জাল মদ
রাতে হাজার টাকায়
জুটে যায় ডেরা
শুধু মাওবাদীরা নয়, ওঁরাও ঘন ঘন ডেরা বদলান।
প্রতি রাতের ‘ভাড়া’ হাজার টাকা। সুবিধাজনক জায়গা দেখে সাধারণত বেছে নেওয়া হয় কোনও গরিব মানুষের বাড়ি। তড়িঘড়ি বোতলে স্পিরিট, মাদক ক্যাপসুল, জল, রং, গন্ধদ্রব্য ঢেলে এঁটে দেওয়া হয় ছিপি। রাতারাতি তৈরি হয়ে যায় বোতল বোতল হুইস্কি, রাম, ভদকা।
সবই জাল!
ঝকঝকে বোতলে সাঁটা নামী সংস্থার চেনা লেবেল। ছিপি খুললে পরিচিত গন্ধ। অথচ দাম কখনও অর্ধেক, কখনও তার চেয়েও কম। দু’একটা বড় ‘সাপ্লাই’ যাওয়ার পরেই পাল্টে ফেলা হয় ডেরা। আর ঠিক এই কারণেই বহু সময়ে জাল মদের কারবারিদের হাতে-নাতে ধরা যাচ্ছে না বলে দাবি আবগারি দফতরের। যদিও শুধু সেটাই কারণ বলে মানতে রাজি নন অনেকেই।
গত কয়েক বছর ধরে বর্ধমানের যে এলাকা আবগারি কর্তাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তার নাম পূর্বস্থলী। আবগারি দফতর সূত্রের খবর, বছর ছ’য়েক আগে থেকেই পূর্বস্থলীর হেমায়েতপুর, সুলুট, দোগাছিয়া, কাষ্ঠশালী-সহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে নকল বিদেশি মদের (ফেক ফরেন লিকার) ঢালাও কারবার। নদিয়া লাগোয়া এই এলাকায় জাল মদের কারবার চালায় মূলত তিন জন। কালনা মহকুমা জুড়ে ছড়ানো রয়েছে তাদের বহু এজেন্ট। শুধু বর্ধমান নয়, নবদ্বীপের ঘড়িঘাট মারফত নদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ওই মদ পৌঁছে দেয় এজেন্টরা।
জাল মদ তৈরির কাজটা কিন্তু সহজ নয়। কেননা সব উপকরণ এক জায়গায় মেলে না। মূল উপকরণ স্পিরিট পূর্বস্থলীতে আসে কাটোয়া থেকে। কলকাতার কিছু এলাকায় বিক্রি হয় নামী সংস্থার বোতলের হুবহু নকল, ছিপি, লেবেল, মাদক ক্যাপসুল। এক সময়ে কালনার দায়িত্বে থাকা আবগারি অফিসার (বর্তমানে মুর্শিদাবাদের কান্দি শাখার দায়িত্বে) দিলীপ বসাক বলেন, “মূলত স্পিরিট, জল, মাদক ক্যাপসুল ও গন্ধ মিশিয়েই তৈরি করা হয় জাল বিদেশি মদ। তবে ঠিকঠাক মেশানো না হলেই বিপদ। সে ক্ষেত্রে ওই মদ খেলে শারীরিক ক্ষতি তো বটেই, প্রাণনাশের আশঙ্কাও থাকে।”
দিলীপবাবুই জানান, পূর্বস্থলী জুড়ে মাকড়সার জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে জাল মদ তৈরির কারবার। এজেন্টরা গ্রামে-গঞ্জে মুদির দোকান-সহ নানা জায়গায় ছড়িয়ে দেয় ওই মদ। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে সেই পরিমাণটা আরও বেড়ে যায়। এর পাশাপাশি চলছে চোলাইয়ের কারবারও। নাদনঘাট, দাসপাড়া, বিদ্যানগর, শ্রীরামপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় এর রমরমা। কালনার মেদগাছি, মন্তেশ্বরের পাড়ুন-সহ বিভিন্ন জায়গাতেও গজিয়েছে ছোট-বড় চোলাই ও জাল মদের ঘাঁটি।
সম্প্রতি আবগারি দফতর অভিযান চালিয়ে প্রায় আড়াইশো লিটার চোলাই ও চোলাই তৈরির সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করেছে। যদিও তা কার্যত সমুদ্র থেকে এক ঘটি জল তোলার সামিল। জাল মদ তৈরির কোনও পান্ডাকেও ধরা হয়নি। আবগারি দফতরের কালনা শাখার ওসি বিষ্ণুপদ রায় বলেন, “পূর্বস্থলীতে জাল মদের কারবারের সঙ্গে মূলত তিন জন যুক্ত রয়েছে। তাদের নামে আগেও মামলা করেছে আবগারি দফতর। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।”
সব জেনেও কেন আটকানো যাচ্ছে না জাল মদ?
ওসি-র বক্তব্য, “চোরা কারবারিরা বারবার ডেরা পাল্টায়। একটা ঠেক বন্ধ করলে গজিয়ে ওঠে আর একটা।” তাঁর দফতরেরই এক অফিসার বলেন, “বেশির ভাগ সময়ই বেছে নেওয়া হয় কিছু গরিব লোকের বাড়ি। রাত পিছু ভাড়া হাজার টাকা। ডেরা খুঁজতেই আমরা হয়রান।”
বিষ্ণুপদবাবুর আশ্বাস, সপ্তাহখানেক লাগাতার অভিযান চালানো হবে।
কিন্তু তার পরে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.