পরিস্থিতি জটিলতর হচ্ছে পাকিস্তানে। সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সচিবকে ‘শো-কজ’ করে সেনার সঙ্গে বিরোধ ফের সামনে নিয়ে এল গিলানি সরকার।
অভিযোগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী চৌধুরি আহমেদ মুখতারের সম্মতি ছাড়াই পাক সুপ্রিম কোর্টে মেমোগেট সংক্রান্ত হলফনামা পেশ করেছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব খালিদ নইম লোদি। সেনাপ্রধান কিয়ানির ঘনিষ্ঠ লোদির পেশ করা ওই হলফনামায় বলা হয়, সেনা এবং আইএসআইয়ের দৈনিক কাজকর্মে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণ নেই। এই হলফনামায় প্রত্যাশিত ভাবেই বিব্রত হয় সরকার। তাঁকে পরে ‘সরকারপন্থী’ হলফনামা পেশ করতে বলা হলে রাজি হননি লোদি। এই কারণে তাঁকে শো-কজ করা হয়েছে। তবে এখনই বরখাস্ত করার কথা ভাবা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী আসিফ রাজা গিলানি। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ধারণা, গিলানি মুখে লোদিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার কথা বললেও সেনার সঙ্গে চূড়ান্ত সংঘাত এড়াতেই তাঁকে বরখাস্ত করবেন না।
মেমোগেট কেলেঙ্কারির পর থেকেই পাক সেনা এবং সরকারের বিরোধ ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করে। দেশে সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করে মার্কিন সেনার সাহায্য চেয়ে একটি মেমো পাঠিয়েছিল পাক সরকার। এই তথ্য পাক সরকার মিথ্যা বলে দাবি করলেও সেনার অভিযোগ, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে সরকার। তার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী গিলানি বা প্রেসিডেন্ট জারদারি পাক সেনার নাম না করে সমালোচনা করছেন। এই মেমোগেট মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গেও সম্ভাব্য সংঘাতের পথে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জারদারি। এই মামলায় আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও জারদারি হলফনামা দেবেন না বলে বলে তাঁর সহকারী রাজনৈতিক সচিব আজ জানান। প্রেসিডেন্ট পক্ষের দাবি, সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা না দেওয়া এবং হাজির না হওয়ার স্বাধীনতা প্রেসিডেন্টের আছে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এমন কোনও ছাড় প্রেসিডেন্ট পেতে পারেন না।
এই বিরোধের পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে, পাক সরকার আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ সুজা কামাল পাশা এবং সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কিয়ানিকে সরিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবছে। দু’জনকেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ওই পদে রাখা হয়েছে। এবং প্রধানমন্ত্রী গিলানিও দু’জনকেই সরাতে পারেন। আমেরিকার প্রাক্তন সিআইএ কর্তা ব্রুস রিডেল এবং প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেমস জোনস পাকিস্তানের নেতৃত্বকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা মার্কিন গোয়েন্দা নেতৃত্বকেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত সমর্থনের পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন। তবে পাক প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল পরামর্শ দিচ্ছে, যাতে এই ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়।
তবে প্রশ্ন হল, সরকার এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে সেনাবাহিনী কী করতে পারে? সেনাসূত্র উদ্ধৃত করে একটি পাক পত্রিকা দাবি করছে, সেনা এ বার অভ্যুত্থানের পথে না গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কিয়ানি বা পাশাকে বরখাস্ত করা হলে সুপ্রিম কোর্ট তা বাতিল করবে। সেনাপ্রধান কিয়ানি ইতিমধ্যেই সেনার পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে এ ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। |