সোমা মুখোপাধ্যায়ের ‘বাড়িতেই বেশি প্রসব, সুন্দরবনে বিধ্বস্ত শিশুস্বাস্থ্য’ প্রতিবেদনের প্রসঙ্গে এই চিঠি। আমি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ গ্রামীণ ধাত্রী (যাদের ‘দাই’ বলা হয়), নারী ক্ষমতায়ন ও নারী স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণা করে চলেছি। এ বিষয়ে আমার ‘বাংলার দাই’ নামে একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মানুষকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন প্রবন্ধও লিখেছি।
গত সেপ্টেম্বরে আমি সুন্দরবনের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম গোসাবা ব্লকের সাতজেলিয়ার জেমসপুরে যাই। ওখানে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে প্রসূতি ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ক কাজের তাগিদেই আমাদের যাওয়া। আয়লাবিধ্বস্ত ওই এলাকার অবস্থা সত্যিই ভয়ানক। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘের সঙ্গে সংগ্রামরত ওই মানুষদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, প্রসূতি-চিকিৎসা ও শিশু-চিকিৎসার কী দারুণ প্রয়োজন। আমার নিজেরও মনে হয়েছে, এমন প্রত্যন্ত এলাকায় শুধু সরকার নয়, সময়-সচেতন প্রতিটি মানুষেরই অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে এলাকার গ্রামীণ ধাত্রী বা দাই-মায়েদের যদি প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তা হলে তারা মা ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে যেমন আপৎকালীন সহায়তা দিতে পারবে, তেমনই দুর্গম এলাকাতে তারাই স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করতে পারবে। সরকারের পক্ষ থেকে এক সময় সারা পশ্চিমবঙ্গেই এমন অনেক গ্রামীণ ধাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যুক্তও আছে কোনও কোনও জায়গায়। সুন্দরবনের ক্ষেত্রেও এই প্রশিক্ষণের বিষয়টি কি সরকারের পক্ষ থেকে একবার বিবেচনা করা যায় না? |
গ্রামীণ ধাত্রীদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। তার সঙ্গে যদি আধুনিক ধাত্রিবিদ্যার একটা মেলবন্ধন ঘটানো যায়, তা হলে নিশ্চয়ই তাদের দ্বারা সমাজের উপকার হবে। একজন মা-ই আর একজন মায়ের ভাষা সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারে। এর মনে হয় কোনও বিকল্প নেই। আমাদের দেশে মেয়েদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা অবহেলিত। আর এই অসুবিধা উপলব্ধি হয় যখন একজন গর্ভবতী হয়। প্রসবের সময় আর পরে মেয়েদের যে নানা শারীরিক উপসর্গ দেখা যায় তার মূল কারণ মায়ের অপুষ্টি আর রক্তাল্পতা, যা একজন মা তার নিজের জন্মের সময় থেকেই পারিবারিক অবহেলার কারণে পেয়ে থাকে। আর এই সব বিষয়ই যথাযথ সচেতন করতে পারে একমাত্র যথাযথ ভাবে প্রশিক্ষিত গ্রামীণ ধাত্রী।
সোমা মুখোপাধ্যায়। কলকাতা-৬
|
অপরাজিত নয়, পথের পাঁচালী |
সীমান্ত গুহঠাকুরতার ‘বেনারসে বেওয়ারিস’ (রবিবাসরীয়, ৪-১২) লেখাটির দ্বিতীয় পর্বের শুরুতে ‘কাশীতে আসিয়া হরিহরের আয়ও বাড়িল...তোমার কেবল বসে বসে পরামর্শ আঁটা’ অংশটি উদ্ধার করা হয়েছে। যা আসলে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসের অক্রুর সংবাদ খণ্ডের ত্রিংশ পরিচ্ছেদভুক্ত (পৃ ১৪৮/ মিত্র-ঘোষ পেপারব্যাক সংস্করণ/ ১৪০৯)। অথচ সীমান্তবাবু এই উদ্ধৃতিটি ‘অপরাজিত’ উপন্যাসের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন, যেখানে হরিহর আদৌ বেঁচে ছিলেন না।
ঋতম মুখোপাধ্যায়। অংশকালীন শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, চন্দননগর কলেজ, হুগলি
|
সর্ব স্তরের আদালতে জমে-থাকা মামলার চাপ তথা পাহাড় কমাতে শনি ও রবিবার রাজ্যের সব জেলায় একাধিক আদালত খুলে রাখতে চাইছে রাজ্য সরকার। (‘শনি-রবিতেও কিছু কোর্টে কাজ চায় রাজ্য’, ৭-১২) দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার অনুকূলে এ-হেন সিদ্ধান্ত বৃহত্তর সমাজ ও মানব কল্যাণে সর্ব স্তরের মানুষের কাছে খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে তা যে কতখানি কার্যকর হবে, সেটাই দেখার। কলকাতা হাইকোর্টে দীর্ঘ তিরিশ বছর প্র্যাক্টিসের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কত মামলার ডিসপোজাল হত তখন। মহামান্য বিচারপতিগণ দুই পক্ষের বা পক্ষ সমূহের সওয়াল জবাব শোনার পর মামলার নথি-কাগজপত্র-রেকর্ডাদি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সমীক্ষা-অবলোকন-অবজারভেশন, বিশ্লেষণ ও তর্জমায় জাজমেন্ট দিতেন বা কেসের আবেদনপত্র বা আপিলের বিচার সুরাহা তথা নিষ্পত্তি ঘটাতেন। এখন সে সব কোথায়!
কোর্টে কোর্টে মামলার ফাইলাধিক্যের তুলনায় এত কম জজ নিয়োগ হচ্ছে যে, তাতেই মামলার পাহাড় জমছে দিনের পর দিন। জজেরা অবসর নেওয়ার পর তেমন নতুন নিয়োগের তৎপরতাই পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সর্বাগ্রে তাই রাজ্য সরকারের অবিলম্বে সক্রিয় ভূমিকা তথা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নচেৎ শুধুমাত্র ছুটির দিন শনি-রবিবারেও কিছু কোর্টে জোর করে ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ চাওয়ার নামে কাজের চেয়ে অকাজই বেশি হবে।
শ্রীধর পাঞ্জা। অ্যাডভোকেট, কলকাতা হাইকোর্ট
|
আনন্দবাজার পত্রিকায় ইন্দিরা মামণি রয়সম গোস্বামীর মৃত্যুসংবাদে (৩০-১১) ছবির ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে ‘শেষ শ্রদ্ধা’। সংবাদের মধ্যেও আছে ‘বহু গুণমুগ্ধ সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান’। পরের লাইনেও আছে, ‘শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন’। শোকসংবাদ লিখতে গিয়ে এই ‘শেষ শ্রদ্ধা’ বাক্যবন্ধটি প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মৃত্যুকালে যে শ্রদ্ধা জানানো হয়, সেটা ‘শেষ’ শ্রদ্ধা হবে কেন? তার পর কি আমরা তাঁকে আর শ্রদ্ধা জানাব না? সুনীলকুমার পাল। লাভপুর, বীরভূম |