বালিতে ‘বালির বাঁধ’ বহুতলের অগ্নি-সুরক্ষা
কটি অগ্নিকাণ্ডই খুলে দিল বেনিয়মের ঝাঁপি।
সোমবার রাতে বালির জিটি রোডে একটি আবাসনের আগুন জানিয়ে দিল, ওই অঞ্চলের কোনও বহুতলেরই দমকলের ছাড়পত্র নেই। খোদ পুর-কর্তৃপক্ষই স্বীকার করেছেন এ কথা। ছাড়পত্র যে নেই, সে বিষয়ে দমকলও মোটামুটি নিশ্চিত।
ঘিঞ্জি হাওড়া পুর-এলাকার মতো বালিতেও আগুন লাগলে মুহূর্তের মধ্যে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা দমকলের আধিকারিকদের। তাঁদের ধারণা যে একেবারে অমূলক নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় বালি পুর-এলাকায় এক বার ঘুরে এলেই। বাসিন্দাদের বক্তব্য, বিভিন্ন এলাকায় বড় রাস্তা থেকে অলিগলি, সর্বত্র পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে লিলুয়া অঞ্চলে ঘেঁষাঘেষি করে উঠছে একের পর এক বহুতল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই সব বহুতলের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বা পরিকাঠামোয় ত্রুটি খতিয়ে দেখার কেউ নেই। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তবেই সকলে নড়েচড়ে বসেন।
যেমন, সোমবার রাতে বালির কালীতলায় একটি পাঁচতলা বাড়ির একতলায় সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পরেই জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে প্লাস্টিকের জিনিস ও তুলোর আসবাবপত্রের গুদাম রয়েছে। আগুন লেগেছিল ওই গুদামেই। যার ফলে প্রচণ্ড কালো ধাঁয়া গোটা আবাসনে ছড়ালে রাস্তায় নেমে পড়েন আতঙ্কিত বাসিন্দারা। দমকলের ৮টি ইঞ্জিন প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান দমকলের ডেপুটি ডিরেক্টর (পশ্চিমাঞ্চল) বিভাস গুহ। গোটা আবাসনটিই ঘুরে দেখেন তিনি। এ দিন ওই আবাসনের একতলার সুপার মার্কেটের ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, তখনও ঘুটঘুটে অন্ধকার। রয়েছে কালো ধোঁয়াও। তিনটি ব্লকের নীচের ওই মার্কেটটি ‘এল’ আকারের। মার্কেটের সামনের দিকে রয়েছে আসবাবপত্র, কম্পিউটার এবং ওষুধের দোকান। তবে অধিকাংশ দোকানঘরই বন্ধ। ওই আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন্ধ দোকানগুলির ভিতরেই রয়েছে বিভিন্ন গুদাম। শুধু দোকানঘরই নয়, মার্কেটের ভিতরে হাঁটাচলা করার জায়গাতেও প্লাস্টিকের জিনিস, আসবাবপত্র, তুলোর গদি, চেয়ার মজুত। এক বাসিন্দা সুবিমল ভট্টাচার্য বলেন, “স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের পরেই আমরা এই গুদামের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পুরসভা, দমকল, পুলিশে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কখনও পরিদর্শনে আসেননি।”
এ দিন বিভাসবাবু বলেন, “দোকানঘর ভাড়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কী ভাবে সেখানে গুদাম চলছিল, তা বুঝতে পারছি না। সাত দিনের মধ্যে গুদামগুলি সরাতে বলেছি। এ ছাড়া ওই গুদাম-মালিক অষ্টপদ শাসমলের নামে জামিন-অযোগ্য ধারায় বালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।”
আবাসনটি ঘুরে দেখেও এ দিন বিস্ময় প্রকাশ করেন বিভাসবাবু। অপরিসর সিঁড়ি। বারান্দাগুলিও খুবই ছোট। ঢোকা বেরোনোর রাস্তাও একটি। তিনি বলেন, “এখানে আগুন মোকাবিলার পরিকাঠামো নেই বললেই চলে। এমনকী, এই বহুতলটির দমকলের কোনও ছাড়পত্র নেই। আবাসিকদের বলেছি, আমাদের কাছে বাড়ির প্ল্যান জমা দিতে। সব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু বালি পুর-এলাকায় তৈরি হওয়া বাকি বহুতলগুলির দমকলের ছাড়পত্র রয়েছে কি না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।
বিভাসবাবু জানান, বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে ন্যাশনাল বিল্ডিং আইন অনুযায়ী নকশা তৈরি করে দমকলের কাছে জমা দিতে হয়। দমকল সেটির অনুমোদন করে পুরসভায় পাঠায়। সেই নকশা ফের অনুমোদন করবে পুরসভা। তার পরে দমকল চূড়ান্ত ছাড়পত্র দিলে, তবেই পুরসভা দখলদারি শংসাপত্র দেবে।
কিন্তু বালি পুরসভার ক্ষেত্রে এই নিয়ম কতটা মেনে বহুতল তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হয়?
বালি পুরসভার চেয়ারম্যান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “বালিতে কোনও বহুতলেরই দমকলের ছাড়পত্র নেই। তবে এ বার থেকে বহুতল তৈরির অনুমতি দেওয়ার আগে অবশ্যই ওই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।” পাশাপাশি, এ বার থেকে বহুতলগুলির পরিকাঠামোও খতিয়ে দেখতে পুরসভা একটি কমিটি গঠন করছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.