উৎপাদনের খরচ বেড়েছে বহু গুণ। অথচ রাজ্য সরকার দুধের দাম বাড়াতে রাজি নয়।
স্বাভাবিক ভাবেই মাদার ডেয়ারি-র লোকসানের পাল্লা ক্রমশ ভারি হচ্ছিল। যা হাল্কা করতে কম দামি দুধের উৎপাদন কমিয়ে নতুন ব্র্যান্ডের দামি দুধ বাজারে এনেছেন ডেয়ারি কর্তৃপক্ষ। এবং তাঁদের আশা, এতে মুনাফা না-হলেও চলতি অর্থবর্ষে ক্ষতির বহর অনেকটা কমিয়ে আনা যাবে।
বাসের যাত্রীভাড়াই হোক বা থেকে বিদ্যুতের মাসুল রাজ্য কোনওটাই বাড়াতে দেবে না। অনেক ক্ষেত্রে পরিষেবায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যেমন, রাস্তায় বাস কমে গিয়েছে। লোকসানের ভারে ন্যূব্জ হয়েছে সরকারি সংস্থাগুলি। দুধের ক্ষেত্রেও দাম বাড়াতে না-দেওয়ায় গত বছর পর্যন্ত লাভে চলা মাদার ডেয়ারি ক্রমেই ভর্তুকি-নির্ভর হয়ে পড়ছে। মাদার ডেয়ারির সব পণ্যের মধ্যে সর্বাধিক বিকোয় ডবল টোন্ড দুধ (ডিটিএম)। যার দাম লিটারপিছু ২১ টাকা, গরুর দুধ ও টোন্ড দুধের চেয়ে কম। এ দিকে দুধে প্রোটিন আনতে দৈনিক যে ২০ টন পাউডার লাগে, গত এক বছরে তার দাম টনপিছু ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮৫ টাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার কর্তারা। অন্য দিকে মাদার ডেয়ারির নিজস্ব প্রায় পাঁচশো কর্মী ও চারশো ঠিকা-কর্মীর মজুরি বেড়েছে।
অন্য বেসরকারি সংস্থা দুধের দাম কয়েক দফা বাড়ালেও মাদার ডেয়ারি পারেনি। উপরন্তু বাড়তি খরচের চাপে তা লোকসান করতে শুরু করে। রাজ্যের দুগ্ধ কমিশনার উদয়শঙ্কর নন্দী বলেন, “গত অর্থবর্ষে সংস্থাটি লাভ করেছিল। কিন্তু চলতি বছরের গোড়া থেকে লোকসান। উৎপাদন খাতে শুধু সেপ্টেম্বরেই ক্ষতি ৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা!”
অবশেষে সঙ্কটের সুরাহায় কর্তৃপক্ষ এমন একটা পরিকল্পনা করেন, এক কর্তার কথায় “যাতে সাপ মরে, লাঠিও না-ভাঙে।” অক্টোবরের শেষাশেষি ডবল টোন্ডের উৎপাদন কমিয়ে বাজারে আনা হয় নতুন নামের দুধ মা শক্তি। এর দাম বেশি, লিটার ৩০ টাকা। উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী মাদার ডেয়ারি কোনও নতুন ব্র্যান্ড চালু করতে চাইলে সরকারের অনুমোদন ছাড়াই করতে পারে।
এবং এ ক্ষেত্রে তা-ই করে তারা ফলও পেয়েছে হাতে-নাতে। উদয়বাবু জানাচ্ছেন, “দেড় মাসেই ‘মা শক্তি’র চাহিদা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার লিটার। এতে মাদার ডেয়ারির লোকসান অনেকটাই সামাল দেওয়া গিয়েছে। এর উৎপাদন ধাপে ধাপে বাড়ানো হবে।” পাশাপাশি ডবল টোন্ডের উৎপাদন বন্ধ না-হলেও পরিমাণ অনেকটাই কমবে বলে সংস্থা-সূত্রের খবর। |