বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: কণার ভরের সীমা নিয়ে ধারণা
মিলল শুধু অস্তিত্বের ‘ইঙ্গিত’, ঈশ্বর কণা অধরাই
ধরাই থাকল ঈশ্বর কণা। কেবল মাত্র ইঙ্গিত রেখে গেল তার অস্তিত্বের।
যেখানে গত দু’বছর ধরে চলেছে তার খোঁজ, সেই সার্ন-এর ডিরেক্টর জেনারেল রল্ফ হয়্যার আজ সন্ধ্যায় ঘোষণা করলেন, “আমরা এখনও তার স্পষ্ট দেখা পাইনি। তবে, তার মানে এই নয় যে তা নেই। আমরা তার অস্তিত্ব মোটেই বাতিল করে দিচ্ছি না। মনে রাখবেন আমাদের হাতে এসেছে শুধু প্রাথমিক ফলাফল। আরও পরীক্ষা, আরও ফলাফলের অপেক্ষায় পরীক্ষা চলবে।”
গভীর আগ্রহ নিয়ে বসেছিলেন গোটা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা। কেননা, কথা ছিল, সার্নে আজই ভারতীয় সময় সন্ধ্যাবেলা বিশেষ সেমিনারে দু’দল গবেষক ঘোষণা করবেন তাঁদের দু’বছর ধরে চালানো পরীক্ষার ফলাফল। সবাই বসেছিলেন, ওই দু’দলের পরীক্ষালব্ধ তথ্যে জানা যাবে ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব। তা হল না। যা জানালেন দু’দল বিজ্ঞানী, তা হল, ওই কণা, যা বিশ্বের সব কণাকে ভারী করে তোলে, তা নিজে কত ভারী, তার ইঙ্গিত তাঁরা পেয়েছেন আলাদা আলাদা পরীক্ষায়। এবং দেখা যাচ্ছে, দু’দলের প্রাপ্ত ইঙ্গিত খুব কাছাকাছি।
এই ইঙ্গিতকে খুব উৎসাহব্যঞ্জক মনে করছেন সার্নের তাত্ত্বিক বিভাগের সদ্যঅবসরপ্রাপ্ত প্রধান অধ্যাপক জন এলিস। যিনি আজ এখানে ‘টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ’ (টিআইএফআর)-এ এক বক্তৃতা দিলেন ঈশ্বর কণা বিষয়ে। তাঁর বক্তৃতার পরই টিআইএফআর-এ সরাসরি দেখানো হল সার্নের আলোচনাচক্র।
পরীক্ষার ফলাফল জানাচ্ছেন সার্নের কর্তা রল্ফ হয়্যার (ডান দিকে)। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি
ওয়েবকাস্ট-এ সরাসরি তা দেখার পরে অধ্যাপক এলিস আনন্দবাজারকে বললেন, “আমি মনে করি, বিজ্ঞানীরা হিগস্-বোসন (ঈশ্বর কণার বৈজ্ঞানিক নাম)-এর প্রাথমিক ইঙ্গিত পেলেন।”
কেন এ কথা বলছেন? অধ্যাপক এলিসের জবাব, “আজ সার্নের অ্যাটলাস এবং সিএমএস, এই দুই ডিটেক্টরের গবেষকেরা যে ফলাফল পেশ করলেন তাতে দেখা গেল, অ্যাটলাস দল তাঁদের পরীক্ষায় বুঝতে পেরেছেন, হিগস্-বোসনের ভর ১১৬ থেকে ১৩০ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট (বিজ্ঞানের পরিভাষায় পদার্থের ভর গ্রাম, কিলোগ্রামের বদলে এই এককেই প্রকাশ করা হয়)। আবার সিএমএস দল জানালেন, তাঁদের পরীক্ষা বলছে, হিগস্-বোসনের ভর হবে ১১৫ থেকে ১২৭ গিগা ঈলেকট্রন ভোল্টের মধ্যে। দু’দলের সিদ্ধান্ত খুব কাছাকাছি। এর থেকে আমরা দু’টো জিনিস সম্পর্কে নিশ্চিত হলাম। এক, হিগস্-বোসনের অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। দুই, তাকে এ বার ভরের ওই দু’টি সীমার মধ্যে খুঁজলেই পাওয়া যাবে।”
অধ্যাপক এলিস তাঁর বক্তৃতায় আজ ব্যাখ্যা করলেন, কী ভাবে সার্নে মাটির একশো মিটার নীচে ২৭ কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গে আলোর ৯৯.৯৯৯৯৯১ শতাংশ গতিবেগে মুখোমুখি ছুটন্ত প্রোটন কণার সংঘর্ষ হয়েছে গত দু’বছর ধরে। সেই সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়েছে কোটি কোটি চূর্ণ-বিচূর্ণ কণা। আর তাদের মধ্যে খোঁজ চলেছে হিগস্-বোসনের। দু’টি ডিটেক্টরে খোঁজা হয়েছে ওই নির্দিষ্ট কণাটি। একটি ডিটেক্টর হল অ্যাটলাস, অন্যটি সিএমএস।
সার্নে আজ ফলাফল ঘোষণার আগে পর্যন্ত অ্যাটলাস বা সিএমএস, দুই দলের সদস্যরা কেউ জানতেন না অন্য দল কী ফলাফল ঘোষণা করতে চলেছে। এই ব্যবস্থা বিশেষ সাবধানতার জন্য। ঈশ্বর কণা বা হিগস্-বোসন আবিষ্কৃত হলে তা হবে পদার্থবিদ্যায় ইদানীং কালের সব থেকে বড় চমক। যাতে তাড়াহুড়ো করে কোনও এক দল শুধু কৃতিত্বের লোভে ভুল দাবি না করে বসে, তাই এই সাবধানতা। যদি দেখা যেত দুই দল একেবারে একই রকম ইঙ্গিত পেয়েছে, তা হলে ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব আজই চূড়ান্ত ভাবে ঘোষিত হত। কিন্তু আজকের ফলাফলের পর চূড়ান্ত প্রমাণের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে আগামী বছর পর্যন্ত।
তার বদলে আজ যা হল, তাকে কী বলা যায়? কবি হলে হয়তো লিখতেন, শুধু তার বাঁশি শোনা গেল, সে ধরা দিল না!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.