নব্বইয়ে রমাপদ চৌধুরী
আড়ালে
ময়দানে অলস ভঙ্গিতে সিগারেট ধরিয়েছেন ওই যে মানুষটি তাঁর বয়স ২৮ ডিসেম্বর নব্বই ছোঁবে। নিজেকে সরিয়ে রাখায়, আড়ালে রাখাতেই তাঁর আনন্দ। এ পর্যন্ত শুধু লিখেছেন আর সম্পাদনা করেছেন পত্রিকা দফতরে। সভাসমিতিতে যাননি বললেই চলে। তাঁর মুখ ক্বচিৎ খুলেছে মিডিয়ায়। প্রায় দেড়শো ছোটগল্প আর পঞ্চাশের উপর উপন্যাসের একটি সাহিত্যসমগ্র গড়ে তুলে লেখা থেকে এক রকম অবসর নিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগেই। মানুষটির নাম রমাপদ চৌধুরী। মধ্যবিত্ত জীবনের ‘উদয়াস্ত’-এর গল্প যাঁর তিন কি চার নম্বর ছোটগল্প তিনি পরিণত বয়সে, লেখক হিসেবে যখন প্রতিষ্ঠিত তখনও ‘ঋষি, দস্যু ও এক কিশোর বালক’ নামের এক আত্মলেখনকথায় লিখেছেন, ‘আজ এতকাল বাদে পিছন ফিরে তাকালেই একটি গল্প আমাকে বিস্মিত করে।
ছবি: হিমানীশ গোস্বামী রেখাচিত্র: অনুপ রায়।
সে গল্পের নাম ‘উদয়াস্ত’,... সতেরো আঠারো বছর বয়সে লেখা। সেই গল্পহীন জীবনের গল্প, সেই রিক্তপ্রসাধন সহজ সরল ভাষা নিয়েই তো আমি যাত্রা শুরু করেছিলাম। সেখানেই আবার পৌঁছতে চাইছি এত আঁকাবাঁকা পথ পার হয়ে এসে।’ খড়গপুরে তাঁর কৈশোর কেটেছে, পিতার চাকরিসূত্রে স্কুলজীবনেই ঘুরে নিতে পেরেছেন প্রায় ‘সারা ভারতবর্ষ’। সেই অভিজ্ঞতার পুঁজি নিয়ে বন্ধুদের তাগিদে প্রথম লেখাটি লিখে ফেলা। বাংলা সাহিত্যে ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তটি ঘটেছিল ওয়াইএমসিএ-র পাবলিক রেস্তোরাঁয়। চার পাতার ছোট সে গল্পের নাম ‘ট্র্যাজেডি’। তার পরে বনপলাশীর পদাবলী, লালবাঈ, দরবারী, লাটুয়া ওঝার কাহিনী কিংবা দ্বীপের নাম টিয়ারং-এর মতো ব্যতিক্রম সত্ত্বেও এই কলকাতার গল্পই লিখেছেন তিনি, মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প। আর তাই ১৯৭০-এর দশকে নতুন রাজনৈতিক দর্শনের মুখোমুখি বাঙালি সমাজজীবন নিয়ে তৈরি হওয়া চলচ্চিত্রের আখ্যানকার হয়ে ওঠেন তিনি। যেমন মৃণাল সেনের ‘খারিজ’ কিংবা ‘একদিন অচানক’। কিন্তু এ শহর কি ভুলে গেল তাঁকে? নইলে পঁচিশ থেকে পঁচাত্তর উদ্যাপনের এই হরেকরকমবায় রমাপদ চৌধুরীর নব্বই বছরের উদ্যাপন কই!

প্রয়াণ
জীবৎকালের পুরো সময়টাই সমাজসেবা ও গবেষণার কাজে লাগিয়েছিলেন সদ্যপ্রয়াত গোপালচন্দ্র রায়। ১৩২২ বঙ্গাব্দের ৩০ চৈত্র হাওড়ার আমতা থানার আনুলিয়ায় জন্ম। পিতা তারিণীচরণ, মা নগেন্দ্রবালা। আমতা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, তার পরে কলকাতায় এসে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বি এ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করে কিছু কাল যুক্ত থেকেছেন গ্রামোন্নয়নের কাজে| প্রথম জীবনে ‘প্রত্যহ’ ও ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় চাকরির সুবাদে লেখালিখির শুরু। আর গবেষণার সূচনা ১৯৫৬ থেকে নৈহাটির ঋষি বঙ্কিম গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালার অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করতে করতে। নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দের অপ্রকাশিত চিঠি বা অজানা রচনা। এই তিন জনকে নিয়ে কাজ করলেও গোপালচন্দ্রের পরিচিতি মূলত শরৎ-গবেষক হিসেবেই। শরৎচন্দ্রের জীবনের নানা দিক আলোকিত করা ছাড়াও, শরৎ-সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র ও ঘটনাবলির সত্যাসত্যও নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন তিনি। পেয়েছেন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মান। লিখেছেন ৫০টির মতো বই, আর বহু প্রবন্ধ।

ক্যালেন্ডারে
ছবি হয়ে থাকছেন সন্দীপ রায়ের ফেলুদা-তোপসে-জটায়ু। বোম্বাইয়ের বোম্বেটে, কৈলাসে কেলেঙ্কারি, টিনটোরেটোর যিশু, গোরস্থানে সাবধান এবং চলতি রয়েল বেঙ্গল রহস্য ফেলুদার পাঞ্চ হীরক সেনের ক্যামেরায়। সৌজন্য বাঞ্ছারাম-এর ক্যালেন্ডার। সন্দীপ রায়ের ফেলুদা-ছবিগুলির হয়ে ওঠার ছবি নিয়েই ২০১২-র ক্যালেন্ডার তৈরি করেছে বাঞ্ছারাম। ৩০ তারিখ লেক ক্লাবে ক্যালেন্ডারটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করবেন সন্দীপ রায়। থাকবে পুরো ফেলুদা-টিম। সঙ্গে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত রয়েল বেঙ্গল রহস্য-র এক শুটিং-মুহূর্ত।

স্মরণ
মাত্র আট বছর বয়সে, ১৯৬২-তে, শম্ভু মিত্রের নির্দেশনায় বহুরূপী-র ‘পুতুলখেলা’-য় অভিনয় জগতে প্রবেশ রমাপ্রসাদ বণিকের। তার পর ‘দশচক্র’, ‘চার অধ্যায়’, ‘রক্তকরবী’, ‘ঘরে বাইরে’, প্রভৃতি নাটকে পরের পর অভিনয়। ১৯৮১-তে নিজেই গড়লেন ‘চেনামুখ’ নাট্যদল। সেখানে একে একে মঞ্চস্থ হয়েছে ‘রানীকাহিনী’, ‘আগশুদ্ধি’, ‘পাখি’, ‘শরণাগত’, ‘ইচ্ছেগাড়ি’-র মতো স্মরণীয় নাটক। সিনেমা-টিভিতে নানা চরিত্রে অভিনয় করে সব স্তরের দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে পেরেছিলেন তিনি। নেহরু চিলড্রেনস মিউজিয়মে আমৃত্যু ছোটদের নাট্য প্রশিক্ষণ দিয়ে গিয়েছেন রমাপ্রসাদ। ওদের উদ্যোগে ২৮ ডিসেম্বর, সন্ধ্যা ছ’টায় মিউজিয়মে প্রয়াত ওই নাট্যকর্মীর জন্মদিন পালিত হবে। ছাত্রছাত্রীরা অভিনয় করবে ‘একটি নাটকের কোলাজ’। অনুষ্ঠানে রমাপ্রসাদ বণিক নাট্যসমগ্র প্রথম খণ্ডও (পত্রলেখা) প্রকাশিত হবে।

প্রবাসী
বাংলা গান। বর্ন ইন দি ইউএসএ। অনেকটা মেড ইন...-এর মতো শুনতে লাগছে? লাগলেও করার কিচ্ছু নেই। এটাই ‘অপার বাংলা: ইস্টওয়েস্ট মেট্রো’র (সারেগামা) ইউএসপি। অ্যালবামের প্রথম গান ‘কে বলল বাংলা গানে নাচা যায় না’, এবং মজার একটি, ‘কর্পোরেট যন্ত্রসঙ্গীত’। পৃথ্বীরাজ, দেবদীপ, ফাওয়াদ, রামানন্দ, কৌশিক আর সানিন আমেরিকাবাসী এই ছ’জনায় মিলে তৈরি করেছে বাংলা ব্যান্ড। তাদেরই গানের অনুষ্ঠান ছিল আইসিসিআরে। সে দিনই অ্যালবামটি প্রকাশ করলেন অঞ্জন দত্ত।

রাতভর শরদিন্দু
গল্প-উপন্যাস থেকে নাটক কেন? বাংলায় মৌলিক নাটক কি কম পড়িয়াছে? রাতভর ‘নাট্যস্বপ্নকল্প’-এর আয়োজক ‘অন্য থিয়েটার’-এর কর্ণধার বিভাস চক্রবর্তী এ প্রশ্ন শুনে বললেন,“বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল সম্পদগুলিকে নাট্যমঞ্চে নিয়ে আসবেন তাঁরা, এই রকম একটা ঘোষণা করা হয়েছিল বহুরূপী-র সূচনাপর্বে। কিন্তু বহু স্মরণীয় নাটক উপহার দিলেও এ ব্যাপারে কার্যত তাঁরা কিছুই করে উঠতে পারেননি। উৎপল দত্তও তিতাস ছাড়া ও পথে হাঁটেননি। অজিতেশও না। কিন্তু আমরা শুরু থেকেই বাংলা সাহিত্যের কাছে ফিরে গিয়েছি। বহু আগে বোর্ড থিয়েটারে এই ধারাটা ছিল।” সেই ধারায় এ বার বছরের শেষ দিন রবীন্দ্রসদনে রাতভর শুধু শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প থেকে নাটক। ঐতিহাসিক, রোম্যান্টিক, ভৌতিক, গোয়েন্দা শরদিন্দু-সাহিত্যের সব ধারার গল্পই নাটক হয়ে উঠবে মঞ্চে। নির্দেশনায় সুমন মুখোপাধ্যায়, সীমা মুখোপাধ্যায়, রঞ্জন রায়, পলক চক্রবর্তী, দেবেশ চট্টোপাধ্যায় এবং কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। তার আগে অ্যাকাডেমিতে ‘শুধু শরদিন্দু’ প্রসঙ্গে বলবেন পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। আবৃত্তিতে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মাঝরাতে প্রাঙ্গণে বর্ষবরণে ‘মহুল’।

সান্তা
ওই তো হেঁটে চলেছেন তিনি, লাল জোব্বা, লাল টুপি, মুখের দীর্ঘ দাড়িটি বাতাসে দুলছে আলতো। হাত মেলাতে লাজুক মুখে এগিয়ে আসছে বাচ্চারা। তিনি হাতও মেলাচ্ছেন সহাস্যে। সান্তা ক্লজ-এর ছদ্মবেশ? মোটেই নয়। কাঁচরাপাড়ার পঙ্কজ পাসোয়ান জানেন, এই টুপি-জোব্বাও তাঁরই জীবনের অঙ্গ। বয়েসে নবীন, অন্য সময় গায়ে ট্যাটু আঁকা পেশা। ডিসেম্বর এলে ক’দিনের এই বিচিত্র-কর্ম। আন্দাজ বারো ঘণ্টা তক কাজ, প্রতিদিন। প্রায় পুরো সময়টাই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা। প্রবাদের সেই বৃদ্ধের বল্গা হরিণে-টানা গাড়ি আছে বলে শোনা যায়। পঙ্কজের তেমন কিছু নেই। তাতে তেমন আক্ষেপও নেই। ওই যে এগিয়ে আসছে আর একটি শিশু। ছোট্ট চেহারা আর অনেকখানি সারল্য। পঙ্কজ, থুড়ি বুড়ো সান্তা হেসে ফেললেন। বড়দিনের সকালের মতো হাসি।

শতবর্ষ
‘রোগা-পাতলা লম্বাটে গড়নের মানুষটি, উজ্জ্বল চোখ, মুখে একটু হাসির ছোঁয়া, পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি, পায়ে চপ্পল।’ ষাট বছর আগে ‘আনন্দমেলা’-র দফতরে ধীরেন বলকে প্রথম দেখার স্মৃতি এ ভাবেই লিখেছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। যাঁরা দেখেননি ধীরেনবাবু তাঁদের স্মৃতিতেও আছেন তাঁর তুলি-কলমে ফুটে ওঠা অজস্র ছোটদের ছবি নিয়ে। তুতুভুতু কিংবা চেঙাবেঙার চিত্রস্রষ্টা ধীরেন বলের জন্মশতবর্ষ এ বছর। ১৯২২-এর ২২ জানুয়ারি বগুড়ায় জন্ম। শিল্পশিক্ষা এ শহরের গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে। ভারত সরকারের প্রচার বিভাগের চাকরিতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন সিমলায়। কিন্তু তারই মধ্যে ছোটদের জন্য এঁকেছেন বহু ছবি। তারই বেশ কিছু নিয়ে এখন প্রদর্শনী নন্দন ৪-এ, পশ্চিমবঙ্গ শিশু-কিশোর আকাদেমি-র উৎসবে। নিজের সংগ্রহ থেকে প্রদর্শনী সাজিয়েছেন শিল্পী-কন্যা পৃথা বল।

তারাবাতি
‘বইটি শিশুদের কাছে রাতের তারাবাতির মত। ফুলঝুরির নেবা আছে। তারাবাতি দিনের আলোর গভীরেও জ্বলে।’ লিখেছেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, জাপানের ফুলঝুরি (মার্তণ্ড পাবলিশার্স, প্রাপ্তিস্থান: দে বুক স্টোর, ২৮০.০০) বইটির গোড়ায়। জাপানের শিশুরা তাদের মা-দিদিমার কাছে আবহমানকাল যে সব গল্প শুনে আসছে, জাপানি ভাষা থেকে সরাসরি তেমন একুশটি গল্প বাংলায় অনুবাদ করেছেন রাজকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। ঝরঝরে অনুবাদ, আর প্রতিটি গল্পের সঙ্গে আছে জুংকো ভট্টাচার্যের জাপানি শৈলীতে পাতাজোড়া অসাধারণ রঙিন ছবি। চমৎকার প্রচ্ছদ, ঝকঝকে মুদ্রণে বইটি বাংলা ছোটদের বইয়ের দুনিয়ায় খুবই উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

মন্দিরের কথা
ভারতীয় স্থাপত্যের পাঠক্রমে কতটুকুই বা জায়গা পায় বাংলার মন্দির? অথচ গুরুত্বের দিক থেকে তা যে আদৌ ন্যূন নয়, চোখে দেখে তা অনুভব করেছেন শিবব্রত হালদার ও মঞ্জু হালদার। বাংলার মন্দির স্থাপত্য নিয়ে গবেষণার নাতিদীর্ঘ তালিকায় সংযোজিত হল তাঁদের লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বই, টেম্পল আর্কিটেকচার অব বেঙ্গল (ঊর্বী প্রকাশন, ২০০০.০০)। লেখকরা দু’জনেই বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি-তে স্থাপত্যবিদ্যার প্রবীণ অধ্যাপক, অনেক দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে তাঁদের চর্চা। বড় আকারের বইটিতে পঞ্চম থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত বাংলার মন্দিরের শৈলীগত বিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সর্বভারতীয় শৈলীর সঙ্গে যোগসূত্র, বিভিন্ন রীতির মন্দির, তৈরির উপকরণ আলোচিত, সঙ্গে অজস্র রঙিন ছবি, রেখাচিত্র, ভূমি-নকশা। নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয় কাজ।

ইমফলের ছবি
শুধু রক্ত, মৃত্যুমিছিল বা সন্ত্রাস নয়, সাংবাদিকের চোখ এ সবের বাইরেও খুঁজে নেয় চলমান জীবনের নানা দিক। রতন লুয়াংচা, প্রদীপ ফানজৌবাম, ছউবা থিয়াম বা বোরুন থোকচোমইমফলের এমন কয়েকজন সাংবাদিকের তিনটি ভিডিয়ো ছবি আর অজস্র স্থিরচিত্র নিয়ে পর্নব মুখোপাধ্যায় সাজিয়েছেন ‘হোয়্যার ইজ ইম্ফল’ শীর্ষক প্রদর্শনী। মানবাধিকারের বিষয়টি তুলে ধরতেই ইরম শর্মিলা চানুকে উৎসর্গ করা হয়েছে প্রদর্শনীটি। বিড়লা অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণে চলবে ৩১ পর্যন্ত। ৩-৮, আজ বাদে।

ফিরে পাওয়া
তখন সারা কলকাতা ও হাওড়ার অঞ্চল জুড়ে সবসুদ্ধ মোড় ছিল দুশোটি, দুশো পোস্টার প্ল্যাকার্ডের হিসেব ছিল থিয়েটারের। পরে আমরা যখন থিয়েটারে ঢুকলাম তখনও ছিল সেই দুশো মোড়ের হিসাব। আমাদের থিয়েটারে প্রায় দশ বছর কাটবার পর সেই মোড় হল আড়াইশো।’ মোড়ে মোড়ে থিয়েটারের বিজ্ঞাপনে জেগে থাকা সে কলকাতা আজ হারিয়ে গিয়েছে। আত্মজীবনসূত্রে সেই হারানো কলকাতারই কাহিনিটি ফিরে এল নব রূপে তার প্রথম প্রকাশের অর্ধশতক পরে। কাহিনিকার অহীন্দ্র চৌধুরী। প্রায় নব্বই বছর আগে কর্ণ-রূপে তাঁর সাধারণ রঙ্গালয়ে মঞ্চাভিষেক। তার পরে ১৯৫৪ পর্যন্ত প্রায় ১২৫টি নাটকের দেড়শো চরিত্রে তাঁকে দেখেছে এ শহরের মঞ্চ, এ শহরের হারানো ছবি-ঘরগুলি উপচে পড়েছে শুধু তাঁর জন্য। আর সেই দীর্ঘ বর্ণময় ইতিহাস নিয়ে ১৯৬২-তে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল অহীন্দ্র চৌধুরীর আত্মজীবনী নিজেরে হারায়ে খুঁজি-র প্রথম পর্ব। ন’বছর পরে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় পর্ব। এ বার বইটির সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রকাশিত হল দুখণ্ডের এক সুদৃশ্য বাক্সবন্দি সংস্করণ। প্রকাশক সপ্তর্ষি। মুখবন্ধ লিখেছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গের ছবিতে পরিমল গোস্বামীর ক্যামেরায় অহীন্দ্র চৌধুরী।


মাটির গান
ছবি: গোপী দে সরকার।
ধলেশ্বরী নদী রে, ও পথে যাও যদি। কইয়ো আমার প্রাণ বন্ধুয়ার ঠাঁই চোখ বুজে গাইলে এখনও অনুভবে বাংলাদেশের নদী-পথ-ঘাট। লোকসঙ্গীতকে আশ্রয় করেই বেঁচে আছেন শিল্পী অমর পাল। কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্ম ১৯২২-এর ১৯ মে। বাবা মহেশচন্দ্র, মা দুর্গাসুন্দরী। মাঝি-মাল্লাদের কাছেই গানের সহজপাঠ। কলকাতায় আসার পর কবিরাজ শচীন ভট্টাচার্য গান শেখার জন্য নিয়ে যান মনি চক্রবর্তীর কাছে। লোকসঙ্গীতের তালিম ওঁর দাদা সুরেন চক্রবর্তীর কাছে। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উস্তাদ আয়াত আলির কাছে। ১৯৫১-য় আকাশবাণীতে, সিনেমায় প্রথম প্লে-ব্যাক তারকেশ্বর ছবিতে। পরে বেহুলা লখিন্দর, হীরক রাজার দেশে, মন্দ মেয়ের উপাখ্যান, তাহাদের কথা গোটা ২৫টি ছবিতে গেয়েছেন। তাঁর কণ্ঠে অনায়াসে খেলা করে বাউল, ভাটিয়ালি, জারি অথবা ঢেকি পাড় দেওয়া, চিঁড়ে কোটা, বিয়ের জলভরার গান। ১৯৭৮-এ আমন্ত্রিত হয়ে যান জাপানে। সাত দিনের অনুষ্ঠান সংরক্ষিত হয়। পেয়েছেন বহু সম্মান। সঙ্গীত আকাদেমিকে ১২০টি গানের স্বরলিপি করে দিয়েছিলেন প্রকাশের জন্য, আজও তার কিছুই হয়নি। শিল্পীর আক্ষেপ, ‘মনসামঙ্গল, সত্যপীরের গান আর কি কেউ শুদ্ধ ভাবে গাইবে, কে জানে!’ নব্বই-এর কোঠায় পা রেখেও শিল্পী আবার দর্শকদের সামনে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুপ্রেরণা যে গান, তাই নিয়ে অনুষ্ঠান আজ সন্ধে ছ’টায় আইসিসিআর-এ, ‘মাটির গান: কবির গান’ শীর্ষকে। সঙ্গে থাকবেন তপন রায়, ভাস্বতী বিশ্বাস, প্রবুদ্ধ রাহা, রোহিণী রায়চৌধুরী এবং ইমন চক্রবর্তী।
   


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.