দাসও বলেন, “এখানে প্রচুর অনাবাদী জমি। বসতভিটেও কম। বিদ্যুৎকেন্দ্র হতেই পারে। উন্নয়নের স্বার্থে আমরাও বিরোধিতা করব
না।” জেলার উন্নয়নের স্বার্থে রাজ্য সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন কোচবিহার জেলা পরিষদের সিপিএম সভাধিপতি দিলীপ বিশ্বাসও। জেলা ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে যোগাযোগ করে তারা জেনেছে, ওই মৌজায় তিন হাজার একরের বেশি জমি রয়েছে। একাংশে বসবাস করে এক হাজার পরিবার। তার বাইরেও বিস্তীর্ণ অনাবাদি জমি পড়ে আছে। গ্রীষ্মে কিছু অংশে তরমুজ চাষ হয়। রাজ্য চাইলে তাঁরা স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে ওই জমি কেনায় সাহায্য করতে পারবেন বলেও ব্যবসায়ী সমিতির কর্তাদের দাবি। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তোর্সার জলের পাশাপাশি প্রকল্পের জন্য মেঘালয় থেকে কয়লা আনা যাবে। এখন দেখার রাজ্য কী করে। কারণ নতুন সরকারের ঘোষিত নীতি, বেসরকারি শিল্পসংস্থার জন্য সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে না। বিনিয়োগকারীকেই সরাসরি জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি কিনতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাজ্য কালাপানির জমির ব্যাপারে উৎসাহ দেখালেও এলঅ্যান্ডটি-র কর্তারা সেখানে গিয়ে সরাসরি বাজার দরে জমি কিনতে চাইবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন। |