মাওবাদীদের নদিয়া-মুর্শিদাবাদ-কালনা জোনাল কমিটির সম্পাদক তাজেম শেখের ‘আশ্রয়দাতা’ আশরফ শেখের রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট হয়নি শনিবারও।
শুক্রবার দুপুরে চাপড়ার হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আশরফের বাড়িতেই খোঁজ মিলেছিল তাজেমের। বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ওই মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতারের পর খোঁজ পড়েছিল আশরফের। কিন্তু সেই ‘তৃণমূল’ নেতার খোঁজ মেলেনি এ দিনও।
আশরফের রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রশ্নে পুলিশ এ দিনও স্পষ্ট করে কিছু বলতে চায়নি। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমন মিশ্র বলেন, “আশরফের রাজনৈতিক পরিচয় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাছে বড় খবর তাজেম ধরা পড়েছে।” পুলিশ দায় এড়ালেও ওই জনপ্রতিনিধির স্ত্রী আলেয়া বিবি অবশ্য এ দিন স্পষ্টই জানান, তাঁর স্বামী ‘তৃণমূল করতেন।’ তিনি বলেন, “আমার স্বামী তৃণমূল করতেন, এ তো সবাই জানেন। সেই কারণেই সিপিএম তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। পুলিশের সঙ্গে শুক্রবার তাই সিপিএমের লোকজনও আমাদের বাড়িতে চড়াও হয়েছিল।” আলেয়া জানান, তাজেম কোনও দিনই তাঁদের বাড়িতে আশ্রয় নেননি। তাঁর অভিযোগ, “শুক্রবার পুলিশ কোথা থেকে ওই লোকটিকে নিয়ে এসে আমাদের বাড়িতে ঢুকিয়ে দিল। অস্ত্রগুলো তো পুলিশই সঙ্গে করে এনেছিল।”
আলেয়া একা নন, চাপড়ার ব্লক তৃণমূল সভাপতি হরিদাস প্রামাণিকেরও দাবি, “আশরফ বেশ কিছু দিন আগেই আমাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন।” চাপড়া ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি শুকদেব ব্রহ্ম বলেন, “বেদবেড়িয়ার পঞ্চায়েত সদস্য আশরফ আমাদের দলের এক জন সক্রিয় কর্মী ঠিকই, তবে আমি নিশ্চিত, মাওবাদীদের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না।” স্থানীয় যুব তৃণমূলের নেতা সইফুদ্দিন শেখও এ দিন বলেন, “আশরফ তো আমাদের দলেরই সক্রিয় কর্মী। জেলার বড় নেতারা হয়তো সবটা না জেনেই আশরফকে কর্মী বলে পরিচয় দিচ্ছেন না।”
২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন আশরফ। কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই তিনি তৃণমূলের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন বলে জানা গিয়েছে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সমর চক্রবর্তীও মেনে নিচ্ছেন, বেদবেড়িয়া গ্রামের ওই পঞ্চায়েত সদস্য আদপে কংগ্রেসের টিকিটেই জয়ী হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমাদের টিকিটে জয়ী হলেও গত দু’বছর ধরে আশরফ তৃণমূলে ভিড়েছে।”
চাপড়ার প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের শামসুল ইসলাম মোল্লা বলেন, “আশরফকে সবাই তৃণমূল নেতা বলেই চেনে। এখন দায় এড়াতে তৃণমূল তাঁকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে।” প্রসঙ্গত, শুক্রবার তাজেম শেখ গ্রেফতারের পরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা যুবকল্যাণ মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, আশরফের সঙ্গে দলের কোনও ‘সম্পর্ক’ নেই।
তাজেম শেখের বাড়ি নাকাশিপাড়ার বাদবিল্ব গ্রামে। তবে গত দশ বছর তিনি বাড়ি-ছাড়া। শুক্রবার টিভি-তে খবর শুনে মেয়ে তানিয়াকে নিয়ে আদালতে ছুটে এসে ছিলেন তাঁর স্ত্রী মহিমা বিবি। এসিজেএম আদালত তাঁর দশ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তানিয়া বলেন, “খুব ছোট বেলায় বাবাকে দেখেছিলাম। তার পর কোনও যোগাযোগ ছিল না। তবুও আমার বিশ্বাস, বাবা কোনও অন্যায় করতে পারে না।”
|
তৃণমূল ‘আক্রান্ত’
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
হাঁসখালির হরিণডাঙায় সুকুমার ঢালি নামে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা। তৃণমূলের অভিযোগ, শনিবার রাতে কংগ্রেসের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ওই হামলায় সুকুমারবাবুর স্ত্রী ও পুত্র আহত হন। নেতার স্ত্রী ঝর্নাদেবীকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, সুকুমারবাবুর অনুগামীরাই তাদের মারধর করেছে। |