উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। মাস দু’য়েক হল কর্মীদের বেতনও বন্ধ। সম্প্রতি বকেয়া না মেটানোয় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। কারখানা-সংলগ্ন কর্মী আবাসন ও শ্রমিক আবাসনও এখন অন্ধকারে। সব মিলিয়ে ক্রমশই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে কল্যাণী স্পিনিং মিলের অশোকনগর এবং কল্যাণী ইউনিটের ভবিষ্যৎ। প্রায় রোজই মিলের গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন কর্মচারীরা। দিন কয়েক আগে পথ অবরোধও হয়েছিল। কল্যাণী স্পিনিং মিলের কল্যাণী এবং অশোকনগর ইউনিটের শ্রমিক-কর্মচারীদের আপাতত এই দশা।
সোমবার সকাল থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত অশোকনগর ইউনিটের সামনে সিটুর পক্ষ থেকে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিটুর উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী রঞ্জিত কুণ্ডু, অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সত্যসেবী কর, সিপিএমের হাবরা জোনাল কমিটির সম্পাদক বাবলু কর প্রমুখ। রঞ্জিতবাবু বলেন, “কল্যাণী স্পিনিং মিলটি রাজ্য সরকার তুলে দিতে চাইছে। কিন্তু মিলের অবস্থা তুলে দেওয়ার মতো নয়। এর পুনরুজ্জীবন সম্ভব। বামফ্রন্ট সরকার যৌথ উদ্যোগে মিলটি চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। এই সরকার শিল্পের কথা বলছে অথচ রাজ্য সরকার পরিচালিত মিলটি তারা বন্ধ করে দিতে চাইছে। যা শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী।” |
সিপিএমের দাবি, মিলটি এক সময়ে লাভজনক ছিল। বাম সরকার শ্রমিকদের পে-কমিশনের আওতায় আনে। নতুন শ্রমিকও নিয়োগ হয় বাম আমলে। সত্যসেবীবাবু বলেন, “বর্তমানে মিলটি অলাভজনক হলেও বাম সরকার ভর্তুকি দিয়ে শ্রমিকদের স্বার্থে মিলটি চালু রেখেছিল। অথচ বর্তমান সরকার মিলটি বন্ধ করে দিতে চাইছে।”
শ্রমিক-কমর্চারীদের বক্তব্য, মাইনে থেকে আবাসনের বিদ্যুতের বিলের টাকা কেটে নেওয়া হয়। তারপরেও কেন অন্ধকারে কাটাতে হবে?
অশোনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সমীর দত্ত অবশ্য বলেন, “বামফ্রন্ট সরকার প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার উপর বিদ্যুতের বিল বকেয়া রেখে মিলটি বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিছু দিন আগে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। কিন্তু পুরসভার পক্ষ থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের আবাসনের বাসিন্দাদের জন্য পানীয় জল ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিলটির বর্তমান অচলাবস্থা কাটানোর জন্য বিভাগীয় মন্ত্রী মানস ভুঁইঞার কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।” কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও মিলটি খোলার বিষয়ে আন্দোলন হচ্ছে। অশোকনগর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি জীবন সিংহরায় বলেন, “শ্রমিকদের স্বার্থে আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি। শীঘ্রই মানস ভুইঁঞার সঙ্গে দেখা করে মিলটি খোলার আবেদন জানানো হবে।”
কী বলছেন মিল কর্তৃপক্ষ?
মিল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানকার যাবতীয় সমস্যা নিয়ে কয়েক দিন আগেই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং বিভাগীয় মন্ত্রী মানস ভুঁইঞার দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয়েছে। সেখানে অর্থমন্ত্রীর কাছে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মিল সূত্রের খবর, কল্যাণী ও অশোকনগর মিলিয়ে এখানে শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে এগারোশো। দু’মাস আগে যখন দু’টি ইউনিটের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়, তখন বকেয়া ছিল প্রায় ৬০ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা। মিলটির ম্যানিজং ডিরেক্টর তথা সংশ্লিষ্ট দফতরের যুগ্ম সেক্রেটারি সুব্রত সরকার বলেন, “সমস্যাটি রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে জানানো হয়েছে। এখন সব সিদ্ধান্ত তাঁরাই নেবেন। শ্রমিকদের বেতন মেটানোর বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।” |