রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর কর্মবিরতির ব্যাপারে কড়া মনোভাব নেওয়ায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নেরা মত পরিবর্তন করলেন। সোমবার বিকেলেই তুলে নেওয়া হল কর্মবিরতি। তবে হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়ানো, আলাদা ভাবে মহিলা নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ এবং জরুরি বিভাগে যথেষ্ট ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন ইন্টার্নেরা। দাবি না-মানলে ফের কর্মবিরতির পথে যাবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।
রবিবার আর জি করের জরুরি বিভাগে এক রোগিণী কর্মরত এক ইন্টার্নকে চড় মারেন বলে অভিযোগ। তার পরেই ওই রোগিণীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিরাপত্তার দাবি তুলে কর্মবিরতি শুরু করে দেন ইন্টার্নেরা। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য সরকারি ভাবে কর্মবিরতির কথা স্বীকার করেননি। হাসপাতাল পরিষেবায় কোনও অসুবিধার কথাও উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তবে আদালত সোমবার অভিযুক্ত মহিলাকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পরেও দুপুর পর্যন্ত ওই হাসপাতালের ইন্টার্নেরা কাজ না-করার সিদ্ধান্তেই অনড় ছিলেন।
মাসখানেক আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অনেকটা এই ধরনের ঘটনায় টানা কয়েক দিন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল। সেই টাটকা নজির সামনে থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন আর জি কর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়। হাসপাতালে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কর্মবিরতি যাতে অভ্যাসে পরিণত হয়ে না-পড়ে, সেই জন্য কড়া হওয়ার সিদ্ধান্তই নেয় স্বাস্থ্য দফতর।
আর জি করের ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্তারা ইন্টার্নদের জানিয়ে দেন, কাজ শুরু না-করলে কড়া ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কেউই অপরিহার্য নয়, সেটা মনে রাখতে হবে। ইন্টার্নদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আমরা সব সময়েই ভাবি। তাঁদের প্রতি স্বাস্থ্য দফতর সহানুভূতিশীল। তা বলে কথায় কথায় ধর্মঘট বা কর্মবিরতিকে কখনওই সমর্থন করা হবে না।” আর জি কর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষও জানিয়ে দেন, ইন্টার্নদের অভিযোগ পাওয়ার পরেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা। অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করা হয়েছে। হাসপাতালে নিরাপত্তা কী ভাবে আরও বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে বৈঠকও হয়েছে। এর পরে কর্মবিরতি অর্থহীন।
আর জি করের ডেপুটি সুপার সিদ্ধার্থ নিয়োগী জানান, হাসপাতালে নিরাপত্তারক্ষী আগের তুলনায় অনেক বাড়ানো হয়েছে। হাসপাতালের জন্য আলাদা যে-ফাঁড়ি আছে, সেখানে পুলিশকর্মী আরও বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও যে এই ধরনের ঘটনা (চিকিৎসক-নিগ্রহ) কখনও ঘটবে না, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। “কারণ কখন কোন রোগী চিকিৎসকের উপরে চড়াও হবেন, সেটা তাঁর মানসিক অবস্থার উপরে নির্ভর করে। চিকিৎসকদের সতর্ক থাকতে হবে, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। আর কর্তব্য পালন করে যেতে হবে,” বলেছেন ডেপুটি সুপার সিদ্ধার্থবাবু। |