চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত একটি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে। ইন্দাস ব্লকের যশদিঘি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ঘটনা।
এই সমবায়ের পরিচালন কমিটির ক্ষমতাসীন তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’ ও ‘স্বজনপোষণ’-এর অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে দলেরই অন্য গোষ্ঠী। সম্প্রতি এ ব্যাপারে ইন্দাসের বিডিও থেকে শুরু করে বিধায়ককে লিখিত অভিযোগও করেছেন ওই সমবায় সমিতির সদস্য এবং তৃণমূলের একাংশ। বস্তুত, এই ঘটনায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও এক বার প্রকাশ্যে এল ইন্দাসে। যদিও দুর্নীতির অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সমবায় সমিতিটির সম্পাদক তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা রামকৃষ্ণ সরকার। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিডিও চয়নকুমার সাহা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ নভেম্বর যশদিঘি সমবায় সমিতিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীপদে দু’জনকে নিয়োগ করা হয়। ওই দু’জনের মধ্যে এক জন হলেন সমবায় সমিতির সহকারী ম্যানেজার অরুণ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে। অন্য জন হলেন সমবায়েরই কর্মী শিশির মাঝির ছেলে ঝন্টু মাঝি। এই নিয়োগকে ঘিরেই উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুনীল গোস্বামী, সমর মণ্ডল, প্রসেনজিৎ মণ্ডলদের অভিযোগ, “কর্মী নিয়োগে আগাম কোনও বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই চুপিসাড়ে সমবায়ের দুই কর্মীর ছেলেকে নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগে মোটা টাকার লেনদেনও হয়েছে।” এলাকার বাসিন্দা তথা যুব তৃণমূল নেতা সাহেব মাঝি, উজ্জ্বল মাঝি, রাজকুমার পাঁজাদের ক্ষোভ, “বিজ্ঞপ্তি দিলে স্থানীয় বেকার যুবকেরা ওই পদে আবেদন করতে পারতেন। স্বচ্ছভাবে কর্মী নিয়োগ হত। কিন্তু তা করা হয়নি। এক ব্লক নেতার অঙ্গুলিহেলনে বেনিয়ম করে ওই দু’জনকে নিয়োগ করা হয়েছে।”
সহকারী ম্যানেজার অরুণবাবু বা সমবায়ের কর্মী শিশিরবাবু দুর্নীতির অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, “সরকারি নিয়ম মেনেই আমাদের ছেলেদের নিয়োগ করা হয়েছে।” সমিতির সম্পাদকেরও একই দাবি। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য দলেরই (তৃণমূল) কেউ কেউ মিথ্যা রটনা করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন। এলাকার মানুষ সব জানেন।” সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান অশোক পাঁজা অবশ্য বলেছেন, “আমাকে কিছু না জানিয়েই এই নিয়োগ করা হয়েছে। পরে জানতে পেরে প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু আমি একা কিছু করতে পারিনি।”
ওই সমবায়ে কর্মী-নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন ইন্দাস ব্লক তৃণমূল সভাপতি রবিউল হোসেন। তবে দলেরই অন্য গোষ্ঠীর নেতা, ব্লকের সাধারণ সম্পাদক গৌতম বেরা বলেন, “দুর্নীরি বিষয়টি জানি। আমরা চাইছি এর তদন্ত করুক প্রশাসন।” সিপিএমের ইন্দাস জোনাল কমিটির আহ্বায়ক অসীম দাসের টিপ্পনী, “ক্ষমতায় এসেই তৃণমূল যে ব্যাপক দুর্নীতি শুরু করেছেন, তা যশদিঘি সমবায়ে কর্মী নিয়োগ থেকেই প্রমাণিত। শুধু আমরা নয়, ওদের দলেরই একাংশ এ সব সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে প্রতিবাদের রাস্তায় নেমেছেন।” ইন্দাসের বিডিও চয়নকুমার সাহা বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। সমবায় পরিদর্শককে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ব্লক সমবায় পরিদর্শক প্রতীক রায় জানান, তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |