সাত পাক ঘোরা হয়ে গিয়েছিল। মালা বদলও সারা। কিন্তু মৃগীর প্রকোপে বর বিয়ের পিঁড়িতেই অচৈতন্য হয়ে পড়ায় বিয়ে বানচাল করে দিলেন কনে। সোমবার রাতে কেতুগ্রাম থানার তৈপুর গ্রামের ঘটনা।
এখানেই শেষ নয়। বিয়ে ভেস্তে যাওয়ার পরে টাকা দাবি করে বরপক্ষকে গ্রামে আটকে রাখেন কনের বাড়ির লোকজন। রাতভর তাঁদের আটকে রাখা হয়। শেষে সোমবার সকালে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ গিয়ে পাত্র, পাত্রের বাবা ও বরযাত্রীদের উদ্ধার করে। দু’পক্ষই অবশ্য জানিয়েছেন, আলোচনার ভিত্তিতে মেয়ে-পক্ষের হাতে সত্তর হাজার টাকা তুলে দেওয়ার পরেই মুক্তি পেয়েছেন পাত্র। কেতুগ্রাম থানার আইসি আব্দুল গফ্ফর বলেন, “বিয়ে ভেস্তে যাওয়ার পরে বরযাত্রীদের আটকে রাখা হয়েছে খবর পেলে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে আনে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর পুজোর পরে আসানসোলের ধেমোমেন কোলিয়ারির বাসিন্দা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কেতুগ্রামের তৈপুর গ্রামের দেবশ্রীর বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে তাঁরা মোবাইল ফোনে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। দেবশ্রীর বাবা ধীমান ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “অভিজিতের যে মৃগী রোগ আছে, তা আমাদের জানানো হয়নি। ওরা রোগ চেপে রেখে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। আমাদের ভাগ্য ভাল, সিঁদুর দানের আগেই সব জানাজানি হয়ে গেল।”
কিন্তু মৃগী রোগ থাকা কি অপরাধের? ধীমানবাবুর জবাব, “রোগ থাকাটা অপরাধ নয়। কিন্তু রোগ চেপে রেখে বিয়ে করাটা অন্যায়। এটা এক ধরনের প্রতারণা।” পাত্রীর দাদা শ্যামবাবুর কথায়, “আমার বোন পাত্রকে ওই অবস্থায় দেখে একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সে আর ওই পাত্রকে বিয়ে করতে রাজি নয়।” |
রাতেই বিয়ের সাজ খুলে ফেলেন দেবশ্রী। সোমবার সকালে একটি ঘরে বসে তিনি শুধু বলেন, “মৃগী রোগীকে বিয়ে করব না।” এর পরে আর কোনও কথা বলতে তিনি রাজি হননি। আগের রাতে যে একটা ঝড় বয়ে গেছে, সেই চিহ্ন তার চোখেমুখে স্পষ্ট। একই অবস্থা অভিজিতেরও। সকালেও বিয়ের পোশাকেই ছিলেন তিনি। কেতুগ্রাম থানায় বসে তাঁর দাবি, “আমরা পরস্পরকে ভালবেসে ফেলেছিলাম। কিন্তু দেবশ্রীর বাড়ির লোকজন বিয়ে হতে দিল না।” অভিজিৎ জানান, সাত পাকে ঘোরা, মালাবদল হওয়ার পরে বিয়ের পিঁড়িতে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তাঁর কথায়, “আমার মৃগী আছে। ৮ বছর আগে শেষ বার হয়েছিল। ওষুধ খেতাম। ভেবেছিলাম, হয়তো ভাল হয়ে গিয়েছি। তাই আর ওঁদের বলার কথা মনেও হয়নি।”
কিন্তু বিয়ের রাতেই যে আবার মৃগীর প্রকোপ দেখা দেবে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি অভিজিৎ। ভাবেননি, ওই রোগের জন্যই বিয়ে ভেস্তে যাবে তাঁর।
আসানসোলের সাঁতশায় একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী অভিজিৎ। তাঁর বাবা ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায় ইসিএলে কর্মরত। বিয়েতে আসানসোল থেকে ৪৫ জন বরযাত্রী এসেছিল কেতুগ্রামে। গোলমাল হতে তাঁদের একাংশ তৈপুর ছেড়ে চলে যান। বরযাত্রীদের অভিযোগ, বিয়ের খরচ-খরচা মেটানোর দাবিতে ২০ জন বরযাত্রীকে আটকে রাখা হয়। তাঁদের মধ্যে তারাপদ মাঝি, তপন মণ্ডল, সুধীর মাঝিদের অভিযোগ, “একটি ঘরে আমাদের ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওদের হাতে টাঙি, রামদা ছিল। ভয়ে আমাদের প্রাণ উড়ে যায়।”
পাত্রের বাবা ভুবনবাবুর কথায়, ‘‘কেতুগ্রাম থানার পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করলেও ওদের হাত থেকে মুক্তি পাইনি। সত্তর হাজার টাকা দিয়ে তবে ছাড়া পেয়েছি।” আর ধীমানবাবু বলেন, “আমরা গরিব। অনেক করে মেয়ের বিয়ের টাকা জোগাড় করেছিলাম। আবার তো মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। তাই খরচ-খরচা বাবদ ওই টাকা নিয়েছি।”
প্রধানকে তালা। রাস্তায় আলো লাগানোকে কেন্দ্র করে বচসার জেরে সোমবার দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের সিপিএম শাসিত জেমুয়া পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানকে তালাবন্ধ করে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। বিধায়ক তহবিল থেকে আলো লাগানোর কাজ চলছে। তৃণমূলের অভিযোগ, কিছু আলো লাগানোর পরে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান দেবী রুইদাসের অভিযোগ, প্রকল্পের নকশা মতো ঠিকাদার আলো না লাগানোয় তাঁরা কৈফিয়ত চেয়েছেন। তৃণমূল ঠিকাদারের হয়ে তদ্বির করতে এসেছে। প্রতিবাদ করায় তাঁকে এবং উপপ্রধান আবদুল মান্নানকে তালাবন্ধ করা হয়। |