শেয়ার বাজারের পতন, বিদেশি মুদ্রার বাজারে অনিশ্চিয়তা এবং মূল্যবৃদ্ধির যাঁতাকল। এই ত্র্যহস্পর্শে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার ক্রয়ক্ষমতা পড়ে যাওয়ার জমানায় সাধারণ লগ্নিকারীরা দিশাহারা। আর, ঠিক তখনই মুশকিল আসানের ভূমিকায় আবির্ভূত সেই সাবেকি সোনা।
গত ৩ বছরে শেয়ার সূচক সেনসেক্স যখন পড়েছে ৪০০০ পয়েন্ট, তখন সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে বেড়েছে ১৮ হাজার টাকা। ভবিষ্যতেও সোনা আরও ওপরে উঠতে পারে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এর জেরে উল্কাগতিতে বাড়ছে সোনায় লগ্নি। লগ্নিকারীদের আগ্রহ দেখে গোল্ড এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা গোল্ড ইটিএফ ছাড়ার ধুম পড়ে গিয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলির মধ্যে।
গোল্ড ইটিএফের জনপ্রিয়তা কত দ্রুত বাড়ছে, তা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (এনএসই)-এর তথ্যের দিকে একটু চোখ বোলালেই বোঝা যাবে। ২০০৭ সালে বাজারে ছিল ১টি মাত্র গোল্ড ইটিএফ প্রকল্প। সেখানে এখন বাজারে ১১টিরও বেশি প্রকল্প চালু আছে। প্রকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বেড়েছে লগ্নিও। এনএসইতে ২০০৬-২০০৭ সালে যেখানে গোল্ড ই টি এফ ফান্ডে
মোট লেনদেন ১৩.৯৫ কোটি টাকা, সেখানে ২০১০ -’১১ সালে তা ৩১৩% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৭৪.৩০ কোটি টাকা।
গোল্ড ইটিএফ কী? এটি একটি মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প। তবে এর বিশেষত্ব হল, প্রকল্পে কেনা ইউনিটগুলি শেয়ার বাজারেই কেনাবেচা করা যায়। সাধারণত কমপক্ষে ১ গ্রাম অথবা আধ গ্রাম সোনা কিনতে হয় এক একটি ইউনিটে। অন্যান্য মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পে টাকা লগ্নি করে যে ইউনিটগুলি কেনা হয়, তা ওই মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাকেই বিক্রি করে টাকা তুলে নিতে হয়। কিন্তু গোল্ড ইটিএফ ইউনিট যে কোনও সময়েই শেয়ার বাজারে বিক্রি করে টাকা তুলে নিতে পারেন লগ্নিকারী। সোনার দাম ওঠা বা পড়ার ওপর নির্ভর করে ওই সব ইটিএফ ইউনিটের বাজার দর।
তবে যে সব লগ্নিকারী প্রতি ইউনিটে কমপক্ষে ১ কিলোগ্রাম সোনা কিনবেন, তাঁদের কাছে অবশ্য দুটি বিকল্প থাকবে। তাঁরা শেয়ার বাজারে যেমন ওই ইউনিট বিক্রি করতে পারবেন তেমনই ইচ্ছা করলে সংশ্লিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থার কাছে ইউনিট ফেরত দিয়ে তার পরিবর্তে সোনার বার নিতে পারেন।
কী ভাবে গোল্ড ইটিএফ ইউনিট কিনবেন? দু’ভাবে ইটিএফ কেনা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড যখন ওই প্রকল্প বাজারে ছাড়ে তখন আবেদনপত্র জমা দিয়ে সরাসরি সংস্থার কাছ থেকেই ইটিএফ কেনা যায়। এ ছাড়া শেয়ার বাজার থেকে পুরনো শেয়ারের মতো ইটিএফও কিনতে পারেন লগ্নিকারী।
বাজার থেকে সরাসরি সোনা না কিনে গোল্ড ইটিএফ কেনার সুবিধা কী? প্রশ্ন উঠতে পারে, গোল্ড ইটিএফ কেন, সরাসরি সোনাতেই তো লগ্নি করা যেতে পারে। এটা ঠিক, গোল্ড ইটিএফের মাধ্যমে সেই সোনাই কিনছেন লগ্নিকারী। তবে গোল্ড ইটিএফের মাধ্যমে কেনার বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন
• বাজারের দোকান থেকে সোনা কিনলে তার মান নিয়ে অনেক সময়েই সমস্যা হতে পারে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সোনা কিনলে সে সমস্যা থাকে না। কিন্তু সে ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম বাবাদ ৫ থেকে ৭% বাড়তি দাম দিতে হয়।
• বাজার অথবা ব্যাঙ্ক থেকে কেনা সোনা মজুত করার অনেক সমস্যা। ব্যাঙ্কের লকারে রাখলে তার জন্য ভাড়া গুনতে হবে। বাড়িতে রাখলে চুরি-ডাকাতির ঝুঁকি বহন করতে হবে। বিমা করলে গুনতে হবে তার প্রিমিয়াম। গোল্ড ইটিএফে ওই সব সমস্যা নেই। কারণ, এ ক্ষেত্রে ডি-ম্যাট ব্যবস্থায় ইটিএফ ইউনিটগুলি জমা থাকে।
• ইটিএফে কেনা সোনা অতি সহজেই শেয়ার বাজারে বিক্রি করা যায়। বিক্রির সময়ে সোনার পরিমাণ কোনও ভাবে কমার সম্ভাবনাই নেই। বাজার থেকে কেনা সোনার ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
• করের ব্যাপারেও ইটিএফের মাধ্যমে কেনা সোনায় সুবিধা পাওয়া যায়। বাজার থেকে সোনা কেনার সময়ে ১% হারে ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু গোল্ড ইটিএফে তা আদৌ দিতে হয় না। দিতে হয় না কোনও বিক্রয় করও। শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে যে সিকিউরিটি ট্রানজ্যাকশন ট্যাক্স বা শেয়ার লেনদেন সংক্রান্ত কর লাগে, গোল্ড ইটিএফের ক্ষেত্রে তাও লাগে না।
তবে গোল্ড ইটিএফ কেনার পরে তা ৩ বছরের আগে বিক্রি না-করলে তবেই লগ্নিকারী ‘ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স’ বা মূলধনী লাভ করের আওতায় আসবেন। আগে বিক্রি করে দিলে মুনাফার উপরে সাধারণ আয়করের হারই প্রযোজ্য হবে।
এ ছাড়া যেহেতু ব্রোকারের মাধ্যমে ইটিএফ কেনা বেচা করতে হয়, তাই ব্রোকারেজ দিতে হয় লগ্নিকারীকে। ওই ব্রোকারেজ সর্বোচ্চ ০.৫% হতে পারে। তবে সাধারণত ০.২ শতাংশ ব্রোকারেজেই বাজারে কাজ হয় বেশি।
অন্য দিকে সোনা কেনার আরও একটি বাজার হল পণ্যের আগাম লেনদেনের বাজার বা ‘কমোডিটি মার্কেট’। এখানে সোনার আগাম লেনদেন হয়।
তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, সাধারণ লগ্নিকারীরা, যাঁরা দীর্ঘ মেয়াদে সোনায় লগ্নি করতে চান, তাঁদের পক্ষে গোল্ড ইটিএফই উপযুক্ত ক্ষেত্র। স্বল্প মেয়াদে লগ্নির ক্ষেত্রে কমোডিটি মার্কেট সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকলে তবেই সেখানে লগ্নি করা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা।
তা ছাড়া আগাম লেনদেনের বাজারে অনেক সময়েই বড় লগ্নিকারীরা ফাটকা খেলেন। ফাটকা কারবারের ফেরে পড়ে সাধারণ লগ্নিকারীদের হাত পোড়ানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সোনায় লগ্নির জন্য মিউচুয়াল ফান্ডগুলি সাধারণ গোল্ড ফান্ডও বাজারে ছাড়ে। যেগুলিকে বলা হয় ‘গোল্ড সেভিংস ফান্ড’। প্রকল্পে সংগৃহীত অর্থ মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলি গোল্ড ইটিএফ অথবা সরাসরি সোনায় লগ্নি করে। কিন্তু ওই সব ইউনিট শেয়ার বাজারে কেনা-বেচা করা যায় না। সাধারণ মিউচুয়াল ফান্ডের নিয়মেই ইউনিটের নেট অ্যাসেট ভ্যালু বা ন্যাভ ঠিক হয়। ন্যাভের ভিত্তিতেই সংশ্লিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থার কাছে ইউনিট ভাঙাতে হয়।
তবে গোল্ড ইটিএফে লগ্নি করতে হলে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক, গোল্ড সেভিংস ফান্ডে এখনও তা নয়। কিছু প্রকল্পে অবশ্য লগ্নিকারী ইচ্ছা করলে ডি-ম্যাটে ইউনিট রাখতে পারেন।
|
গ্রাহক সুবিধার্থে একগুচ্ছ পরিষেবা চালুর কথা জানাল এসবিআই কার্ডস। এখন থেকে ইন্টারনেট বা সরাসরি ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা জমা দেওয়া-সহ মোট ১৪টি উপায়ে গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডের টাকা মেটানোর সুযোগ পাবেন। ইউরো-পে, ভিসা, মাস্টার কার্ড-সহ নানা প্ল্যাটফর্মেই ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যাবে। ফোন ছাড়াও, সরাসরি এসএমএস করেও অসুবিধার কথা ব্যাঙ্ককে জানানো যাবে। |