শীত-শহরে বড়দিনে নিয়ম ভাঙার আনন্দ
ডিসেম্বরের শীতের ছোঁয়ার সঙ্গে দিনভর পাল্লা দিল ক্রিসমাসে উৎসব-নগরীর উষ্ণতা।
নিউ টাউনের মাল্টিপ্লেক্স থেকে পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁয় সন্ধে অবধি টো-টো কোম্পানির পরে বড়দিনের রাতের পার্টিতে হেলায় জ্যাকেট-সোয়েটার ছেড়ে নাচের ফ্লোরে সামিল হল ‘সাহসী’ কলকাতা।
ক্রিসমাস-ইভের রাতে গির্জার প্রার্থনার পরে রবিবার দিনটা শুরুই হয়েছিল অফুরন্ত ছুটির অবকাশ নিয়ে। বড়দিনের সময়েই কিছুটা অপ্রত্যাশিত এই জাঁকালো শীতের আবেশটুকু কলকাতার কাছে যেন সান্তাক্লজের উপহার। অনেক বছর বাদে বড়দিনে নিজের শহরে রয়েছেন ব্রাসেল্স-প্রবাসী, তেঘরিয়ায় সৌমিত্র দেব। আত্মীয়-বন্ধুদের বিরাট দল নিয়ে পার্ক স্ট্রিটে সাহেবি প্রাতঃরাশের খোঁজে বেরিয়ে ৪০ ছুঁইছুঁই যুবক হেসে বলেন, “ইউরোপে দুর্লভ একটু রোদের ছোঁয়া পেলেই লোকে যা হ্যাংলামি করে! প্যাচপেচে গরমের দেশ কলকাতায় শীতের টানে ঘরছাড়া হওয়ার তাগিদেও সেই এক আকুতি। শীতকাল যে এমন আরামের হতে পারে, তা কেবল কলকাতায় এলেই মালুম হয়।”
ফলে, দুপুরে নিউ আলিপুর থেকে ধর্মতলা যাওয়ার পথে সওয়ারিকে আগে-ভাগে সাবধান করে দিয়েছেন ট্যাক্সিচালক। চিড়িয়াখানার ভিড়টা কিন্তু এড়াতেই হবে। তাই বেশি ঘুরে খিদিরপুর হয়ে যাওয়া ছাড়া গতি নেই। বিকেলে সেন্ট পল্স ক্যাথিড্রালের সামনে থিকথিকে ভিড় সামলাতেও পুলিশের কালঘাম ছুটেছে।
ছুটির দুপুরে হুটোপাটি। রবিবার ময়দানে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
বিকেল তিনটে নাগাদ জাদুঘরের ফুটপাথে গোগ্রাসে এগ-চাউমিন খেতে দেখা গেল বারাসতের হালদার পরিবারকে। খেতে খেতে নরম রোদের আমেজ পেতেই গায়ের নীল পুলওভার খুলে ফেলল দলের সাত-আট বছরের খুদে ছেলেটি, মায়ের রক্তচক্ষু একটুও আমল না-দিয়ে।
আলিপুরের হাওয়া-অফিস কিন্তু আজও বলছে, শহরের তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে ১১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও তা স্বাভাবিকের থেকে এখনও দু’ডিগ্রি কম। আর ২০১০-এর বড়দিনে এ শহরের তাপমাত্রা ছিল আরও বেশি ১৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গড়িয়ার গৃহবধূ রাতুলা দত্তের কথায়, “অন্য বারের থেকে এ বার শহরে বেশি ঠান্ডা থাকলেও কলকাতা কিন্তু তাতে মনে মনে বেশ খুশি। উৎসবের মেজাজে শীতটাকে আমরা বেশ স্পোর্টিংলি নিচ্ছি।”
আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের কথা শুনলে কলকাতাবাসীর তাই কিঞ্চিৎ মন-খারাপও হতে পারে। গোকুলবাবু বললেন, “বঙ্গোপসাগরে হঠাৎ সৃষ্ট নিম্নচাপ একটু গোলমাল পাকাচ্ছে। এর ফলে উত্তুরে হাওয়া কমজোরি হচ্ছে। মানে, আগামী দু’-দিনে শীত কমবে।” তবে গোকুলবাবুর আশ্বাস, “এটা সাময়িক ব্যাপার। পরে শীত আরও বাড়তেই পারে।”
তবে শীতের মতোই নিয়ম-ভাঙার মুডে দিন গোটা কলকাতার। ঢাকুরিয়ার সঞ্চিতা সিংহরায় সকালে উঠেই বাচ্চাদের স্বামীর হেফাজতে রেখে মেট্রো ধরে শ্যামবাজারে বন্ধুর বাড়ি। বাগবাজারের স্কুলের সতীর্থদের বড়দিনে সেখানে জমায়েত। হেঁসেল-অফিস থেকে এক দিনের জন্য ছুটি নেওয়া ‘নারী-বাহিনী’র উল্লাসে দুপুরেই আসর জমজমাট।
শহরের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মহল্লা বো-ব্যারাক্সের প্রবীণ ওয়ারেন স্মিথও এই দুপুরটা ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে বাড়িতে বসে কব্জি ডুবিয়ে রেড-মিট খেয়েছেন। বিকেলে প্রয়াত প্রিয়জনেদের স্মৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে শুধু কিছু ক্ষণের জন্য মল্লিকবাজারের কবরস্থানে গিয়েছিলেন। এর পরে রাতে বো স্ট্রিটের বচ্ছরকার ডান্স-পার্টিতে ডিজে-র মিউজিকে বয়স ভুলে তিনি ফিরে গেলেন তাঁর যৌবনের সেই কলকাতায়। এ শহরের অভিজাত ক্লাব বা লাউঞ্জবার-ডিস্কোথেকগুলোও যখন উৎসবের আঁচ মেখে উদ্দাম।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.