|
|
|
|
পরীক্ষার দিনে ধর্মঘট নিয়ে গুরুদাসের সঙ্গে কথা মমতার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মাধ্যমিক পরীক্ষার সঙ্গে ধর্মঘটের সংঘাত মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হলেন সিপিআই সাংসদ এবং এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্ত। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে গুরুদাসবাবুর রবিবারের আলোচনায় আশু সমাধান বেরোয়নি। পরীক্ষার দিন পিছনোর জন্য গুরুদাসবাবুর আর্জির প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী জানান, শিক্ষা দফতর ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আলোচনার ফল যা-ই হোক, বিরোধী শিবিরের এক নেতার সঙ্গে ধর্মঘট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি কথোপকথন রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক আবহের সঙ্গে মানানসই এবং ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
ট্রেড ইউনিয়নগুলি আগে তাদের দাবিদাওয়া পেশ করত এবং রাজ্য সরকার তাদের মতো করে মতামত জানাত। এ বারও পরীক্ষার দিন ধর্মঘট ডাকায় দু’পক্ষের মধ্যে প্রাথমিক ভাবে সংঘাত বেধেছিল। শ্রমিক সংগঠনগুলির তরফে গুরুদাসবাবুই অবশ্য বলেছিলেন, রাজ্য সরকার শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার দিন পরিবর্তনে রাজি না-হলে পশ্চিমবঙ্গের ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে ‘উপযুক্ত সিদ্ধান্ত’ নেবেন। তার পরে আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছেন। মমতার জমানায় শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে আদানপ্রদানের যে চল শুরু হয়েছে (যা বেশ কিছু দিন এ রাজ্যে বন্ধ ছিল), তার প্রেক্ষিতেই সিপিআই নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের আলোচনা ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। বিশেষ করে, লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর স্বার্থ যেখানে জড়িত। প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার আগে বলেছিল, কোনও ভাবেই পরীক্ষার দিন পিছোবে না। মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু এ দিন কোনও সম্ভাবনাই সরাসরি নাকচ করে দেননি। |
|
কলকাতায় এসে মুখ্যমন্ত্রীকে এ দিন সকালে ফোন করেছিলেন গুরুদাসবাবু। তখন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়নি। পরে মমতা যখন তাঁকে ফোন করেন, সেই সময় গুরুদাসবাবু বেলেঘাটায় দলের কলকাতা জেলা সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, ভাষণ থামিয়েই মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি জানান, ২৯ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের আগের দিন ‘প্রতীকী’ প্রতিবাদ করার জন্যই তাঁরা ২৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ডেকেছেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এবং পেনশন বিলের বিরোধিতা-সহ এমন বেশ কিছু দাবি ওই ধর্মঘটে আছে, যার সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীও সহমত। সে ক্ষেত্রে তিনি যেন পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা এক দিন পিছিয়ে দেন। তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, ২৯ ফেব্রুয়ারি কোনও পরীক্ষা নেই।
মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে বলেন, বিষয়টি তাঁর এক্তিয়ারভুক্ত নয়। গুরুদাসবাবু ফের তাঁকে ‘সক্রিয়’ হওয়ার আবেদন জানালে মুখ্যমন্ত্রী জানান, শিক্ষা দফতর ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে কথা বলে তার পরেই কিছু বলা তাঁর পক্ষে সম্ভব। আমরি-কাণ্ড সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, তার জন্যও ধন্যবাদ জানান সিপিআই সাংসদ। ঘনিষ্ঠ মহলে গুরুদাসবাবু আশাপ্রকাশ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথার পরে কোনও একটি সমাধান নিশ্চয়ই বেরোবে। মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে কোনও সম্ভাবনা খারিজ করে দেননি। তবে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেননি, দেননি নিশ্চিত কোনও আশ্বাসও।
বস্তুত, পরীক্ষার দিনে ধর্মঘট নিয়ে বিতর্ক চলছে লাগাতার। যেমন, বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের মতে, মাধ্যমিক ছেলেমেয়েদের জীবনে প্রথম বড় পরীক্ষা। সেই দিন ধর্মঘট চাপানো উচিত নয়। ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থেই ধর্মঘটকারী বা সরকার, কোনও পক্ষেরই ‘অনড় মনোভাব’ নেওয়া উচিত নয়। বরং আন্দোলনকারী ও সরকারের আলোচনায় বসা উচিত। গুরুদাসবাবুর এ দিনের পদক্ষেপ অশোকবাবুর সেই মতের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। সিপিআইয়ের কলকাতা জেলা সম্মেলনে গুরুদাসবাবু বলেছেন, কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামেদের শ্রমিক সংগঠনের মিলিত ভাবে ধর্মঘট-সহ আন্দোলনের পথে যাওয়া দেশের রাজনীতিতে খুবই ‘গুরুত্বপূর্ণ’। বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষেই সওয়াল করেন তিনি। প্রবীর দেবই এ বারের সম্মেলন থেকে ফের সিপিআইয়ের কলকাতা জেলা সম্পাদক হয়েছেন। |
|
|
|
|
|