বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র ‘সদস্য হওয়ায়’ বিধানসভা ভোটের পরে স্কুলে ঢুকতে ‘বাধা’ দেওয়া হচ্ছিল দুই শিক্ষক বাবা-ছেলেকে। প্রায় সাত মাস পরে সোমবার স্কুলে গেলে তৃণমূলের লোকজন তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। বর্ধমানের রায়না গোলগ্রাম গোলাম ইমাম হাইস্কুলের ওই ঘটনায় ঘণ্টা খুলে ‘পেটানো হয়’ ছেলেকে। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “মারধর নয়, ওঁদের ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে। তবে ঘটনায় জড়িতদের খোঁজ চলছে।”
নাসের আলি মল্লিক ও তাঁর ছেলে নুর মহম্মদ মল্লিক ওই স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা এবিটিএ-র সক্রিয় সদস্য বলে ভোটের পর থেকে কাজে যোগ দিতে ‘বাধা’ দিচ্ছিলেন স্থানীয় কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক। এ নিয়ে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী-সহ প্রশাসনের নানা স্তরে অভিযোগও জানানো হয়েছিল। কিন্তু একমাত্র রাজ্যপালের দফতর থেকেই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়। অবশেষে তাঁরা ‘মেডিক্যাল লিভ’ নেন। |
প্রহৃত দুই শিক্ষক। বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে। ছবি: উদিত সিংহ। |
নাসের আলি জানান, স্কুল পরিদর্শকের নির্দেশেই এ দিন তাঁরা স্কুলে যোগ দিতে যান। তাঁর অভিযোগ, “ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ঘরে হাজিরা খাতায় সই করার পরেই এক দল তৃণমূলের লোক আমাদের উপরে চড়াও হয়। আমার চশমা ভেঙে দেয়। ছেলেকে ওরা স্কুলের ঘণ্টা খুলে পেটায়।” নুর মহম্মদকে বর্ধমান শহরের কাছে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। নাসের আলির দাবি, স্কুলে যোগ দেওয়ার আগে নিরাপত্তার জন্য তাঁরা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন জানালেও, তা দেওয়া হয়নি। পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, “শুনেছিলাম, ওই দু’জন স্কুলে ঢুকতে পারছেন না। কিন্তু আচমকা এ দিন তাঁরা স্কুলে যাবেন, তা জানা ছিল না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, “কিছু লোক স্কুলে ঢুকে ওই দু’জনকে মারতে শুরু করে। কয়েকজন শিক্ষক থামতে অনুরোধ করলেও, তারা পাত্তা দেয়নি।” ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোরবান আলি খান শুধু বলেন, “আমরা আতঙ্কে রয়েছি। কেউ ওই দু’জনের পাশে দাঁড়ালে তাঁকেও মারধর করা হতে পারে।”
সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য তথা বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ সাইদুল হকের অভিযোগ, “এবিটিএ করেন বলেই ওই দু’জনকে স্কুলে ঢুকতে দিচ্ছে না তৃণমূলের লোকজন। বারবার জানানো সত্ত্বেও প্রশাসন নিষ্ক্রিয়। এ দিন তো ওঁদের মারধরও করা হল! কোন রাজত্বে রয়েছি!’’ তৃণমূলের শিক্ষা সেলের বর্ধমান জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষাল অবশ্য বলেন, “সম্ভবত আমাদের কেউ এই ঘটনায় জড়িত নন। যদি থাকেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তাঁর পাল্টা দাবি, “ওই দুই শিক্ষক দুর্নীতিপরায়ণ। তাই এলাকার মানুষ স্কুলে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিলেন।” জেলা স্কুল পরিদর্শক আব্দুল হাই বলেন, “ওঁদের ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছিল। বেতন পেতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই স্কুলে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু এমন হবে বুঝিনি!” |