|
|
|
|
|
জেলা সম্মেলনের চাঁদা
নিয়ে সংশয় সিপিএমে
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলন। জেলা সম্মেলনের খরচ তুলতে নতুন বছরের গোড়া থেকেই অর্থ সংগ্রহ শুরু করছে সিপিএম। তবে পরিস্থিতি যা তাতে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা পার্টি সদস্যদের সবার কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করা যাবে কি না, সে নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে। ইতিমধ্যেই সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গড়া হয়েছে প্রস্তুতি সাব-কমিটি। দলীয় সূত্রে খবর, ক’দিন আগে সিপিএমের জেলা কার্যালয়ে ওই কমিটির বৈঠকে জেলা সম্পাদক দীপক সরকার নিজে চাঁদার পরিমাণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। বেশ কয়েক জন জেলা ও জোনাল নেতার উপস্থিতিতে তিনি জানান, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ তো চলবেই। প্রতি বারই তা হয়। কিন্তু, আগে পার্টি সদস্যরা নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিন। নিজেদের চাঁদা না-দিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া যাবেই বা কী ভাবে! দলের একাংশ মনে করছেন, এ বার পার্টি সদস্যদের কাছ থেকেও ‘প্রাপ্য’ চাঁদা আদায় করা যাবে না বুঝেই প্রস্তুতি কমিটির বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন জেলা সম্পাদক।
এ বারের জেলা সম্মেলনে প্রায় ৬৫০ জন প্রতিনিধি যোগ দেবেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। সম্মেলন চলবে ৩০ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সাধারণত প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্য দিয়েই জেলা সম্মেলন শুরু হয়। কিন্তু এ বার তা হচ্ছে না। সম্মেলনের শেষ দিন অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি মেদিনীপুর কলেজ মাঠে প্রকাশ্য সমাবেশ হবে। উপস্থিত থাকবেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কেন শুরুর বদলে সম্মেলনের শেষে সমাবেশের সিদ্ধান্ত? জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন, “বুদ্ধদেববাবু ৩০ তারিখ আসতে পারতেন না। তাঁর অন্য কাজ রয়েছে। তাই শেষ দিনে প্রকাশ্য সমাবেশ হবে।” প্রতি বছরের মতো এ বারও সম্মেলন সফল করতে প্রস্তুতি, অর্থ, খাদ্য, সাজসজ্জা, প্রচার, স্বেচ্ছাসেবক, সাংস্কৃতিক-সহ বিভিন্ন সাব-কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ওই সদস্য জানান, তিন দিনের এই সম্মেলনে কমপক্ষে ৯ লক্ষ টাকা খরচ হবে। খরচ বাড়তেও পারে। কিন্তু, এই টাকা উঠবে কী ভাবে? দলীয় সূত্রে খবর, এর আগে খরচের বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই হত না। সম্মেলনের জন্য চাঁদা দিতে ‘স্বেচ্ছায় আগ্রহ’ দেখাতেন অনেকে। কিন্তু, এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম। পার্টি আর ক্ষমতায় নেই। নানা সুযোগের আশায় এত দিনের স্বেচ্ছার চাঁদা-দাতারা এ বার আর মুক্তহস্ত নন।
খোদ পার্টি সদস্যদের কাছ থেকেই সে ভাবে চাঁদা আদায় হচ্ছে না। জেলায় সিপিএমের প্রায় ৩৩ হাজার সদস্য রয়েছেন। কিন্তু একটা বড় অংশই এখন নিষ্ক্রিয়। পরিস্থিতি দেখে এ বার রাস্তায় নেমে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্থ সংগ্রহেও জোর দেওয়া হচ্ছে। দলের জেলা কমিটির এক নেতার কথায়, “এর ফলে যেমন অর্থ সংগ্রহ হবে, তেমন জনসংযোগও বাড়বে।” মেদিনীপুর শহরে অর্থ-সংগ্রহ অভিযানে এক দিন জেলা সম্পাদক নিজেও উপস্থিত থাকবেন। দলীয় সূত্রে খবর, সুষ্ঠু ভাবে সম্মেলন সম্পন্ন করতে পার্টি সদস্যদের যত দ্রুত সম্ভব ‘প্রাপ্য’ চাঁদা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত যাঁদের মাসিক আয়, তাঁদের ১০০ টাকা করে দিতে হবে। ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত যাঁদের মাসিক আয়, তাঁদের ২০০ টাকা করে দিতে হবে। আর বাড়ি বাড়ি অর্থ সংগ্রহের জন্য ১০ টাকা, ২০ টাকার কুপন ছাপানো হয়েছে। ৩ জানুয়ারি থেকে অর্থ সংগ্রহ শুরু হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আধিপত্য ছিল সিপিএমের। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। গত বিধানসভা ভোটে এই আধিপত্যে ভাগ বসায় তৃণমূল। রাজ্যেও পালাবদল ঘটে যায়। কেশপুর, গড়বেতা থেকে নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল---সর্বত্রই সিপিএমের সংগঠন দুর্বল হতে শুরু করে। একাংশ দলীয় কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া হন। একাংশ আবার নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতেই চলছে লোকাল ও জোনাল কমিটির সম্মেলন। ‘প্রতিকূল অবস্থা’র জন্য এ বার জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় লোকাল কমিটির সম্মেলন করাই যায়নি। ওই সব কমিটির সম্মেলন ‘খাতায়-কলমে’ মেদিনীপুর শহরে হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জেলা সম্মেলন সুসম্পন্ন করতে তৎপরতা শুরু হয়েছে সিপিএমে। দলের জেলা সম্পাদক দীপকবাবু জেলা সম্মেলনের চাঁদা নিয়ে পার্টি-কর্মীদের একাংশের ‘অনীহা’ প্রসঙ্গে অবশ্য প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
|
|
|
|
|
|