খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির পরে পেনশন বিলের বিরোধিতাতেও অনড় থাকলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে একটি চিঠি দিয়ে তৃণমূল নেত্রী দলের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সামগ্রিক ভাবে তাঁর বক্তব্য, পেনশনের অর্থ কতটা সুরক্ষিত থাকবে বা সেই অর্থের পরিমাণ আদতে কমে যেতে পারে কি না, তা নিয়ে তাঁর সন্দেহ দূর করতে পারেনি সরকার। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, পেনশন প্রকল্পের টাকা কোনও মতেই ঝুঁকিপূর্ণ কোনও লগ্নি প্রকল্পে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। পেনশনের টাকা কর্মীদেরই টাকা। তাই ওই টাকা কী ভাবে লগ্নি করা হবে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মীদেরই ১০০ শতাংশ স্বাধীনতা দিতে হবে।
তবে শরিক তৃণমূলের এই বিরোধিতা সত্ত্বেও আপাতত পেনশন বিল থেকে পিছু হটছে না মনমোহন সরকার। কারণ, বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির মতো এ ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান নড়বড়ে নয়। বরং প্রধান বিরোধী দল বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় এই বিল পাশ করানোর ব্যাপারে সরকার এখনও আত্মবিশ্বাসী। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামিকাল লোকসভায় পেনশন বিল পেশ হওয়ার কথা।
গত মার্চ মাসে ওই বিলটি লোকসভায় পেশ হওয়ার পরে তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে গিয়েছিল। ওই কমিটি বলেছিলপ্রথমত, বিনিয়োগকারীর ন্যূনতম আয় সুনিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পেনশন তহবিল পরিচালন সংস্থায় কোনও বিদেশি সংস্থাই ২৬ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না। সরকার এই দু’টি দাবিই মেনে নিয়েছে। তবে সুনিশ্চিত আয়ের প্রশ্নে একটি শর্ত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। সেখানে বলা হয়েছে, যারা সুনিশ্চিত আয় চান, তারা সরকারি বন্ডেই টাকা খাটালে ৮.৬ শতাংশ হারে সুনিশ্চিত আয়ের সুযোগ পাবেন। যাঁরা ঝুঁকি নিয়েও আরও বেশি আয় চান, তাঁরা বিনিয়োগের অন্য ক্ষেত্র বেছে নিতেই পারেন। তৃতীয় একটি সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কেউ চাইলে নির্দিষ্ট সময় পর পেনশন অ্যাকাউন্টের টাকা তুলে নিতে পারবেন। তবে কী কারণে, কী পরিমাণ টাকা, কত দিনের জন্য তুলতে চাইছেন, তা খতিয়ে দেখার পরেই ছাড়পত্র মিলবে। গোড়ায় বিরোধিতা করলেও এই সংশোধনীগুলো মেনে নেয় বিজেপি।
কংগ্রেস শিবিরের ধারণা ছিল, তৃণমূল নেতৃত্বেরও আর এ নিয়ে আপত্তি থাকবে না। কিন্তু মমতা তাঁর চিঠিতে জানিয়েছেন, পেনশন সাধারণ মানুষের নয়নের মণি। তাঁদের অবসর জীবনের ভরসা। অবসরের পরে তাঁদের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা এই টাকাতেই হবে। কিন্তু সেই টাকার পরিমাণ কতটা নিশ্চিত থাকবে, তা নিয়ে তাঁদের সংশয় দূর করতে পারেনি সরকার। ফলে সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখেই দল এই বিলের বিরোধিতা করছে।
আগাগোড়া এই বিলের বিরোধী বামেরা অবশ্য মমতাকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “মমতা বিরোধিতার নাটক করছেন। উনি আসলে জানেন, বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা হয়েছে। ফলে সরকারের বিপদের আশঙ্কা নেই। তবে উনি বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করলেও স্বাগত।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা জবাব, “কে বিরোধিতার নাটক করছে আর কে সমর্থন করছে, এ সব কথা আমি বামদের মুখ থেকে শুনব না। প্রথম ইউপিএ সরকারকে তো বামেরাই সমর্থন করছিলেন, তখনই একই ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি হয়েছিল। ওঁরা বিরোধিতা করেননি।”
সিপিএম অবশ্য এ দিন বিজেপিরও কড়া সমালোচনা করেছে। ইয়েচুরি বলেন, “বিজেপি এবং কংগ্রেস সংস্কারের ক্ষেত্রগুলিতে একই অবস্থান নিচ্ছে। এর আগেও এলআইসি বিলের ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা গিয়েছে।” পাশাপাশি কোনও ব্যক্তি ঠিক কত পরিমাণ পেনশন পাবেন, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানানোরও দাবি করেছেন ইয়েচুরি। বিল পেশ হলে ওই সংশোধনীতে ভোটাভুটি চাইবে বাম শিবির। |