কোনও প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘আমাদের বিকল্প কাজ দিতে হবে’। কোনওটায় ‘মদ ব্যবসায়ীদের জন্য শীঘ্র পুনর্বাসনের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে’। আবার কোনওটায়, ‘পুলিশি জুলুম বন্ধ করতে হবে’। এমনই প্ল্যাকার্ড নিয়ে সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের পূর্ব পাঁচগাছিয়ায় মিছিল করেছেন চোলাই কারবারের সঙ্গে যুক্ত প্রায় শ’পাঁচেক পুরুষ-মহিলা। তাঁদের বক্তব্য, সংগ্রামপুরের বিষমদ-কাণ্ডে ১৭২ জনের মৃত্যুর পরে এক দিকে ‘পুলিশি জুলুম’ বেড়েছে। অন্য দিকে, চোলাই চেয়ে বাড়ি বাড়ি ‘হামলা’ করছে কিছু লোক। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প পেশার সন্ধান না মিললে ‘টেঁকাই দায়’ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের পক্ষে।
প্রশাসনের হিসেবে শুধু পূর্ব পাঁচগাছিয়া এলাকাতেই শ’পাঁচেক চোলাই-ভাটি রয়েছে। ভাটিপিছু অন্তত জনা কুড়ি শ্রমিক কাজ করেন। সেই হিসেবে ওই এলাকায় চোলাই ব্যবসায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে জড়িতের সংখ্যা খুব কম নয়। কিন্তু সংগ্রামপুরের ঘটনার পরে রাজ্যের প্রায় সর্বত্র চোলাই কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশি তৎপরতা বেড়েছে। তাতেই ‘সুখের দিন’ গিয়েছে চোলাই কারবারে যুক্তদের। |
দিন কয়েক আগে মগরাহাট এলাকায় ‘জীবন সংগ্রাম কমিটি’ গড়ে অবৈধ চোলাইয়ের কারবার ছেড়ে এলে পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক প্যাকেজের দাবিতে পোস্টার সাঁটিয়েছিলেন চোলাই কারবারিরা। এক ধাপ এগিয়ে হুগলির তারকেশ্বরের চোলাই কারবারিরা প্রশাসনের কাছে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ দাবি করেছিলেন। পূর্ব পাঁচগাছিয়ায় এ দিন যাঁরা মিছিলে হেঁটেছেন, সেই নির্মলা মিস্ত্রি, অর্জুন মণ্ডলেরা জানালেন, তাঁরা চোলাই ভাটিতে কাজ করে দৈনিক ১২০ টাকা করে মজুরি পেতেন। তাঁদের বক্তব্য, “এখন দিনের বেলা পুলিশ এসে ভাটি ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, রোজগার বন্ধ। আবার রাতে লোকজন চোলাই চেয়ে বাড়িতে উৎপাত করছে। তাই আতঙ্কে আছি। ” মিছিলে সামিল হওয়া ভাটি-শ্রমিক ফতেমা বেওয়ার দাবি, “সরকার আমাদের জন্য যেন দ্রুত অন্য কাজ দেওয়ার বন্দোবস্ত করে।” ভাটি-মালিক বুনো মণ্ডলের বক্তব্য, “আমরা অনেকেই চোলাইয়ের ব্যবসা ছেড়ে সুস্থ জীবনে ফিরতে চাই। কিন্তু কবে, কী ভাবে তা সম্ভব হবে বুঝতে পারছি না। সরকার তো কিছু বলছে না।”
পুলিশ ও আবগারি দফতরের তরফে চোলাই-বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি ‘সচেতনতা’ বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে মগরাহাট, জয়নগর, মন্দিরবাজারের বহু এলাকায়। চোলাই খাওয়া বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছে গ্রাহকদের। অবৈধ কারবারিরা চোলাই ব্যবসা চালিয়ে গেলে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের সাঁটানো পোস্টারে। জেলার পুলিশ সুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনার বক্তব্য, “চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান লাগাতার চলবে। তবে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ জুলুম করছে না।” চোলাই কারবারিরা যাতে অন্য কোনও ব্যবসা করতে পারেন, সে জন্য সরকারি ভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে শুক্রবার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেছেন, “চোলাই কারবারিদের পুনর্বাসন বা তাঁদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনও নির্দেশ এখনও আসেনি।” |