বিনোদন রিমেকের নয়া নজির গড়ে
মঞ্চে ফিরল ‘অশালীন’

নাটক শুরুর আগে ভিডিও ক্লিপ। নাটককার বলছেন নাটকটি নিয়ে তাঁর ভাবনা। কেন? কারণ নাটককার নিজেই এক সময় পরিচালনা করতেন নাটকটি, অভিনয় করতেন মূল চরিত্রে। ১৫ বছর পরে সেই নাটকই আবার। বদলে গিয়েছে দল। বদলে গিয়েছেন পরিচালক এবং কুশীলবরা।
নাটকের আগে এমন মুখবন্ধ আগে দেখেনি এ শহর। রিমেকের নতুন দৃষ্টান্ত গড়ে এই ভাবেই মঞ্চে ফিরছে ‘অশালীন’। ব্রাত্য বসুর লেখা প্রথম নাটক, যা নিয়মিত অভিনয় হত ১৯৯৬-৯৭ সালে। নাটকটা একই আছে। শুধু এ বারে পরিচালকের আসনে বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবারের কর্তার ভূমিকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। আর মূল চরিত্র সুজনের ভূমিকায় ব্রাত্য বসুর জায়গায়, পর্দার জনপ্রিয় নায়ক রাহুল।
মঞ্চসফল নাটকের ‘রিমেক’ বহু বছর ধরেই হয়েছে, হচ্ছে। কোনওটি মূলত স্মারক হিসেবে, কোনওটি স্বতন্ত্র প্রযোজনা হিসেবে। কোনওটি সফল, কোনওটি নয়। ‘নবান্নে’র ৫০ বছরে বহুরূপী করেছিল সেই নাটক। ১৯৭৭ সালের নাটক ‘জগন্নাথ’-এর ২৫ বছর পূর্তিতে কয়েকটি শো করেছিলেন অরুণ মুখোপাধ্যায়। ভিড় উপচে পড়েছিল। আবার স্বতন্ত্র প্রযোজনা হিসেবে সলিল বন্দ্যোপাধ্যায় ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ করেছিলেন তিন বার। দেবাশিস মজুমদারের ‘অমিতাক্ষর’ আদতে ১৯৭৮ সালের নাটক। এখন নতুন পর্বে তার শো ইতিমধ্যেই ৪০-এর কাছাকাছি। নান্দীকার এক সময় ফিরিয়ে এনেছিল সাতের দশকের তিনটি প্রযোজনা ‘আন্তিগোনে’ এবং ‘ফুটবল’। ‘ভালমানুষ’ সম্পূর্ণ নতুন চেহারায় হয়ে ওঠে ‘শঙ্খপুরের সুকন্যা’।
‘অশালীন’ নাটকের একটি দৃশ্য। প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পেশাদার মঞ্চের নাটক ‘নীলকণ্ঠ’ পরে সৌমিত্রেরই পরিচালনায় আসে গ্রুপ থিয়েটারের কাঠামোয়। দর্শকের সাড়া ছিল দু’বারই। উৎপল দত্ত-অপর্ণা সেন-শোভা সেন অভিনীত ‘প্রফেসর মামলক’ সম্প্রতি মঞ্চে ফিরেছে অসিত বসুর পরিচালনায়, নাম ‘পরিবর্তন’। অরুণবাবু মঞ্চে এনেছেন মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের ‘মৃত্যুসংবাদ’, যা ১৯৬৫ সালে অভিনীত হত শ্যামল ঘোষের পরিচালনায়। দ্বিতীয় পর্বে এই নাটকগুলো কতটা দাগ কাটবে, সেটা সময় বলবে। কৌশিক সেনের পরিচালনায় আগামী বছর মনোজ মিত্রের ‘অশ্বত্থামা’ নাটকে অভিনয় করবেন প্রসেনজিৎ। নাটকটি এক সময় বিভাস চক্রবর্তীর পরিচালনায় অভিনীত হত ১৯৭৪-এ। বিভাস নিজে ‘শোয়াইক গেল যুদ্ধে’ করেছিলেন দু’পর্বে, ১৯৮১ ও ১৯৯১। সব মিলিয়ে ২৫০-র কাছাকাছি শো হয়েছিল।
রবীন্দ্রসার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলা নাটকের মঞ্চে রবীন্দ্র প্রযোজনার যে ঢল দেখা গিয়েছে, তাকেও ‘রিমেক’ বলা যেতেই পারে। এই মুহূর্তে শহরের মঞ্চে একাধিক প্রযোজনা চলছে ‘নষ্টনীড়’কে কেন্দ্র করে। বহুরূপীর পরে প্রথম ‘রক্তকরবী’ করেছিলেন সুমন মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি গৌতম হালদার
নাটকটি আবার করেন। এখনও অবধি ৫৬টি শো হয়েছে। বাংলা নাট্যমঞ্চে ‘বিসর্জন’ অভিনীত হয়েছে একাধিক বার। এখন করছেন সুমন। শো হয়েছে ৩২টি। ‘ডাকঘর’ কয়েক বছর আগে করতেন কৌশিক। এখন কলকাতায় আরও দু’টি অভিনয় একসঙ্গে শুরু হয়েছে। ‘চিরকুমার সভা’ করতেন অরুণ মুখোপাধ্যায়। আগামী বছর নাটকটি আবার করবে ব্রাত্য’র দল, পরিচালনায় দেবেশ চট্টোপাধ্যায়।
সৌমিত্র মিত্র মনে করিয়ে দিলেন, সিনেমা আর নাটকের ক্ষেত্রে রিমেকের ধারণাটা আলাদা। “সিনেমার মতো নাটক এককালীন রেকর্ডেড সংস্করণ নয়। ভাল লাগা ছবি যে ভাবে টিভি বা ডিভিডি-তে দেখতে পাওয়া যায়, নাটকে সে সুযোগ নেই। তাই সময়ের চাহিদা আঁচ করেই ফিরিয়ে আনতে হয় পুরনো প্রযোজনা। রাজরক্ত, তিন পয়সার পালা বা মঞ্জরী আমের মঞ্জরী-র মতো নাটকও যদি রিমেক হয়, সেটা তো নতুন প্রজন্মের জন্য খুবই ভাল হবে!”
কিন্তু সাম্প্রতিক কালের নাট্যকারের লেখা সাম্প্রতিক কালের প্রযোজনা জনস্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগেই নতুন পরিচালকের হাতে নতুন চেহারা নিচ্ছে, এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটেছে কি? সৌমিত্র মানলেন, উদাহরণ সত্যিই কম। গৌতম হালদার নতুন করে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ করছেন। কিন্তু সেটা তিনি নিজেই করছেন। ‘অশালীন’ নাটকে দল, পরিচালক কুশীলব সবই বদলিয়েছে। পরিচালকের কাছে কি এটা কোনও বাড়তি চ্যালেঞ্জ?
বিপ্লব বললেন, “ভদ্রতার আড়ালে নিজেদের সত্যিকার মুখগুলো লুকিয়ে রাখার যে গল্প ‘অশালীন’ বলে, সেই বক্তব্যের প্রতি বিশ্বাসটা তো বদলায়নি। ‘অশালীন’ নাটকটা ব্রাত্যর সঙ্গে সমার্থক। তবু নাটকটা আমাদের করার অনুমতি দিয়েছেন তিনি।”
নাটককার নিজে কী বলছেন? ব্রাত্য বসুর জবাব, “ভাল লাগছে। ২৫ বছর বয়সের লেখা তো! এখন নিজেরই মজা লাগছে।” আর ব্রাত্যর ‘বদলি’ অভিনেতা রাহুল? তাঁর “সিনেমায় একঘেয়ে চরিত্র করে ক্লান্ত লাগছিল। মঞ্চে এলাম, নিজেকে আবার ভাঙচুর করব বলে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.