সারা বাংলার জন্য যে-ব্যবস্থা, যাদবপুর বিদ্যাপীঠে ভর্তির ক্ষেত্রেও সেটাই মানতে হবে।
সরকারি নির্দেশ মেনেই যাদবপুর বিদ্যাপীঠে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি করতে হবে বলে মঙ্গলবার ফের জানিয়ে দিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। অর্থাৎ ওই স্কুলের প্রাথমিক বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ ১০০ জনকেই সরাসরি পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু আজ, বুধবার ওই স্কুলের পরিচালন সমিতিকে এ কথা জানিয়ে দেবেন বলে দফতর সূত্রের খবর। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, গোটা রাজ্যের জন্য যে-নির্দেশ জারি করা হয়েছে, শুধু যাদবপুর বিদ্যাপীঠের জন্য তার ব্যতিক্রম ঘটাবে না সরকার।
ভর্তির সমস্যা নিয়ে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের পরিচালন সমিতির সদস্যেরা এ দিন সকালে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতির সঙ্গে দেখা করেন। পর্ষদের সভাপতি চৈতালি দত্ত পরে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সরকার ইতিমধ্যেই একটি নির্দেশ পাঠিয়েছে। তাই পর্ষদ এই ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।” তিনি জানান, রাজ্যের আরও কয়েকটি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। সমাধান হয়ে গেলে ওই সব স্কুলও তার সুফল পাবে।
ছাত্র ভর্তি বিতর্কের জের টেনে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা সংস্থা জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কর্মসমিতির সদস্য দেবব্রত রায় এ দিন জানান, প্রাথমিক স্কুলটিও একই সংস্থার গড়া। পরে দু’টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতি আলাদা হয়ে যায়। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের পরিচালন সমিতি অবশ্য ওই প্রাথমিক স্কুলের সঙ্গে তাদের কোনও রকম সংস্রবের কথা অস্বীকার করেছে। পরিচালন সমিতির সম্পাদক দীপক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, জেলা স্কুল পরিদর্শক মারফত খবর পাঠিয়ে আজ, বুধবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে বলা হয়েছে। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার যে সংসদে পাশ হওয়া শিক্ষার অধিকার আইনের কথা মাথায় রেখেই ভর্তি সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছে, পরিচালন সমিতির সদস্যদের সে-কথাই বলা হবে। দীপকবাবু এই প্রসঙ্গে বলেন, “মন্ত্রী ডেকেছেন। আমরা খোলা মনে আলোচনার জন্য যাব।” |
পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে সমস্যা শুধু যাদবপুর বিদ্যাপীঠেই আটকে নেই। স্কুলশিক্ষা দফতরের একাধিক বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে অন্যত্রও। বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিভ্রান্তির জেরে এ দিন উত্তেজনা ছড়ায় বারাসতের কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির পদ্ধতি নিয়ে গোলমাল এক সময় পথ অবরোধ পর্যন্ত গড়ায়। এক দল অভিভাবক ডাকবাংলো মোড়ে যশোহর রোড অবরোধ করেন। ওই বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে স্কুল-কর্তৃপক্ষ ভর্তির জন্য লটারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিক্ষোভ দেখান অন্য এক দল অভিভাবক।
স্কুল সূত্রের খবর, প্রথমে পঞ্চম শ্রেণিতে সব আসনেই লটারির মাধ্যমে ছাত্রী ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারি নির্দেশেও তেমনটাই বলা হয়েছিল। পরে জানানো হয়, দু’-এক কিলোমিটারের মধ্যে যে-সব প্রাথমিক স্কুল রয়েছে, সেখানকার চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের সরাসরি পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করে নিতে হবে। কয়েক দিন আগে শিলিগুড়ির একটি স্কুলে এই নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং অভিভাবকেরা বিক্ষোভ দেখান।
কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়েও প্রথমে সকলের জন্যই লটারি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরের নির্দেশটি পেয়ে স্কুল-কর্তৃপক্ষ ঠিক করেন, প্রতিবেশী প্রাথমিক স্কুলগুলির পড়ুয়াদের জন্য কিছু আসন রেখে বাকি আসনের জন্য লটারি করা হবে। লটারি মঙ্গলবারেই হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু সব আসনের জন্যই লটারির দাবিতে এক দল অভিভাবক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত পথ অবরোধ করেন।
খবর পেয়ে স্কুলে আসেন উত্তর ২৪ পরগনার স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) দীপায়ন দাস। তিনি প্রধান শিক্ষিকা দীপিকা দত্তের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরে স্কুলের তরফে জানানো হয়, ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে লটারি হবে সব আসনের জন্যই। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্কুলের ফটক আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অন্য এক দল অভিভাবক। তাঁদের দাবি, সরকারি নির্দেশ মেনে আশপাশের প্রাথমিক স্কুলগুলির পড়ুয়াদের সরাসরি ভর্তি করতে হবে। ওই অভিভাবকদের হটাতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। বারাসত থানার আইসি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। |