অভিযোগ পাটাশিমুলে
স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর নামে ভুয়ো ঋণ
স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর নাম করে ভুয়ো ঋণ নেওয়ার অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম ব্লকের পাটাশিমুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। বিষয়টি জানাজানি হতেই কয়েকটি ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ দেখিয়ে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু ওই গোষ্ঠী-সদস্যদের হাতে লেনদেনের ‘পাস-বই’ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। প্রাথমিক ভাবে ২৭টি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর নামে বরাদ্দ ঋণে গরমিল ধরা পড়েছে।
ঋণ প্রদানকারী ঝাড়গ্রাম ব্লকের ‘অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘ’ একটি স্বশাসিত সংস্থা। ডিআরডিসি (জেলা গ্রামোন্নয়ন কাউন্সিল) থেকে আর্থিক সহযোগিতা পায় মহাসঙ্ঘ। অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘের সম্পাদিকা অমিতা মাহাতোর দাবি, “ব্লকের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৩৬টি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীকে আমরা ঋণ দিয়েছি। কেবল মাত্র পাটাশিমুল অঞ্চলের স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। ঋণ চাওয়ার আবেদনপত্রে গোষ্ঠী-সদস্যদের স্বাক্ষর থাকে। ফলে গরমিল হওয়ার কথা নয়।” সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সম্পদ-কর্মী স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীগুলির দেখভাল করেন। পাটাশিমুল অঞ্চলের সম্পদ-কর্মী হলেন মধুমিতা পড়িহারি। মধুমিতাদেবী আবার অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘের কোষাধ্যক্ষাও। মধুমিতাদেবীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি কোনও কথা বলতে চাননি। ঝাড়গ্রামের বিডিও সুদীপনারায়ণ ওঝা বলেন, “মহাসঙ্ঘ থেকে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে পঞ্চায়েত-প্রশাসনের সরাসরি কোনও ভূমিকা নেই। অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ধরনের মহাসঙ্ঘ হচ্ছে ‘অ্যাপেক্স ব্যাঙ্কিং’। মহাসঙ্ঘ থেকে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীগুলি ন্যূনতম সুদে ধার নিতে পারে। এক একটি গ্রাম-সংসদ এলাকার একাধিক স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীকে নিয়ে ‘উপ-সঙ্ঘ’ গঠন করা হয়। প্রতিটি উপ-সঙ্ঘ থেকে দু’জন করে সদস্যকে নিয়ে পঞ্চায়েত স্তরে ‘সঙ্ঘ’ গঠন করা হয়। প্রতিটি পঞ্চায়েতে একটি করে এ ধরনের সঙ্ঘ হলে সেই সঙ্ঘগুলিকে নিয়ে ব্লকস্তরে একটি ‘মহাসঙ্ঘ’ গঠন করা হয়। প্রতি সঙ্ঘ থেকে দু’জন করে সদস্যকে নিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে মহাসঙ্ঘের পরিচালন কমিটি গঠন করা হয়। ঝাড়গ্রাম ব্লকের মহাসঙ্ঘটির নাম ‘অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘ’। পাটাশিমুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একাধিক স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর সদস্যরা প্রশাসনিক মহলে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে ঋণ-কাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্তও দাবি করেছেন। একই দাবি করেছে তৃণমূল ও সিপিএম।
পাটাশিমুল অঞ্চলের মোহনপুর গ্রামের বাবা লোকনাথ স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর সভাপতি সুমন মাহাতো বলেন, “কয়েক মাস আগে আমরা জানতে পারি, গত দু’বছর ধরে এলাকার বহু স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর নামে নথি জাল করে আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে। মহাসঙ্ঘের প্রদেয় লেনদেনের নথির প্রতিলিপি জোগাড় করে জানতে পারি, ২০১০-১১ বর্ষে আমাদের গোষ্ঠীর নামে ঋণ মঞ্জুর হয়েছে। চলতি বছরের অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে টাকাও দেওয়া হয়েছে। অথচ ঋণ মঞ্জুরের বিষয়ে আমরা বিন্দুবিসর্গ জানতাম না। আমাদের সদস্যেরা কোনও টাকাও পাননি।” পাটাশিমুলের খয়েরবনি মহিলা উন্নয়ন স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর সদস্যা কল্পনা শবর ও সুমিতা শবরদের বক্তব্য, “আমাদের গোষ্ঠীর নামে গত অগস্টে ১২ হাজার টাকা ঋণের টাকা তোলা হয়েছে বলে জেনেছি। কারা আবেদন করলেন আর কারা টাকাটা পেয়েছেন সেটাই বুঝতে পারছি না।” গত সেপ্টেম্বরে খয়েরবনি মা লক্ষ্মী স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর নামে ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করে সেই টাকা দেওয়াও হয়েছে। অথচ পুরোটাই ভুয়ো বলে দাবি করেছেন ওই গোষ্ঠীর সম্পাদিকা সলমা সরেন। খয়েরবনি মা দুর্গা স্ব-সহায়ক দলের নামেও ১৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হলেও সদস্যারা কোনও টাকাই পাননি বলে জানিয়েছেন। মোহনপুর শাল-মহুয়া স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর নামে মাস তিনেক আগে সাড়ে সতেরো হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা বিডিওকে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছেন যে, তাঁরা কোনও টাকা পাননি।
পাটাশিমুলের স্থানীয় যুবক নটরাজ পাত্র মাস দেড়েক আগে তথ্য জানার আইনে অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘের সম্পাদিকা অমিতা মাহাতো এবং ঝাড়গ্রামের বিডিও সুদীপনারায়ণ ওঝার কাছে পদ্ধতিগত ভাবে আবেদন করে পাটাশিমুল পঞ্চায়েতের কতগুলি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীকে কত টাকা করে ঋণ দেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। কিন্তু কোনও তথ্য জানানো হয়নি এখনও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.