উপাচার্যদের কাজে ক্ষোভ |
দুই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে তদন্তকারী দল |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নদিয়ার বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কাজে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রদের একাংশ ক্ষুব্ধ। এঁরা মূলত তৃণমূলের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়েই অশান্তি চলছে। অভিযোগ, উপাচার্য চলছেন সিপিএমের ইশারায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-বিধি মানছেন না। স্বজনপোষণ ও আর্থিক অনিয়ম করছেন।
দুই উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে-সব অভিযোগ উঠেছে, প্রাথমিক ভাবে তার কিছুটা সত্যতা আছে বলে মনে করছে কৃষি দফতর। কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সোমবার জানান, অভিযোগগুলি নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে আগামী মাসে দু’টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েই তদন্তকারী দল পাঠানো হচ্ছে। ওই দলের নেতৃত্ব দেবেন রাজ্যের কৃষিসচিব হৃদেশ মোহন। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, তদন্ত-রিপোর্ট পাওয়ার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অশান্তি চলছে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও। সেখানে লাগাতার অচলাবস্থা চলছে।
|
|
কোচবিহারে স্কুলের অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল। |
নদিয়ার মোহনপুরে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ। আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই শিক্ষকেরা। একই সঙ্গে উপাচার্যের ঘরের সামনে তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ করছেন। রোগতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক শ্রীকান্ত দাস বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী সিনিয়র প্রফেসরকে বাদ দিয়ে উপাচার্য নিজের পছন্দমতো অধ্যাপককে বসিয়েছেন ডাইরেক্টর অব রিসার্চ পদে। বিষয়টি আমরা রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর নজরে এনেছি।”
শ্রীকান্তবাবুদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠন-পাঠন নিয়মিতই চলছে। তাঁরা ক্লাসের ক্ষতি না-করে অবস্থান-বিক্ষোভ করছেন। উপাচার্য সরোজকুমার সান্যাল অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “ওঁরা মিথ্যে অভিযোগ করছেন। এ-রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। অস্থায়ী ডিরেক্টর অব রিসার্চ ও ডিন পদে নিয়োগ করার অধিকার উপাচার্যের আছে।”
সোমবার কোচবিহারে জেনকিন্স স্কুলে সার্ধ শতবর্ষ উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন উত্তরবঙ্গের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে বলেছেন, “আমার মনে হয়, দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়েই কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।” ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামী কাল, বুধবার কলকাতায় উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর অফিসে ওই বৈঠক হবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবও। এ দিন গৌতমবাবু বৈঠকের আগে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত কর্মচারী সমিতিকে আন্দোলন প্রত্যাহার করার অনুরোধও করেন। সমিতি মন্ত্রীর আর্জি মেনে সব বিভাগ খোলা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন। তবে উপাচার্য অরুণাভ বসুমজুমদার যাতে অফিসে ঢুকতে না-পারেন, সে জন্য প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান-বিক্ষোভে অনড় সমিতি। |
|
কোচবিহার রাজবাড়িতে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। |
প্রায় দু’মাস উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অফিসে ঢুকতে পারছেন না। সম্প্রতি উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন রাজ্যপাল। তার পরে সমিতি আন্দোলন তীব্র করেছে। উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও উপাচার্য অসিত দাসকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষক পরিষদ। এ দিন কোচবিহার সার্কিট হাউসে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারী সমিতির বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। টিচার্স কাউন্সিলের তরফে তপন হাত বলেন, “কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান উপাচার্য নিয়ম বহির্ভূত ভাবে বহু কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও হয়েছিল। পিএইচডির আবেদন জমা নেওয়া নিয়েও উপাচার্য গড়িমসি করছেন। উপাচার্যকে অপসারণ করে সমস্ত কিছু নিয়ে ব্যবস্থা নিতে রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছি।” কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সংসদের সভাপতি তপন সাহা জানান, তাঁরাও উপাচার্যের অপসারণ চেয়েছেন।
|
সোমবার ছবি তুলেছেন হিমাংশুরঞ্জন দেব। |
|