সম্পাদক সমীপেষু...
জ্যোতি বসু ও আমরি
তোদি সাম্রাজ্যের উত্থান বসুযোগেই, ধাক্কা মমতায়’ (আ বা প, ১১-১২) শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদে লেখা হয়, “আমরি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য সরকারের চুক্তি অনুযায়ী, সরকারি তরফে কোনও রোগী ভর্তি হলে তাঁর চিকিৎসার খরচে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া যেতে পারে। বসুর শেষ চিকিৎসার বিলও সেই ভাবেই হয়েছিল।”
আপনার সাংবাদিক সম্পূর্ণ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এই সংবাদটি পরিবেশন করেছেন। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু চিকিৎসার জন্য প্রথম বার ঢাকুরিয়া এ এম আর আই-তে এবং দ্বিতীয় বার সল্টলেক এ এম আর আই-তে ভর্তি হন। ওই হাসপাতালেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এই দু’বারই চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে সরকারি সুবিধার ভিত্তিতে এ এম আর আই-এর পক্ষ থেকে কোনও বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়নি। ওই বিলের সম্পূর্ণ অর্থই পার্টির পক্ষ থেকে জমা দেওয়া হয়।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও রকম সুবিধা প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু নেননি।


বিমান বসু ঠিকই বলেছেন যে, জ্যোতি বসুর শেষ চিকিৎসায় কোনও ‘বিশেষ’ ছাড় দেওয়া হয়নি। রাজ্য সরকার বা তৎকালীন শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আমরি যে ব্যবস্থা সচরাচর করে থাকত, তা-ই হয়েছিল এবং প্রাপ্ত বিলের সম্পূর্ণ অর্থই আলিমুদ্দিনের তরফে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যাপারে সিপিএমের তরফে কোনও অনুরোধ করা হয়েছিল এমন কোনও কথাও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে ছিল না। ছিল না এর বাইরে অন্য কোনও ইঙ্গিতও। বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় বহু মন্ত্রী-আমলা কেন আমরি-তেই ভর্তি হতেন, সেই প্রশ্নও উহ্য ছিল। তবু কোনও নির্দিষ্ট বাক্য বা শব্দবন্ধ ব্যবহারের জন্য কোনও অন্য অর্থ উঠে আসার অবকাশ থাকলে তার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
প্রাসঙ্গিক তথ্য হিসাবে সংযোজন করা যেতে পারে, বসুর চিকিৎসার শেষ বিল সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন (‘বসুর বিল মেটাল দল’) আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ২৬ জানুয়ারি, ২০১০ তারিখে। আমরি হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লিখিত সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, বসুর শেষ চিকিৎসার খরচ হিসাবে ৬ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকার বিল হাতে পেয়েছেন আমরি কর্তৃপক্ষ। মূল বিল ৮ লক্ষ ৩৯ হাজার ৭৬০ টাকা হলেও চূড়ান্ত (ফাইনাল) বিল দেওয়া হয়েছিল ৬ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকার। বসুর মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত (১৬ জানুয়ারি, ২০১০), ওষুধ রিফান্ডের আগে বিলের অঙ্ক ছিল অবশ্য আরও বেশি। আমরি-র অন্যতম কর্ণধার শ্রবণকুমার তোদি সেই সময়ে বলেছিলেন, তাঁরা ‘পার্টি’র কাছ থেকে কোনও টাকাই নিতে চাননি। কিন্তু ‘পার্টি’ রাজি হয়নি। তাঁদের হাতে ২৩ জানুয়ারি, ২০১০-এর রাতে ৬ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকার চেক পৌঁছেছিল। সেই সময়ে এই বিষয়ে সিপিএমের তরফে কোনও প্রশ্নও তোলা হয়নি। এখন ঢাকুরিয়ার হাসপাতালে ভয়াবহ ঘটনার পরে আমরি-র বিশ্বাসযোগ্যতা নানা বেনিয়ম এবং গাফিলতির কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতই প্রতিবাদ ত্বরান্বিত করল কি না, সেই প্রশ্ন ওঠার অবকাশ থাকছে।
উল্লিখিত সবিস্তার তথ্যের পুনরাবৃত্তির কোনও সুযোগ এ বারের প্রতিবেদনে ছিল না। তার জন্য ভুল বোঝাবুঝির কোনও অবকাশ সৃষ্টি হয়ে থাকলে দুঃখপ্রকাশে কুণ্ঠা নেই।

বিপন্ন সুন্দরবন
সুন্দরবনের বিপর্যয় রুখতে এ যাবৎকাল সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের বিনাশ ও তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য-বদল নিয়ে চিন্তার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে সঠিক কারণেই। যদিও এর পিছনে সুন্দরবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্যময় সোয়াম্প ফরেস্টের বিনাশ নিয়ে আমাদের বিচলিত হতে দেখা যায়নি। সুন্দরবনের পলি-জমা ঊর্বর কর্ষণক্ষেত্র পেয়ে মানুষ নির্বিবাদে সেখানকার সোয়াম্প ফরেস্টের প্রাণী, উদ্ভিদ ও চরিত্র বদলে দিয়েছে। প্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়াটার বাফেলো, জাভান ও ওয়ান হর্নড রাইনো, সোয়াম্প ডিয়ার আজ ইতিহাসে! এই অঞ্চলের বিপন্ন উদ্ভিদদের মধ্যে কোনও রকমে টিকে আছে চেঁচো, ঝেঁঝো, ব্যাঙহাতা ও ভিলো-র (স্থানীয় নামে উল্লেখ্য) মতো জলাভূমির লতা ও উদ্ভিদ।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সোয়াম্প বাস্তুতন্ত্রে জল ও মাটির লবণের নিয়ন্ত্রক ভূমিকা রয়েছে। এ দেশেও শালুক লতার নুন নিয়ন্ত্রণের উপর গবেষণা হয়েছে। এরা সামগ্রিক ভাবে জল ও মাটির নুন কমাতে পারে। আবার এই উদ্ভিদকুল হরিণ, শুয়োর, গণ্ডারদের মতো তৃণভোজীদের বড় প্রিয় খাদ্য। সে জন্য ওই অঞ্চলের সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ছিল পরস্পরের পরিপূরক। একই সঙ্গে ভূমিক্ষয় রোধে ম্যানগ্রোভের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দ্বীপভূমি রক্ষায় তাই এই দুই বনেরই পরিচর্যা দরকার এখনই।
সাগরঘেঁষা সুন্দরবনের পশ্চিমে সাগরদ্বীপ থেকে পূর্বে ভাঙাদোয়ানি পর্যন্ত দ্বীপসমূহ ভূমিক্ষয় ও নিমজ্জমান অঞ্চলে অবস্থান করে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে বিপদ ধরলে আগামী দশ বছরে এই অঞ্চলে ১৩টি দ্বীপ আমরা হারাতে পারি। বিপন্ন ওই অঞ্চলের প্রায় ২.৫ লক্ষ মানুষের (সুন্দরবনের জনসংখ্যার ৬ শতাংশের কিছু বেশি) ভাগ্য। এদের পুনর্বাসন দরকার মূল ভূখণ্ডের লাগোয়া দ্বীপে আর কাজ দরকার নতুন জায়গার পুনর্গঠনে। ২০২০ সালকে সীমারেখা ধরলে এখনই উচিত হবে এই অঞ্চলের জন্য মাস্টার প্ল্যান বানিয়ে কিছু করার। মানুষ সরিয়ে যদি আবার প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় (যা জরুরি) তবে ওখানে সোয়াম্প ফরেস্টের বিকাশ করতে হবে। তখন হয়তো বেড়ে চলা একশৃঙ্গ গণ্ডার দেখতে মানুষ উত্তরবঙ্গে না-গিয়ে সুন্দরবনেও যেতে পারে। শুধু সুন্দরবনের ওই অংশে বনসৃজন করলেই গ্লোবাল ওয়ার্মিংকে ঠেকানো যাবে না ঠিকই, কিন্তু দ্বীপগুলির ভূমিক্ষয় এড়ানো যাবে। কালের ভবিতব্যকে রুখে দিতে না-পারা গেলেও বিলম্বিত করা যাবে।
এটাই চিকিৎসার নিয়ম। সমগ্র দ্বীপ অঞ্চলের অন্যত্রও কর্ষণক্ষেত্রের ব্যাপকতা কিছুটা কমিয়ে বাঁধ-লাগোয়া ম্যানগ্রোভ বনের পিছনে সোয়াম্প ফরেস্টের আদলের কাছাকাছি বাস্তুতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা যায় কি না, চেষ্টা করে দেখতে হবে। এই প্রচেষ্টায় দ্বীপগুলির ভূমিক্ষয় রোধে প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকেও কাজে লাগানো যাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.