|
|
|
|
ফলন বেশি, ধানের দাম পাচ্ছেন না চাষি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ফলন হয়েছে ভালই। কিন্তু ধান কেনায় গতি নেই। ফলে, সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে অভাবী বিক্রি আরও বাড়বে বলেই মনে করছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। কারও কারও আবার অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ী বা ফড়েদের ফুলেফেঁপে ওঠার সুযোগ করে দিতেই এমন শ্লথ-গতিতে ধান কেনা চলছে। যতটা প্রচার হচ্ছে, সহায়কমূল্যে ধান কেনা কার্যত তেমন হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনও স্বীকার করছে, এ ক্ষেত্রে আরও গতি আনা প্রয়োজন। পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট হয়েছে ১৮০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত ধান কেনা হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার মেট্রিক টন! জেলার খাদ্য নিয়ামক প্রদীপ ঘোষের অবশ্য আশ্বাস, “দ্রুত ধান কেনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” প্রশাসন যে হিসেব দিচ্ছে, তার মধ্যেও গরমিল রয়েছে বলে অভিযোগ একাধিক কৃষক সংগঠনের। তাদের বক্তব্য, অনেক এলাকায় চাষিদের না-জানিয়ে ধান কেনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চালকল ও প্রশাসনের একাংশের যোগসাজশেই এ কাজ সম্ভব হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে কবে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছোঁওয়া সম্ভব হবে, তার সদুত্তর নেই কারও কাছে। |
|
চলছে ধান ঝাড়াই। ঝাড়গ্রামে দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি। |
জেলার সাধারণত ৪ লক্ষ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয় বলে কৃষি দফতর সূত্রে খবর। কিন্তু, এ বার চাষের এলাকা বেড়েছে। ৫ লক্ষ ৩২৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। শেষের দিকে অবশ্য পর্যাপ্ত জলের অভাবে কিছু ফসল মাঠে নষ্ট হয়। তাও, সার্বিক ভাবে চাষ ভাল হয়েছে বলেই জানাচ্ছে কৃষি দফতর। কিন্তু, চাষ ভাল হলেও বাড়তি লাভের আশা নেই। অভাবী বিক্রি রুখতে সহায়কমূল্যে ধান কেনে সরকার। ইতিমধ্যে জেলা জুড়ে সহায়কমূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে। কিন্তু, তাতে অভাবী বিক্রি ঠেকানো যাচ্ছে না। তপন মাহাতো, অজয় চালকের মতো চাষিদের কথায়, “শুনছি সহায়কমূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে। কিন্তু, কোথায় কী ভাবে বিক্রি হচ্ছে কিছুই জানি না। আমাদের পক্ষে তো আর ১০-১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে চালকলে ধান বিক্রি করা সম্ভব নয়।” এ বার রাজ্য সরকার সাধারণ ধানের মূল্য বেঁধেছে ১০৮০ টাকা প্রতি কুইন্টাল আর সরু ধান ১১৩০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। অভিযোগ, সহায়কমূল্যে ধান কেনার সময়ে কোনও কোনও চালকল চাষিদের কাছ থেকে কুইন্টাল পিছু অতিরিক্ত ৭-৮ কেজি করে অতিরিক্ত ধান চাইছে। যারা অতিরিক্ত ধান দিতে রাজি হচ্ছে না তাদের ১০৮০ টাকার বদলে ১০২৫ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
বাজারে ধানের দাম এরই মধ্যে পড়তির দিকে। এখন বাজারে ধানের মূল্য ৮০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। অনেকে এই দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্যও হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। সিপিআইয়ের কৃষক সংগঠন ‘সারা ভারত কৃষকসভার’ জেলা সম্পাদক বিমল ভট্টাচার্য বলেন, “সহায়কমূল্যে ধান কেনা নামেই হচ্ছে। এখন চাষের খরচ যে হারে বেড়েছে তাতে ১০৮০ নয়, ন্যূনতম মূল্য কুইন্টাল প্রতি দেড় হাজার টাকা করা উচিত।” তাঁর কথায়, “যে ভাবে ধান কেনা চলছে, সেই পদ্ধতিও ঠিক নয়। কৃষকদের স্বার্থে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকেই আমরা জেলা জুড়ে রাস্তা অবরোধ করব। তাতেও সরকারের হুঁশ না-ফিরলে পরবর্তীকালে আন্দোলন আরও জোরদার হবে।” এসইউসিআইয়ের ‘কৃষক ক্ষেতমজুর সংগঠনে’র রাজ্য সম্পাদক পঞ্চানন প্রধানও বলেন, “রাজ্য সরকার সহায়কমূল্যে ধান কেনা হবে বলে ঘোষণা করেই চুপ করে বসে আছে। সে ভাবে এই প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না। ফলে, চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শুধু চালকলে গিয়ে নয়, অঞ্চলভিত্তিক কেন্দ্র খুলে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে।” কৃষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কিংবা ফড়ে চাষিদের কাছে পৌঁছে গিয়ে তাদের কম ধানে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করবে। পরে সুযোগ বুঝে সেই ধান খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করে ফুলেফেঁপে উঠবে।
জেলায় এ বার যে পরিমাণ জমিতে আমন চাষ হয়েছে তাতে সব মিলিয়ে ১৯ লক্ষ ১ হাজার ২৪২ টন ধান উৎপাদন হবে বলেই মনে করছে কৃষি দফতর। এখন অধিকাংশ এলাকায় উচ্চফলনশীল বীজে চাষ হয়। ফলে, চাষের খরচ বাড়ে। প্রতি বছরই উৎপাদিত ফসলের অধিকাংশ বাজারেই বিক্রি হয়। তা-ও সহায়কমূল্যে ধান কেনায় গতি থাকলে বাজারে ধানের দামও চাঙ্গা থাকে। কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সহায়কমূল্যে ধান কেনার গতি শ্লথ হলে বাজারে দামও পড়তে থাকে। এ বারও সেই পরিস্থিতি হতে পারে।”
|
|
|
|
|
|