বিএসএফের গুলিতে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার পারবৈদ্যনাথপুর এলাকা। বুধবার ভোর ৪টে নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ওই সীমান্ত গ্রামে। পুলিশ জানায়, মৃত সারিফুল ইসলাম (২০)। ওই ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা যুবকের মৃতদেহ দুপুর ২ টো অবধি আটকে দোষী জওয়ানদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিএসএফের ডিআইজিকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তাঁর বাড়ির লোকজনদের অভিযোগ, মাছ ধরে ফেরার সময়ে বিনা প্ররোচনায় বিএসএফ সারিফুলকে আটকায়। বিনা পয়সায় মাছ না-দেওয়ায় তাঁকে গুলি করে মারা হয়েছে বলে বাড়ির লোকজন থানায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু, বিএসএফের তরফে ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়েছে। বৈষ্ণবনগর থানায় বিএসএফ সারিফুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। বিএসএফের অভিযোগ, সারিফুল দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্তে চোরাচালন সহ নানা অসামাজিক কাজকর্মে যুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে বিএসএফের উপরে হামলার অভিযোগ আগেও উঠেছে বলে পুলিশের দাবি। ওই দিনও চোরাচালানের সময়ে বাধা দিতে গেলে সারিফুল হামলা চালালে এক জওয়ান গুলি চালাতে বাধ্য হন বলে বিএসএফ পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “মৃত যুবকের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। তাঁর বাড়ির লোকজন একটি অভিযোগ দিয়েছেন। বিএসএফও অভিযোগ জমা দিয়েছে। ওই যুবকের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে আগেও কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিন মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে সারিফুলের কাকা এক্রামূল শেখের অভিযোগ, “রাতভর মাছ ধরার পরে ভোরে ভাইপোকে পাড়ে রেখে নৌকা নিয়ে ফের যখন জলাশয়ের দিকে যখন যাচ্ছি, তখন ৩ জন বিএসএফ জওয়ানের সঙ্গে ভাইপোর ঝগড়া হয়। ভাইপো মাছ দিতে অস্বীকার করতেই জওয়ানরা পর পর চরটি গুলি করে। আমরা ভয়ে এগোইনি।” তবে গুলির শব্দ শুনে গ্রামের বাসিন্দা রবু শেখ ও তার মেয়ে যান। এর পর তারাই সারিফুলের বাড়িতে খবর দেন। রবু শেখ বলেন, “নমাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন আমার মেয়ে তাজগারা বলে বাবা চরটি গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখি তিনজন জওয়ান জলাশয়ের পাশ গিয়ে ক্যাম্পের দিকে চলে গেল। জলাশয়ের কাছে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত সারিফুল কাঁতরাচ্ছে। সারিফুলের বাবাকে খবর দিই। কিন্তু তার আগেই সে মারা যায়।” সাতভাই বোনের মধ্যে সারিফুল সবচেয়ে বড়। বাবা সাইদুল সেখ বলেন, “আমার ছেলের কোন শত্রু নেই। সীমান্তে প্রায় গুলির আওয়াজ শুনি। আজ ভোরে গুলির শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গেছিল ঠিকই, কিন্তু ভাবতেই পারিনি জওয়ানরা আমার ছেলেকে গুলি করে খুন করেছে। আমি বৈষ্ণবনগর থানায় বিএসএফের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুন করার অভিযোগ করেছি।” বিএসএফের ডিআইজি প্রতুল গৌতম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। তিনি বলেন, “কি হয়েছে আমি তা দেখতে এসেছিলাম। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না।” |