কিম কী ভাবে ‘মার্ক্সবাদী’, প্রশ্নের মুখে সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কিম জং ইলের মৃত্যুতে দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা বা জাপানের উদ্বেগ স্বাভাবিক। কারণ তাঁর অনভিজ্ঞ পুত্র পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়াকে কোন দিকে নিয়ে যাবেন, কেউই তা বুঝে উঠতে পাচ্ছেন না। কিন্তু এই একনায়কের প্রয়াণে ‘গভীর শোকাহত’ হয়ে পড়েছে সিপিএম নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে উত্তর কোরিয়ায় দীর্ঘ শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু শোকের সেই বার্তা নিয়ে বাম মহলেই প্রশ্ন উঠেছে।
পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়াকে বরাবরই সমাজতান্ত্রিক দেশের মর্যাদা দিয়ে থাকে সিপিএম। উত্তর কোরিয়ার উপরে আমেরিকার চাপ তৈরির চেষ্টাকেও ‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়ে এসেছে সিপিএম। দলের নেতা সীতারাম ইয়েচুরি জানান, গত কালই কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আজকের শোকবার্তায় উত্তর কোরিয়াকে যে ভাবে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ ও সমাজতন্ত্রের ধ্বজাধারী আখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। |
পিয়ং ইয়ংয়ের কুমসুসান মেমোরিয়াল প্যালেসে শায়িত
কিম জং ইলের দেহ। মঙ্গলবার। ছবি: এ এফ পি |
কেন্দ্রীয় কমিটির বক্তব্য, “কমরেড কিম জং ইল শেষ সময় পর্যন্ত মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ ও সমাজবাদের নীতি রক্ষা করে গিয়েছেন।” দলের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, কিম জং ইলের মৃত্যুর পর যে ভাবে তাঁর পুত্র কিম জং উনকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করা হয়েছে, কোন লেনিনবাদী সাংগঠনিক তত্ত্বে তা রয়েছে? দলের নেতারা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টিতে দীর্ঘ দিন কোনও পার্টি কংগ্রেসই হয়নি। কিম জং উন দেশের মিলিটারি কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন। উত্তরসূরি হিসাবে তুলে আনতে তাঁর বাবাই তাঁকে সে পদে ‘নিয়োগ’ করেছিলেন। ‘কমরেড কিমের ইচ্ছাতেই’ কোনও দলীয় নির্বাচনের ধারে কাছে না গিয়ে সেই তরুণকে গোটা দেশের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই তা নিয়ে গোটা বিশ্ব উদ্বিগ্ন। অথচ সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেখানে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ খুঁজে পাচ্ছেন!
মজার কথা, আরেক বাম দল সিপিআইয়ের তরফেও কিম জং ইলের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই বার্তায় কিম জং ইলের সঙ্গে মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের সম্পর্কটি সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁকে শুধুই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াকু নেতা আখ্যা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এ বি বর্ধন। সিপিএম-সিপিআই সূত্রে খবর, উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকরা চাইছিলেন, সমস্ত শোকর্বাতা নতুন রাষ্ট্রনায়ক কিম জং উনকেই পাঠানো হোক। এ দেশের বামেরা সে পথে না হেঁটে উত্তর কোরিয়ার মানুষ ও ওয়ার্কার্স পার্টির উদ্দেশেই শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। ২৮ ডিসেম্বর কিমের শেষকৃত্য। |