|
মাসুল কয়েক কোটি |
৩৭ বছরেও ব্যাঙ্ককের জমি কাজে
লাগাতে পারেনি কেন্দ্র
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি |
|
জমিতে ঘাস গজিয়ে গিয়েছে, কিন্তু লালফিতের আড়াল থেকে সমাধান উঁকি মারেনি। অথচ সেই জমি পরিদর্শন করতে কয়েক দশকে বিদেশ মন্ত্রকের আমলা-প্রতিনিধিদল এক ডজন তাইল্যান্ড সফর করে ফেলেছেন!
তাইল্যান্ড সফর কেন? জমিটা যে সেখানেই। ১৯৭৪ সালে ব্যাংককে ২৫ লক্ষ টাকায় ৪৫২৪ বর্গফুটের একটি জমি কিনেছিল ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। চার দশকে একের পর এক সরকার বদলিয়েছে। আমূল বদলে গিয়েছে দেশের অর্থনীতি, বিদেশনীতির ধাঁচ। কিন্তু সেই জমিতে একটা ইটও বসেনি। অথচ প্রতি বছর তাইল্যান্ডে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের থাকার জন্য ঘরভাড়া বাবদ সরকারের ২ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। আমলাদের বারংবার তাইল্যান্ড সফরে এতগুলো বছরে কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে।
রাজনৈতিক সূত্র বলছে, সিদ্ধান্তহীনতার জন্য এই পরিমাণ মাসুল গোনার দৃষ্টান্ত বিরল। সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি) তার সাম্প্রতিক রিপোর্টে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পিএসি-কে জানানো হয়েছে, শীঘ্রই ব্যাংককের ওই জমিতে দূতাবাস-কর্মীদের আবাসন বা সংস্কৃতি-কেন্দ্র গড়া হবে।
কেন এত দিন ধরে ঝুলে রয়েছে বিষয়টি? প্রাথমিক ভাবে জমি কেনার সময় স্থির হয়েছিল, ওই জমিতে নতুন দূতাবাস হবে। ১৯৮২ সালে সাউথ ব্লক যে প্রতিনিধিদলটিকে ওখানে পাঠায়, তারা প্রস্তাব দিয়েছিল এই জমি বিক্রি করে দেওয়া হোক। কারণ ওখানে একটি সরু গলি দিয়ে ঢুকতে হয়। তাই ওটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু জমি বেচে দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেয় তৎকালীন সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ এবং এখনও পর্যন্ত শেষ প্রতিনিধিদলটি তাইল্যান্ড যায়। ফিরে এসে সরকারের কাছে তারা প্রস্তাব দেয় যে, ওই জমি তাইল্যান্ডে নিযুক্ত ভারতীয় আমলাদের স্থায়ী বাসভবন তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তা হলে ঘরভাড়ার বিপুল অর্থ গুনতে হয় না।
বাসভবন তৈরি শুরু হল না কেন? বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, সরু গলির সমস্যা সমাধান না করে তারা নির্মাণকাজে হাত দিতে চাইছে না। ইতিমধ্যে আরও একটি বছর ঘুরে যেতে বসেছে। বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ সম্প্রতি লোকসভায় বলেছেন, “সরু গলি থাকার জন্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই আমাদের আরও কিছুটা সময় লাগবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে।”
১৯৭৪ সাল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বিদেশমন্ত্রী এখনও বলছেন, সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় লাগবে। এই দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে। দু’বছর আগে সরকার যখন ঘোষিত ভাবে ব্যয়সঙ্কোচ নীতি নিয়েছিল, সেই সময় পাঁচতারা হোটেলে থেকে বিতর্কের সূত্রপাত করেছিলেন কৃষ্ণ। তিনি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বেআইনি খনি-লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগেও সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়েছে রাজনৈতিক শিবির। ব্যয়সংক্ষেপ করতে চলতি বছরেও অন্তত ২৪ জন মন্ত্রীর বিদেশসফর বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন ফারুক আবদুল্লা, সলমন খুরশিদ, কুমারী শৈলজা, অজয় মাকেন প্রমুখ। পর্যটনমন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়ের বিদেশসফরের প্রস্তাব তো খারিজ হয়েছে তিন তিন বার! অথচ তাইল্যান্ডের জমি দেখতে আমলাদের বিদেশ সফর বন্ধ হয়নি।
১৯৭৪ থেকে ২০১১ কোটি কোটি টাকা খরচ করে একটাই সিদ্ধান্তে এখনও অবধি পৌঁছতে পেরেছে সরকার। কৃষ্ণ জানিয়েছেন, সরকার জমিটি বিক্রি করতে চায় না। কারণ, ব্যাঙ্ককের কেন্দ্রে এমন একটি জমি আবার পাওয়ার সম্ভাবনা কম। |