সিন্ডিকেটের জুলুম এ বার কাঁটা মেট্রো সম্প্রসারণেও
সিন্ডিকেটের ‘জুলুমে’ বেশ কয়েক দিন ধরে বন্ধ মেট্রো রেলের সম্প্রসারণের কাজ। অভিযোগ, দমদম ন’পাড়া এলাকায় মেট্রো রেলের কারশেডের কাছে এই কাজে নিযুক্ত এক ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার উপর এলাকার কয়েকটি সিন্ডিকেটের ‘জুলুমের’ জেরে নির্মাণ কাজের জন্য কংক্রিট তৈরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই সাইটে ট্রাক ঢোকাও বন্ধ। ওই সংস্থার আশঙ্কা, এ রকম পরিস্থিতি চললে নির্ধারিত সময় আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দমদম থেকে বরাহনগর পর্যন্ত মেট্রো রেলের স্তম্ভ তৈরির কাজ শেষ হবে না। শেষ হবে না স্টেশন তৈরির কাজও।
দমদম থেকে মেট্রো রেলের সম্প্রসারণের কাজ চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে। একটি পর্যায়ে কাজ হচ্ছে দমদম থেকে বরাহনগর হয়ে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত। আরেকটি হচ্ছে দমদম থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। বরাহনগর পর্যন্ত মেট্রো যাওয়ার পিলার এবং বরাহনগর স্টেশন তৈরি করার কথা ওই ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার। এয়ারপোর্ট পর্বের আংশিক কাজও তাদের করার কথা। এই কাজের জন্য ন’পাড়ার সাইটে পাথরকুচি, বালি ও সিমেন্ট মিশিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ ঘনমিটার কংক্রিট তৈরি করা হয়। সংস্থার অভিযোগ, এলাকার কয়েকটি সিন্ডিকেটের জুলুমবাজিতে গত চার-পাঁচ দিন ধরে এই কাজ পুরোপুরি বন্ধ।
কিন্তু অবস্থা এমনই যে, গোড়ায় স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানাতেও সাহস করেননি তারা। শেষ পর্যন্ত বুধবার বিকেলে বরাহনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। উত্তর চব্বিশ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “কেউ যদি নাম গোপন করতে চান, তা হলে আমরা সেই গোপনীয়তা বজায় রেখেই কাজ করি। সিন্ডিকেটের যে কোনও জুলুমবাজিই আমরা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। এই অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখা হবে।”
কেন বন্ধ রাখতে হচ্ছে কাজ? ওই ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থার সাইট ইনচার্জ প্রান্তিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “মূলত গণ্ডগোলটা পাকাচ্ছে স্টোন চিপস, বালি, সিমেন্টের দর নিয়ে। স্থানীয় সিন্ডিকেটগুলো যে দাম বলছে, সেটা আমাদের নির্দিষ্ট দামের থেকে অনেক বেশি। আমরা তা না মানায় ওরা সাইটে ট্রাক ঢোকা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকী হুমকি দিয়েছে যে, ওদের কাছ থেকে মাল না নিলে কাজই করতে দেবে না।”
থমকে রয়েছে কাজ। অর্কপ্রভ ঘোষের তোলা ছবি।
সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের নির্দিষ্ট কিছু কন্ট্রাক্টর আছে। তারাই মূল কাজটা করে। তবে যে এলাকায় কাজ হয় সেখানকার সিন্ডিকেটদেরও মাল সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়। ন’পাড়া এলাকায় কাজ শুরু হওয়ায় পর কয়েকটি স্থানীয় সিন্ডিকেট এসে দাবি করে তাদেরও মাল সরবরাহ করতে দিতে হবে। তাতে রাজি হয় সংস্থাটি। কিন্তু সমস্যা হয় কিছু সিন্ডিকেটের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে। সংস্থার আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, তাদের এই প্রোজেক্টে রেজিস্টার্ডসিন্ডিকেট ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে মাল কেনার নিয়ম নেই। কারণ, ভ্যাট যুক্ত করে চূড়ান্ত বিল দিতে হয়। সংস্থার অভিযোগ, বেশির ভাগ স্থানীয় সিন্ডিকেটেরই রেজিস্ট্রেশন করার ব্যাপারে অনীহা। ভ্যাট দিতেও তাদের আপত্তি। সমস্যার সেটাই সূত্রপাত। তার পর সিমেন্ট-বালির দাম নিয়ে তা চূড়ান্ত আকার ধারণ করে।
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এক বর্গ ফুট ২০ মিলিমিটার পাথরকুচির নির্ধারিত দাম ৫২ টাকা। কিন্তু স্থানীয় সিন্ডিকেটদের দাবি ৫৬ টাকা। এক বর্গ ফুট ‘মিডিয়াম স্যান্ড’-এর দাম যেখানে নির্ধারিত করা আছে ২৫ টাকা, সেখানে সিন্ডিকেটের দাবি ৩০ টাকা। ওই সংস্থার বক্তব্য, দশটি সিন্ডিকেটের মধ্যে চারটি তাদের দর মেনে নিয়েছে। কিন্তু বাকি সিন্ডিকেটগুলি এক জোট হয়ে তাদেরও মাল দিতে বাধা দিচ্ছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, সংস্থার নির্ধারিত কন্ট্রাক্টরদের ট্রাক বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আটকে দিয়েছে সিন্ডিকেটগুলি। প্রতিদিন কমপক্ষে দশটি ট্রাক আসার কথা থাকলেও গত পাঁচ দিনে একটিও আসেনি। ফলে প্রতিদিন শুধু যে ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকার কংক্রিট তৈরি বন্ধ রয়েছে তা-ই নয়, প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিন প্রায় দশ লক্ষ টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। তার উপর সময়ে কাজ করতে না পারলে মেট্রো রেলকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সংস্থার বক্তব্য, সিন্ডিকেটগুলির মুখপাত্র হিসেবে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তাপস মজুমদারের সঙ্গে তাদের কর্তারা সমস্যা নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন। কিন্তু কোনও সমাধান সূত্র উঠে আসেনি। এ প্রসঙ্গে তাপসবাবু বলেন, “আমি কোনও সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত নই। তবে আমার কাছে স্থানীয় কিছু সিন্ডিকেট এসেছিল। ওদের অভিযোগ, ওই ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাটি প্রথমে ভ্যাট যোগ করার কথা বলেনি। পরে ভ্যাট যোগ করে দাম নির্ধারণ করছে। ফলে তাদের লোকসানের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সেই কারণে তারা দর পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে।” তাপসবাবুর আরও বক্তব্য, স্থানীয় সিন্ডিকেটগুলি ওই সংস্থার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনেছে। তাদের অভিযোগ, যেখানে পনেরো দিনের মধ্যে পেমেন্ট দেওয়ার কথা সেখানে চার-পাঁচ মাস দেরি করছে সংস্থাটি। তাপসবাবু বলেন, “এ জন্য যে সিন্ডিকেটগুলি সংস্থার দেওয়া দরে রাজি হয়েছে তারাও মাল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য সিন্ডিকেটগুলি মোটেই তাদের বাধা দেয়নি। আর অন্য কন্ট্রাক্টর যারা মাল দিচ্ছে তাদের কাজের বাধা দেওয়ার অভিযোগও মিথ্যা।” সংস্থার তরফে অবশ্য দেরি করে পেমেন্ট দেওয়ার অভিযোগ মানতে চাওয়া হয়নি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.