পিটিয়ে মেরে কাটা হল দা দিয়ে
‘সক্ষমতা’ বাড়াবে বিশ্বাসে চিতাবাঘ খেলেন গ্রামবাসীরা
বাঘ মানুষ খায় সে তো খবর নয়। কিন্তু যখন সেই বাঘের মাংসের জন্যই তথাকথিত সভ্য, সাক্ষর (শিক্ষিত শব্দটি ব্যবহার করতে বাধছে) মানুষ কাড়াকাড়ি করে তখন তা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী অঘটন। বাক্সার গোরেশ্বর এলাকার বাসিন্দারা অঘটনই ঘটিয়েছে। আধ ঘণ্টার মধ্যে একটি পূর্ণ বয়স্ক চিতাবাঘের মাংস বিলি হয়ে গেল গ্রামবাসীদের মধ্যে। সেই মাংস রান্না করে খেল তারা। হাতি খাওয়ার ঘটনা অসম-নাগাল্যান্ড সীমানায় প্রায়ই ঘটে। গন্ডার মেরেও খেয়ে ফেলেছে গ্রামবাসীরা। সে সব প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকার ঘটনা। কিন্তু চিতাবাঘ খাওয়া কার্যত নজিরবিহীন। এই ঘটনার নৃশংসতায় বনদফতর থেকে শুরু করে, পশুপ্রেমী সংগঠনগুলিও হতবাক। সভ্য সমাজে যেখানে বাঘ ও বন্যপ্রাণী বাঁচাবার জন্য বিস্তর কাঠখড় পোড়ানো হচ্ছে, যে রাজ্যের দুটি অরণ্য বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র হিসাবে স্বীকৃতসেখানেই প্রকাশ্যে ছাত্র, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবীরা সোল্লাসে চিতাবাঘ খাচ্ছে!
বিলি করা হচ্ছে চিতাবাঘের মাংস। উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।
ঘটনার শুরু গত কাল সকালে। বাক্সার গোরেশ্বর থানা এলাকার বরনগর-বাঁশবাড়ি গ্রামে ঢুকে পড়ে একটি চিতাবাঘ। গ্রামের এক কোণে, ছায়ায় বসে জিরোচ্ছিল সে। জংগ্রেশ্বর বড়ো নামে এক ব্যক্তি বনবিড়াল ভেবে লাঠি দিয়ে চিতাবাঘটিকে খোঁচা মারে। খেপে গিয়ে জংগ্রেশ্বরকে জখম করে রাস্তায় বেরিয়ে আসে চিতাবাঘটি। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পরে গাছবাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে লুকিয়ে পড়ে সে।
ততক্ষণে বাঘ বেরোবার খবর রটে গিয়েছে। হাতের কাছে যে যা পেয়েছে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে বাঘ ধরতে। বাঘের সন্ধান মিলতেই তাকে ঘিরে ফেলা হয়। পালাবার পথ না পেয়ে সামনে থাকা এক গ্রামবাসীকে চিতাবাঘটি জখম করে। এরপর চারপাশ থেকে আক্রমণ শুরু হয়। আঘাতে জর্জরিত হয়ে চিতাবাঘটি দুর্গা কলিতা নামে এক যুবকের মাথায় থাবা মেরে, কামড়ে, তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরে। এর পর শাবল, কুড়ুল, বাঁশের আঘাতে চিতাবাঘটির মৃত্যু হয়।
বাঘ মেরেই ক্ষান্ত হননি গ্রামবাসীরা। দা এনে তার মাংস কাটা শুরু হয়। আশপাশের সব মানুষের মধ্যে মাংসর ভাগ নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে। এতে শারীরিক সক্ষমতা বাড়বে এই বিশ্বাসে সাক্ষর, কেতাদুরস্ত যুবক, ছাত্ররাও পানপাতা, কলাপাতা নিয়ে চিতাবাঘের মাংস সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে যায়। আধ ঘণ্টার মধ্যে চিতাবাঘের মাংস, নখ, দাঁত সব উধাও।
ঘটনার নিন্দা করে বাঘ বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহমেদ বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যে রাজ্যে বাঘ-চিতাবাঘ বাঁচাতে আমরা এত খাটছি সেখানেই এমন ধরণের নৃশংস ঘটনা ভাবা যায় না। পুলিশ ও বনবিভাগের সমালোচনা করাই যায়। কিন্তু গ্রামবাসীদের মধ্যে এমন পাশবিক প্রবৃত্তি থাকলে বাঘ হত্যা ঠেকানো মুশকিল।” ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার ট্রাস্টি পরিমল ভট্টাচার্যের কথায়, শীতকাল, মদের প্রভাব ও উৎসবের মেজাজ মিলিয়ে বছরের এই সময়টায় প্রাণী হত্যা বেড়ে যায়। জঙ্গলের হরিণ-শুয়োর খাওয়া চালু ঘটনা। রাজ্যে হাতি খাওয়া বাড়ছে। গন্ডারকেও ছাড়া হচ্ছে না। কিন্তু চিতাবাঘ! মানসিকতায় বদল না এলে পাহারা দিয়ে কী লাভ? তিনি বলেন, “একবার নারায়ণপুর এলাকার মানুষ শিয়াল খাওয়া শুরু করলেন। প্রচার হয়ে গেল এতে পায়ের ব্যথা কমে। শিয়াল বাঁচাতে আমরা লিফলেট বিলি করে উল্টো প্রচার চালালাম, শিয়াল খেলে ক্যানসার হয়। তাতে ফল হয়েছিল। লাগাতার প্রচারের পরে পরিস্থিতি বদলেছে। কিন্তু গত কালের ঘটনা ফের চমকে দিল।” বনবিভাগ জানিয়েছে, বাঁশবাড়ি এলাকার গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সূত্র থেকে ‘বাঘ-খেকো’দের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেফতার করা হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.