বকেয়া টাকা না মেটানোয় ৮ মাস ধরে সুতো তৈরি বন্ধ। কর্মীদের বেতনও বন্ধ গত দু’মাস ধরে। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ে গিয়েছেন রাজ্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের অধীনস্থ ওয়েস্ট দিনাজপুর স্পিনিং মিলের কর্মীরা! বকেয়া বেতন দেওয়া-সহ মিলের উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার দাবিতে ইতিমধ্যেই আন্দোলনে নেমেছেন মিলের ডান-বাম ৬টি শ্রমিক সংগঠন ও একটি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। আন্দোলনকারীরা শ্রমিক কর্মচারী ইউনাইটেড ফোরাম গঠন করে আন্দোলন নেমেছেন। ফোরামের তরফে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়ার কাছেও আর্থিক সঙ্কট মোটনে হস্তক্ষেপ জানিয়েছেন। আজ, শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য মিল চত্বরে অবস্থান বিক্ষোভে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফোরামের সদস্যরা। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক বলেন, “স্পিনিং মিলের কর্মী আধিকারিকদের বেতন দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে জেলা প্রশাসনের তরফে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তুলো সরবরাহকারী দুই সংস্থাকে বকেয়া টাকা মিটিয়ে মিলের উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার বিষয়টি রাজ্য সরকার দেখছে। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যা মিটবে।” মিল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থায়ী কর্মী ও আধিকারিক মিলিয়ে ৫২৭ জন রয়েছেন। পাশাপাশি, ১৮০ জন অস্থায়ী কর্মী সেখানে কর্মরত। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকার ভরতুকি দেওয়া সত্বেও মিলটি লোকসানে চলতে থাকায় রাজ্য অর্থ দফতর বেতনের বিল আটকে দিয়েছে। সেই কারণে গত অক্টোবর মাস থেকে মিলের কর্মী আধিকারিকদের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দিল্লির কটন কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া ও তাম্রলিপ্ত কোঅপারেটিভ স্পিনিং মিল নামে দুটি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে মিলে তুলো সরবরাহ করে। গত প্রায় ৯ মাস ধরে ওই দুই সংস্থা তুলোর দাম বাবদ মিল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় ৮ কোটি টাকা পাবে। দাম না পেয়ে গত এপ্রিল মাস থেকে ওই দুই সংস্থা মিলে তুলো পাঠানো বন্ধ করে দেয়। রায়গঞ্জের বিধায়ক তথা মিলের চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্তের উদ্যোগে গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মিলের কর্মী আধিকারিকেরা বেতন পেয়েছেন। তার পরেই রাজ্য সরকার মিলের কর্মী আধিকারিকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। প্রতি মাসে মিলে প্রায় ২ লক্ষ কেজি তুলো থেকে দেড় লক্ষ কেজি সুতো উৎপাদন হত। টেন্ডারের মাধ্যমে এরপর মিল কর্তৃপক্ষ কলকাতার বিভিন্ন সংস্থার কাছে সুতো বিক্রি করতেন। সুতো বিক্রি বাবদ প্রতি মাসে মিল কর্তৃপক্ষের প্রায় ১ কোটি টাকা আয় হত। কর্মী আধিকারিকদের বেতন-সহ মিলের বিদ্যুতের বিল মেটাতে দিতে মিল কর্তৃপক্ষের প্রতি মাসে প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকার দরকার হয়। সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পরার পরই এতদিন কর্মী আধিকারিকদের বেতন হত। মিলের সরকারি তহবিলে প্রতি মাসে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা জমা পড়লেও তুলোর দাম মেটানোর জন্য তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানতে পেরে গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য সরকার মিল কর্তৃপক্ষকে মাসে ৫০ লক্ষ টাকা করে ভরতুকি দিত। সেই টাকাও তুলোর দাম মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। মিল কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে সরবরাহকারী দুই সংস্থাকে তুলোর বকেয়া দামের একাংশ মেটালেও ওই দুই সংস্থার পাওনা দাড়ায় প্রায় ৮ কোটি টাকা। ফোরামের মুখপাত্র নারায়ণচন্দ্র দেব বলেন, “রাজ্য সরকারের গাফিলতির জেরেই মিল প্রায় বন্ধের মুখে এসে দাড়িয়েছে। মিলের একাধিক যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে পড়লেও সেদিকে রাজ্য সরকারের কোনও নজর নেই। রাজ্য সরকার সুকৌশলে মিলকর্মীদের একাংশকে ছাঁটাই করে মিলটিকে বেসরকারিকরণের চক্রান্ত করছে। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মিলের উৎপাদন স্বাভাবিক করে নিয়মিত বেতন চালু করা না-হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামা হবে।” মিল কর্মী গৌতম দেব, দুলাল পাল, অনিল ঘোষ, প্রদীপ দাস, ও পার্থ চক্রবর্তীরা বলেন, “দু’মাস বেতন না পেয়ে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।” |