আওতায় প্রধানমন্ত্রী, বাদই রইল সিবিআই
মন্ত্রিসভার সম্মতি মিললেও লোকপাল পাশ নিয়ে সংশয়
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা খসড়া অনুমোদন করে দিলেও লোকপাল বিল ঘিরে সংশয়ের বাতাবরণ কিন্তু থেকেই গেল। সংশয়ের প্রথম কারণ, সরকারি খসড়া অণ্ণা হজারে ও তাঁর অনুগামীদের পছন্দ হয়নি। ফলে ২৭ তারিখ থেকে তিন দিনের ‘অনশন’ এবং তার পর ‘জেল ভরো’ আন্দোলনের কর্মসূচিতে তাঁরা অনড়। দ্বিতীয়ত, সংসদের চলতি অধিবেশনে লোকপাল বিল পাশ করা যাবে কি না, সেটাও অনিশ্চিত। কারণ, হাতে মোটেই সময় নেই। সরকার অবশ্য চাইছে আগামিকালই বিল পেশ করে শুক্রবারের মধ্যে তা পাশ করিয়ে নিতে।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ছাড়পত্র পাওয়ার পরে আজ সন্ধ্যায় লোকপাল বিল নিয়ে আলোচনায় বসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু সংসদে পেশ করার জন্য যে-খসড়া তারা অনুমোদন করেছে, তার অনেক কিছুই অণ্ণা শিবিরের না-পসন্দ। যেমন, সিবিআই-কে লোকপালের আওতায় না রাখা। শুধু তা-ই নয়, সিবিআইয়ের ডিরেক্টর নিয়োগের জন্য যে তিন জনের কমিটি গড়ার কথা বলা হচ্ছে, তাতেও ঠাঁই পাচ্ছেন না লোকপালের কোনও সদস্য। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা এবং প্রধান বিচারপতি ঠিক করবেন কে হবেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার প্রধান। সিবিআইয়ের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণও থাকছে প্রধানমন্ত্রীর অধীন কর্মিবর্গ দফতরের হাতে।
অণ্ণাদের দাবি মেনে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের ভার লোকপালের হাতে দিতেও রাজি হয়নি সরকার। বিলের খসড়ায় বলা হয়েছে, লোকপাল স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কোনও তদন্ত করতে পারবে না। কোনও অভিযোগ হাতে এলে তার তদন্তের জন্য সিবিআই-কে সুপারিশ করতে পারবে তারা। অণ্ণা-শিবিরের বক্তব্য, এর ফলে লোকপাল কার্যত নখদন্তহীন হয়ে পড়বে। সরকার পক্ষের পাল্টা বক্তব্য, তদন্তের জন্য ফোনে আড়ি পাতা থেকে শুরু করে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন। সে সব সিবিআই ছাড়া অন্য কারও হাতে দেওয়া অসম্ভব।
প্রধানমন্ত্রীকে শেষ পর্যন্ত লোকপালের আওতায় রাখা হচ্ছে ঠিকই, তবে বেশ কিছু রক্ষাকবচ দিয়ে। প্রথমত, জাতীয় নিরাপত্তা, পরমাণু শক্তি, মহাকাশ গবেষণা এবং বিদেশ সংক্রান্ত কোনও বিষয় নিয়ে তদন্ত করা যাবে না। তার উপর প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আসা কোনও অভিযোগের তদন্ত করার সুপারিশ করতে গেলে ৯ সদস্যের লোকপালের অন্তত ৭ জনের সম্মতির দরকার হবে।
লোক-শক্তি
প্রধানমন্ত্রীর জন্য রক্ষাকবচ
৭ সদস্যের সম্মতি পেলে তবে তদন্ত
সিবিআই-এর নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেই
ডিরেক্টর নিয়োগেও ব্রাত্য লোকপাল
গ্রুপ সি কর্মীরা সরাসরি লোকপালে নন
তাঁদের সম্পর্কে রিপোর্ট দেবে সিভিসি
লোকপালের সদস্য নিয়োগে সংরক্ষণ
অপসারণে চাই ১০০ সাংসদের আর্জি
আমলাতন্ত্রের নিচুস্তর, অর্থাৎ গ্রুপ সি কর্মীদেরও সরাসরি লোকপালের আওতায় না-রাখার কথাই বলা হয়েছে খসড়া বিলে। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি) তাঁদের উপরে নজর রাখবে। এবং নিয়মিত ভাবে লোকপালকে রিপোর্ট করবে। এই ব্যবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি নন অণ্ণারা। তাঁরা আন্দোলন আরও তীব্র করার হুমকি দিয়েছেন।
সরকার পক্ষ অবশ্য বলছে, এই হুমকিতে তারা উদ্বিগ্ন নয়। কারণ, লোকপাল বিলের চেহারা যা-ই হোক না কেন, অণ্ণারা যে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, সেটা এক প্রকার নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু বিল এক বার পাশ হয়ে গেলে তাঁদের আন্দোলনের জোর অনেকটা কমে যাবে বলেই আশাবাদী কংগ্রেস। বিশেষ করে খসড়া বিলের খুঁটিনাটি কিছু বিষয় ছাড়া বিরোধী দলগুলির যখন বড় রকমের কোনও আপত্তি নেই। ফলে সংসদে নির্বিবাদে বিল পাশ হয়ে যাবে বলেই সরকার মনে করছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, বিল পাশ হবে কবে?
সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা বৃহস্পতিবার। আজ সকালে বিষয় নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়, লোকপাল বিল পাশ করাতে অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হবে। ২৩ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত ছুটি থাকার পরে ২৭ তারিখ থেকে ফের সংসদ বসবে তিন দিনের জন্য। সে কথা ঘোষণাও করে দেন সংসদীয় মন্ত্রী পবন কুমার বনশল। কিন্তু তার পরেই বেঁকে বসেন বহুজন সমাজ পার্টি নেতৃত্ব। পাশাপাশি কংগ্রেসের কিছু সাংসদ পি জে কুরিয়ানের নেতৃত্বে লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের সঙ্গে দেখা করে জানান, বড়দিনের ছুটি ও বর্ষশেষের অনুষ্ঠানের জন্য তাঁদের পক্ষে ওই সময়ে সংসদে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, অরুণ জেটলি, রাজীব শুক্ল-সহ বিরোধী ও শাসক উভয় শিবিরেরই বেশ কিছু নেতা-মন্ত্রীর ওই সময় পূর্ব নির্ধারিত বিদেশ সফর রয়েছে। এমনকী মীরা কুমারেরও মলদ্বীপ সফরে যাওয়ার কথা। ফলে বিকেলে সুর বদলান বনশল। বলেন, সংসদের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।
রাতে ঠিক হয়েছে, আগামিকাল সকালে ফের বিষয় নির্ধারণ কমিটির বৈঠক বসবে। তাতে সরকার প্রস্তাব দেবে, আগামিকালই বিলটি লোকসভায় পেশ করে দেওয়া হোক। তার পর আলোচনা হোক বৃহস্পতিবার। অধিবেশনের মেয়াদ এক দিন বাড়িয়ে রাজ্যসভায় আলোচনা হোক শুক্রবার। দুই সভাতেই আট ঘণ্টা করে আলোচনার প্রস্তাব দেবে সরকার। কাল বিরোধী দলগুলির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও একই কথা বলবেন লোকসভার নেতা তথা অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
কিন্তু এত তাড়াহুড়ো করে বিল পাশ করানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। লালু প্রসাদ ও রামবিলাস আজই সরকারকে তাড়াহুড়ো না-করার পরামর্শ দিয়েছেন। সরকার এবং বিরোধী পক্ষেরও অনেকেই ধীরে চলার পক্ষপাতী।
কংগ্রেস অবশ্য চাইছে লোকপাল বিল সংসদে পেশ করে এক দিনে অণ্ণাদের আন্দোলনকে অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে। অন্য দিকে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন করার কৃতিত্বের ভাগিদার হতে। কাল কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠকে বক্তৃতা দেবেন দলীয় সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সেখানে তিনি লোকপাল বিল তৈরিতে সরকারের উদ্যোগ এবং দায়বদ্ধতাকে সাধুবাদ জানাতে পারেন বলে কংগ্রেস সূত্রে খবর। নানা দুর্নীতির অভিযোগে কোণঠাসা কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর অস্ত্রও এখন লোকপাল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.